জীবনযাপনের উপযোগী মজুরি নিশ্চিতের দাবি

মে দিবস উপলক্ষে জীবনযাপনের উপযোগী মজুরি নিশ্চিত করাসহ শ্রমিকদের বিভিন্ন অধিকার আদায়ে সরব হয়েছে শ্রমিক সংগঠনগুলো। এ দিবসকে কেন্দ্র করে সংগঠনগুলো সভা, সমাবেশ, লাল পতাকা মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে।

রবিবার (১ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সকাল থেকেই শ্রমিক সংগঠনগুলো মে দিবস পালনে এবং শ্রমিকদের দাবি আদায়ে সমবেত হতে থাকে।

শ্রমিক সংগঠনগুলো হলো— গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস), শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ), ন্যাশনাল ওয়ার্কার্স ইউনিটি সেন্টার, ঢাকা মহানগর সিএনজি অটোরিকশা চালক ঐক্য পরিষদ, বিপ্লবী শ্রমিক আন্দোলন, বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি, জাতীয় শ্রমিক দল, বাংলাদেশ বহুমুখী শ্রমজীবী ও হকার সমিতি এবং বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন, জাতীয় শ্রমিক জোট-বাংলাদেশ, বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন, বাংলাদেশ ইসলামি শ্রমিক আন্দোলনসহ একাধিক সংগঠন।

1

শ্রমিক সংগঠনগুলো থেকে দাবি তোলা হয়, শ্রমিকের ৮ ঘণ্টা কর্মদিবস করা; জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার টাকা ঘোষণা করা; গণতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রণয়ন করা; সকল সেক্টরে শ্রমিক-কর্মচারীদের জন্য পূর্ণাঙ্গ রেশনিং চালু করা; দুর্ঘটনায় হতাহতদের আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা; আইএলও কনভেনশন ১৮৯ ও ১৯০ অনুসমর্থন বাস্তবায়ন করা; গৃহকর্মীদের শ্রমিক হিসেবে আইনি মর্যাদা দেয়া; কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি বন্ধ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ অবাধ ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে এবং শ্রমিকের ন্যায্য আন্দোলনে পুলিশি হামলা বন্ধ করতে হবে।

পল্টনের শ্রমিক সমাবেশে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘বাংলাদেশের ৯২ ভাগ শ্রমজীবী মানুষ। অথচ শ্রমিকের অধিকার যেন সফল না হয় এবং বড় লোকের শাসন যেন চিরস্থায়ী হয় সেজন্য আমাদের ভোটের অধিকারও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। কারণ ভোট দিতে পারলে, শ্রমিকেরা জিনিসের দাম কমাতে বলবে। এই বড়লোকেরা শ্রমিকদের শোষণ করে তাদের দুঃশাসন চালিয়ে যাচ্ছে। এই দুঃশাসনের অবসান ঘটাতে হবে।'

3

প্রেসক্লাবের সমাবেশে ন্যাশনাল ওয়ার্কার্স ইউনিটি সেন্টারের সভাপতি সুলতানা বেগম বলেন, 'প্রবৃদ্ধি ও বৈষম্যের এক কঠিন পরিস্থিতিতে এ বছর মে দিবস এসেছে। ব্যক্তি মালিকানাধীন শিল্প প্রতিষ্ঠানে আইনত বাধা না থাকলেও ছলে-বলে শ্রমিক ও কর্মচারীদের ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার দেওয়া হচ্ছে না। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসমূহ শ্রমিকদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। তাই শ্রমজীবী মানুষের সম্মানজনক বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা দিতে হবে।'

অধিকার অর্জনে সংগ্রাম শক্তিশালী করা সময়ের দাবি

মে দিবসের সমাবেশ থেকে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ-স্কপের শ্রমিক নেতারা জানান, বাংলাদেশের শ্রমিক শ্রেণির সামনেও আজ এক বিরাট চ্যালেঞ্জ উপস্থিত হয়েছে। মজুরি কমছে, কর্মসময় বাড়ছে, আধুনিকায়নের নামে বেকারত্ব বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য শ্রমিক শ্রেইণকে এক কাতারে এসে দাঁড়িয়ে নিজের অধিকার সংরক্ষণ ও নতুন ভবিষ্যতের জন্য লাগাতার সংগ্রাম অগ্রসর করে নেওয়ার মধ্যদিয়ে অধিকার অর্জনের সংগ্রাম শক্তিশালী করা আজ সময়ের দাবি।

মে-দিবস

মার্কসবাদ-লেনিনবাদের আদর্শে উজ্জেবিত হওয়ার আহ্বান

মে দিবসের সমাবেশ থেকে বিপ্লবী শ্রমিক আন্দোলনের নেতারা বলেন, 'মে দিবসের শিক্ষা হচ্ছে শ্রমিক শ্রেণিকে শত্রুদের উচ্ছেদের বিপ্লবী রাজনীতিকে আঁকড়ে ধরা। শ্রমিকশ্রেণির মতবাদ মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদের আদর্শে সজ্জিত হয়ে সমাজতন্ত্র-কমিউনিজম প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নয়াগণতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন করা। তাই আসুন, মে দিবসের সংগ্রামী শহিদদের রক্তেরাঙা পথে বিপ্লবী চেতনায় শাণিত হই, বিপ্লবের কাজকে ত্বরান্বিত করি।'

দাবি আদায়ের প্রত্যাশা সিএনজি অটোরিকশা চালকদের

ঢাকা মহানগর সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালক ঐক্য পরিষদের নেতারা বলেন, আমরা দীর্ঘদিন যাবত সিএনজি অটোরিকশা চালকরা সিএনজি অটোরিকশার মালিক প্রশাসন ও চাঁদাবাজ দালালদের অত্যাচার সহ্য করে আসছি। দিন দিন তা বেড়েই চলেছে।

তারা আরও বলেন, অধিকার আদায়ে শ্রমিক শ্রেণির সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হচ্ছে তার নিজস্ব সংগঠন এবং সৎ, শ্রেণিসচেতন ও সংগ্রামী নেতৃত্ব। আগামীতে ভালোভাবে বাঁচতে চাইলে গড়ে তোল নিজ নিজ এলাকায় শক্তিশালী সংগঠন হোক না সংখ্যায় জনে জনে পাঁচ জন। সংগ্রামের মাধ্যমে আমাদের দাবি আদায় করতে হবে। পথ আঁকাবাঁকা। বিজয় আমাদের হবেই।

2

শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে ইসলামী সংগঠনের মিছিল

মে দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ ইসলামি শ্রমিক আন্দোলনের পক্ষ হতেও মিছিল বের করা হয়। সংগঠনটি থেকে বলা হয়, মে দিবসের আদর্শকে স্মরণ রেখে ন্যায্য দাবি প্রতিষ্ঠা, অধিকার আদায় ও কল্যাণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে শ্রমিক, মালিক এবং সরকারের সহযোগিতামূলক মনোভাবই পারে শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সুষ্ঠু শিল্প সম্পর্ক গড়ে তুলতে।