মালয়েশিয়ায় ‘সিন্ডিকেট’ সম্পর্কে তথ্য দিলেন নূর আলী

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে সিন্ডিকেট প্রসঙ্গে অবশেষে মুখ খুললেন জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান ইউনিক ইস্টার্ন প্রাইভেট লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী এবং বায়রার সাবেক সভাপতি নূর আলী। বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে বায়রার সাবেক নেতাদের আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি তার অভিজ্ঞতার কথা জানান। তিনি মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানির নেপথ্যের সিন্ডিকেট সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ করেন।

জানা গেছে, মালয়েশিয়া ২০১৭ সালে ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কর্মী নিচ্ছে এবং সেখানে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া বন্ধ করে দেয়। সেখানে ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সির মধ্যে নূর আলীর প্রতিষ্ঠানের নামও ছিল।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ী আমীন নুরের বাংলাদেশে পার্টনার রুহুল আমীন স্বপন। রুহুল আমীন স্বপন ক্যাথারসিজ ওভারসিজের স্বত্বাধিকারী এবং ১০ সিন্ডিকেটের তালিকায় তার প্রতিষ্ঠানের নামও ছিল। 

নূর আলী বলেন, ‘আপনারা জানেন ৮ বছর মালয়েশিয়ার বাজার বন্ধ ছিল এবং ডিমান্ড ছিল প্রচুর, সাপ্লাই ছিল না। শুধু জিটুজি চালু ছিল প্ল্যান্টেশন খাতে। তখন দেখা গেছে, ১৪ লাখ মানুষের রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। আর আট বছরে মাত্র সাত হাজার লোক গেছে। তাছাড়া সাগর পথে গিয়েও শত শত লোক মারা গেছে। থাইল্যান্ডের জঙ্গলে মারা পড়েছে এবং মালয়েশিয়ায়ও ঠিক তা-ই হয়েছে। আমাদের আর সরকারের পক্ষ থেকে তাগিদ ছিল যে এই মার্কেট চালু করা দরকার। যেহেতু মার্কেট বন্ধ ছিল, আমরা একটা প্রক্রিয়া দিলাম। তখন দুই সরকারের প্রচেষ্টায় মার্কেট চালু হল। কিন্তু তখন সেই কথা ছিল না, কথা ছিল কম খরচে যাবে। ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সি শুধু সার্ভিস চার্জ নিয়ে ব্যবসা করার সুযোগ পাবে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে আমি দেখলাম, সেই প্রক্রিয়া থেকে মূল উদ্যোক্তা মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ী আমীন নূর এবং বাংলাদেশে তার একজন অংশীদার আছে, তারা মিলে এই প্রক্রিয়া থেকে সরে আসছে। আমাদের একটি এজিএমে প্রায় ৬০০ রিক্রুটিং এজেন্ট ছিল। সেখানে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল—প্রক্রিয়া এভাবেই থাকুক যে সবাই যার যার ব্যবসা করবে এবং ১০ জন শুধু সার্ভিস চার্জ নেবে। সেটা এজিএমে অনুমোদিত হলো। কিন্তু দেখা গেলো অনুমোদনের পরেও সেই প্রথা বন্ধ করে দেওয়া হলো। আমি যখন বারবার প্রতিবাদ করলাম, আমার সার্ভার ১৪ বার বন্ধ করা হয়েছে। মেডিক্যাল চেক ছিল আরও একটা প্রহসন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি দেখলাম কথা বলা হয়েছে একরকম, কিন্তু কাজ হচ্ছে আরেক রকম। এই প্রহসন চলতে দেওয়া যায় না। সেটা এই সেক্টরের সঙ্গে প্রতারণা। এজন্য এবার আমি সেই সিন্ডিকেটের মধ্যে নেই। আমি সেখান থেকে সরে আসছি।’

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নূর আলী বলেন, ‘১৫০০ নিবন্ধিত রিক্রুটিং এজেন্সি থেকে মাত্র ২৫ জনের কথা বলা হচ্ছে, তারা কারা? দেখা যাবে, এদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা জীবনেও একটা লোক বিদেশ পাঠায়নি। এরা কীভাবে সিলেক্টেড হলো মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে। এখন বুঝে নিন দুর্নীতি কীভাবে হয়েছে। আমরা অতীতে দেখেছি, ১০ জনের মধ্যে অনেককে জিম্মি করা হয়েছে। ৬০ শতাংশ লভ্যাংশ নিয়ে গেছে ওরা। আরও কীভাবে দুর্নীতি করেছে সেটাও বলা দরকার। নিয়োগ কর্তাদের এই ১০ জনকে বেছে নেওয়ার কথা ছিল। যখন অনুমোদন নিয়েছে তখন দেখা গেছে, এই ১০ জনের কাছে অটোমেটিকভাবে না গিয়ে আমীন নুরকে যারা অতিরিক্ত টাকা দিয়েছে, তাদের অনুমোদন শুধু সিস্টেমে ঢুকেছে। যারা দেয়নি তাদের ডিমান্ড লেটার কখনও ওই সিস্টেমে আসেনি। যখন রুহুল আমীন স্বপনের ডিমান্ড এসেছে, তখন ১০ মিনিটের মধ্যে সিস্টেমে ঢুকেছে। কিন্তু আমারটা ১৫ দিনেও  প্রবেশ করেনি। তাহলে বুঝেন প্রহসন কোন জায়গায়। সিস্টেম সবই ভালো। কিন্তু সেটা কার হাতে সেটা বড় প্রশ্ন।’

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘এ দেশে আমীন নুরের অংশীদার হচ্ছেন রুহুল আমীন স্বপন এবং তিনি বেস্টিনেটের ২০ শতাংশ মালিক। সেটার অফিস বাংলাদেশেও খোলা হয়েছে। আমরা আগে জানতাম না।’

এসময় বায়রার সাবেক সভাপতি মো. আবুল বাশার, সাবেক মহাসচিব আলী হায়দার, শামীম আহমেদ চৌধুরীসহ বায়রার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।