রানা প্লাজার দুর্ঘটনা পরবর্তী অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে হবে। পাশাপাশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের নানামুখী সহযোগিতা ও কমপ্লায়েন্সের সাফল্যকে কাজে লাগিয়ে অন্যান্য কর্মক্ষেত্রকেও আগামী দিনে নিরাপদ করে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন ট্রেড ইউনিয়ন ও নাগরিক সমাজ নেতা এবং সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা।
মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস) আয়োজিত ‘নিরাপদ কর্মক্ষেত্র তৈরির অর্জন ও চ্যালেঞ্জ: রানা প্লাজা পরবর্তী উদ্যোগুলোর অভিজ্ঞতা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলা হয়।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, নিহত শ্রমিকদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে পোশাক ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তাতে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প। সব পক্ষের এই উদ্যোগকে টেকসই করার মূল লক্ষ্য হচ্ছে— একটি সত্যিকার ঐক্যবদ্ধ শ্রমিক আন্দোলন এবং সেই শ্রমিক আন্দোলনের নেতৃত্বে জাতীয় কর্মসূচির আওতায় একটি যুগোপযোগী কর্মসূচি গ্রহণ করা। পাশাপাশি ট্রেড ইউনিয়নকে ক্ষমতায়নের মাধ্যমে শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিত করেই শিল্প সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।
উপস্থিত বক্তারা আরও বলেন, ফায়ার সার্ভিসের কর্মী বাড়ানো এবং এর আধুনিকায়ন নিশ্চিত করে দুর্যোগ মোকাবিলায় একে সক্ষম করে গড়ে তুলতে হবে। এর পাশাপাশি দুর্যোগ থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে তা পরবর্তী সময়ে দুর্যোগ মোকাবিলায় কাজে লাগাতে হবে। এ ছাড়া এমপ্লয়মেন্ট ইনজুরি স্কিমের উন্নয়নের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের সেবা দেওয়ার বিষয়েও গুরুত্ব আরোপ করেন তারা। দেশ- বিদেশ থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণকে দুর্যোগ মোকাবিলার প্রয়োগ করতে ট্রেড ইউনিয়নের মধ্যে থেকে স্বেচ্ছাসেবক তৈরি করার বিষয়েও পরামর্শ দেন বক্তারা।
গার্মেন্টস সেক্টরের আহত শ্রমিকদের চিকিৎসা দেওয়া শাহরিয়ার আলম বলেন, গার্মেন্টস শিল্পের ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে দেখা যায়— বেশিরভাগ আহত শ্রমিকরা বলেন, চিকিৎসা নিয়ে লাভ কী? আমরা তো কাজ করতে পারছি না। এসব আহত শ্রমিকদের চিকিৎসা দিলেও প্রকৃত পুনর্বাসন হচ্ছে না।
জিআইজেড এর সিনিয়র উপদেষ্টা আমিনুল ইসলাম বলেন, শুধু মাত্র তৈরি পোশাক সেক্টরের দিকে বিশেষ নজর দিলে হবে না। দেশে আরও যত শিল্প আছে, সেগুলোতে সরকারের মনিটরিং বাড়াতে হবে। তা না হলে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব না।
জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের যুগ্ম মহাপরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ভূইয়া বলেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনা মানুষের চিন্তা চেতনাকে অনেক পরিবর্তন করেছে। একজন শ্রমিক যেভাবে সুস্থভাবে কাজে গিয়ে থাকে, একইভাবে যেন সুস্থ অবস্থায় বাড়ি ফিরতে পারে। আমাদের মূল কথা হচ্ছে— আরএমজি সেক্টরসহ সব সেক্টরে যেন নিরাপদ কর্মসংস্থান থাকে, সে ব্যবস্থা করা হোক।
সভাপতির বক্তব্যে বিলসের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান সিরাজ বলেন, বিলস কোনও রাজনৈতিক এবং ট্রেড ইউনিয়ন সংস্থা নয়। বিলস বাংলাদেশের জাতীয় ট্রেড ইউনিয়ন সংস্থাগুলোকে আরও বেশি জোরদার করার সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে। শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ গঠন হওয়ার মাধ্যমে এক সময় বাংলাদেশে যে আন্দোলন হয়েছিল— তার ফলে কিন্তু সরকারের পতন পর্যন্ত হয়েছিল। এখন আগামী দিনেও যদি এই শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের কর্মকাণ্ড আগের যৌবনে ফিরে এসে, তারা যদি তাদের কর্মকাণ্ডে অবতীর্ণ হন— তাহলে বিলস এর পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা তারা পাবে।
