জোড়াখুনে ব্যবহৃত পিস্তলটি কোথায়

রাজধানীর শাহজাহানপুরে আওয়ামী লীগ নেতা ও কলেজ শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় অভিযুক্ত শুটার মাসুম মোহাম্মদ আকাশ গ্রেফতার হয়েছে। কিন্তু হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত পিস্তলটি এখনও উদ্ধার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ‘কাটআউট পদ্ধতিতে’ খুনি ভাড়া করে হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হওয়ায় গ্রেফতার মাসুম এখন পর্যন্ত এ হত্যাকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে কিছু জানাতে পারেনি। তবে গোয়েন্দারা এরই মধ্যে এ ঘটনার পেছনে ইন্দনদাতাদের বিষয়ে জানতে পেরেছেন। একাধিক ব্যক্তি গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছেন।

গোয়েন্দা সূত্রে আরও জানা গেছে, গ্রেফতার মাসুম অস্ত্রটি কাদের কাছ থেকে পেয়েছে, সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত বিস্তারিত কিছু জানাতে পারেনি। তবে ঘটনার দিন (২৪ মার্চ) হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ও পিস্তল মতিঝিলের এজিবি কলোনি থেকে সংগ্রহ করে সে। ঘটনা ঘটানোর পর গোড়ান এলাকায় মোটরসাইকেল ও পিস্তল অজ্ঞাত ব্যক্তির কথামতো রেখে আসে।

গোয়েন্দারা বলছেন, গ্রেফতার মাসুমকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করা হবে। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করা হবে এবং এ ঘটনার পেছনের ইন্ধনদাতাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মাসুম জানিয়েছে, যাদের জন্য সে এ ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের কাউকেই সে চেনে না। ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় অপেক্ষমাণ মোটরসাইকেল চালকের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের কন্ট্রাক পায় সে। সেই মোটরসাইকেল চালকের পরিচয় শনাক্ত করে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে এখনই মোটরসাইকেল চালকের পরিচয় সম্পর্কে কিছু বলছেন না কর্মকর্তারা।

মাসুম মোহাম্মদ আকাশের বরাত দিয়ে গোয়েন্দারা বলছেন, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রটি অত্যাধুনিক।  পিস্তলটিতে ১২ রাউন্ড গুলি ছিল। ঘটনার সময় জাহিদুল ইসলাম টিপুকে উদ্দেশ করে ম্যাগজিন ভর্তি ১২টি গুলি ছুড়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় সে। পিস্তলটি কাদের মাধ্যমে তার হাতে এসেছে, এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এ ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করা হচ্ছে।

হত্যা মামলাসহ চারটি মামলার আসামি মাসুম দীর্ঘদিন ধরে হতাশায় রয়েছে। তার এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে এবং মামলা থেকে রেহাই পাওয়ার টোপ দিয়ে তাকে এ হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করা হয়েছে। কাজটি পাওয়ার সময় সে জানতো না কাকে হত্যা করতে হবে। ঘটনার তিন দিন আগে সে জানতে পারে টার্গেট ব্যক্তি মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু। মাসুম সবুজবাগ এলাকায় থাকতো, এ জন্য টিপুকে চিনতে তার বেগ পেতে হয়নি। পরে সময়-সুযোগ মতো ২৪ মার্চ রাতে শাজাহানপুর রেলগেট এলাকায় মাইক্রোবাসে থাকা টিপুকে উদ্দেশ করে গুলি ছোড়ে সে। এলোপাতাড়ি গুলিতে টিপু ছাড়াও রিকশাআরোহী বদরুন্নেসা মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী সামিয়া আফনান প্রীতিও আহত হন । তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।

মাসুম মোহাম্মদ আকাশ মোটরসাইকেল ও পিস্তল অজ্ঞাত ব্যক্তির কথা মতো এজিবি কলোনির যে জায়গা থেকে সংগ্রহ করেছিল, সে জায়গার আশপাশের এলাকায় খোঁজখবর নিচ্ছেন গোয়েন্দারা। সেইসঙ্গে ঘটনা ঘটানোর পর ২৪ মার্চ রাতে সে গোড়ান এলাকার যে জায়গায় পিস্তল ও মোটরসাইকেল রেখে এসেছিল, সে জায়গাতেও গোয়েন্দা তৎপরতা রাখা হয়েছে। আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মাসুম গোয়েন্দাদের কাছে এ ঘটনার জন্য অনুতপ্ত বলে জানিয়েছে। পরিকল্পনা মাফিক কাজ করার পর রাজধানী থেকে বের হয়ে যাওয়ায়, তার ধারণা ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে পারবে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষ কর্মকর্তারা বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ডিএমপি মতিঝিল গোয়েন্দা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার রিফাত রহমান শামীম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার মাসুম মোহাম্মদ আকাশকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করা হবে। আদালতের নির্দেশের প্রেক্ষিতে রিমান্ডে পেলে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার মোটিফ সম্পর্কে জানা সম্ভব হবে। হত্যায় ব্যবহৃত পিস্তলটি উদ্ধারে তৎপর রয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। মতিঝিল গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার পদমর্যাদার চার জন কর্মকর্তাসহ বেশকয়েকজন এ ঘটনার রহস্য উদঘাটনে কাজ করে যাচ্ছেন।’

আরও পড়ুন...

ইন্ধনদাতারা নজরদারিতে, শুটার মাসুম যা জানালো

‘কাটআউট’ পদ্ধতিতে খুনি ভাড়া করে আ.লীগ নেতাকে হত্যা

‘আ.লীগ নেতা টিপুকে পাঁচ দিন আগে হত্যার নির্দেশ পায় খুনি’