‘চেয়ার লাগবে না, মাটিতেই বসবো’

ইফতারের প্রায় আধাঘণ্টা আগে কাওরানবাজার এলাকার এটিএন নিউজের সামনে এসে পৌঁছান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। আয়োজন করা হয়েছে ইফতারের। কিন্তু তিনি জানতেন না আয়োজনটা কীসের বা কাদের নিয়ে। গাড়ি থেকে নেমেই দেখলেন অসহায়, দুস্থ, নিম্ন আয়ের মানুষ অপেক্ষা করছে ইফতারের জন্য। একপর্যায়ে তিনি নিজেও বসে পড়লেন সবার সঙ্গে। বললেন, চেয়ার লাগবে না, আমি সবার সঙ্গে মাটিতেই বসবো।

পেশাজীবী থেকে দুস্থ, ছিন্নমূল এমনকি মন্ত্রী ও সাংবাদিক—সবাই এক কাতারে। পথে বসে করছেন ইফতার। অনুষ্ঠানের প্রতিপাদ্য ‘সবাই মিলে বাংলাদেশ’।

রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা সাংবাদিক পাড়া খ্যাত কাওরানবাজারে এটিএন নিউজের সামনে দেখা যায় এ চিত্র। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের সহায়তায় এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী সম্পাদক মুন্নী সাহা।

সোমবার সন্ধ্যায় ইফতারের আগ মুহূর্তে দেখা যায়, সুশৃঙ্খলভাবে বসেছেন কাওরানবাজার এলাকার দুস্থ, অসহায় ও নিম্ন আয়ের মানুষরা। সঙ্গে আছে ছিন্নমূল ও পথশিশুরা। সবার জন্য ইফতারের মেন্যু একই।

276020245_505807231047822_8850044944811935978_n

প্লেটে তেহারি, ফল, বিস্কুট ও খেজুর। সঙ্গে আছে শরবত। সবাই ধৈর্য ধরে সুশৃঙ্খলভাবে করলেন ইফতার। পরিকল্পনামন্ত্রীকে দেখা গেলো হাত নেড়ে ডাকছেন শিশুদের, করলেন গল্প।

বিদায় নেওয়ার সময় এই শিশুরা আবার মন্ত্রীকে স্যালুটও দিলো। মন্ত্রী খুশি হয়ে পিঠও চাপড়ে দিলেন তাদের। বললেন, ভালো থাকতে।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘এই আয়োজন কাদের নিয়ে তা জানা ছিল না। কয়েকজন সাংবাদিক ফোন করে আসতে বলেছিলেন, আমি এসেছি।’

‘এসে দেখলাম চমৎকার খাবার পরিবেশন হচ্ছে। আমাদের মধ্যবিত্ত শ্রেণির যে খাবার, সেটাই ছিল এখানে।’

মন্ত্রী আরও বলেন, ‘সবচেয়ে আশ্চর্য হয়েছি এখানে কেউ খাবারের জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েনি। সবাই বেশ সুশৃঙ্খল। ২০-২৫ বছর আগেও দেশে খাবারের অভাব ছিল। বিনা পয়সায় খাবার পাওয়া যাবে এটা চিন্তাও করা যায়নি। আজ প্রমাণ হলো— দারিদ্র্য ও ক্ষুধার যে ভয়ানক মাত্রা ছিল, সেটা এখন নেই।’

277367678_517927623064568_3543657019151710976_n

তিনি বলেন, ‘বেসরকারি খাতের তরুণরা এগিয়ে এসে এমনটা করছে। এটা অত্যন্ত ভালো দিক। এতে সামাজিক বন্ধনও মজবুত হবে। দারিদ্র্য দূরীকরণে আমাদের যে লক্ষ্য তাতেও সহায়ক ভূমিকা রাখবে। আমি এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।’

সাংবাদিক মুন্নী সাহা বলেন, ‘আগের দুবার করোনার কারণে এভাবে আয়োজন করতে পারিনি। এবার করা গেছে। আমরা সচরাচর দেখি বিভিন্ন চ্যারিটি প্রোগ্রামে বিরাট বড় নাম ও লেবেল থাকে। কিন্তু ছোট্ট করে হলেও একজন মানুষ কি আরেকজনকে সাহায্য করে না? আমি একজন সংবাদকর্মী যদি রোজার সময় কোথাও গিয়ে উপস্থিত হই, পাশের মানুষটিও কিন্তু তার খাবার শেয়ার করে। এটাই বাংলাদেশের চিত্র, এটাই সবাই মিলে বাংলাদেশ।’

তিনি আরও বলেন, ‘দুঃখ-সুখে বাঙালি এক কাতারে থাকে। তাহলে ইফতার কেন নয়?’