‘মা, আব্বুর কাছে চলো’

‘মা আব্বুর কাছে চলো, আব্বুর কাছে আমাকে নিয়ে যাও।’ ঈদের দিন সকালে এভাবেই সাড়ে তিন বছরের ছেলে হামজা তার মাকে কথাগুলো বলছিল। হামজা সেই সন্তান, যার বাবাকে নিউ মার্কেট এলাকায় পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (৩ মে) দুপুরে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে কথা হয় নিহত মোরসালিনের স্ত্রী অর্ণি আক্তার মিতুর সঙ্গে। এই বাসাতেই মোরসালিন তার সাত বছরের বড় মেয়ে হুমায়রা ও সাড়ে তিন বছরের ছেলে হামজাকে নিয়ে থাকতেন। একটু দূরেই মোরসালিনের বড় ভাইয়ের সঙ্গে তার মা নূরজাহান বেগম থাকেন।

কামরাঙ্গীরচরের মানুষ দুটি পরিবারকে এখন চিনে গেছে। একটি হলো নিহত নাহিদের পরিবার এবং অপরটি মোরসালিনের পরিবার। প্রতিদিনই কেউ না কেউ আসেন এই দুটি পরিবারের খোঁজ নিতে। কেউ আসেন সান্ত্বনা দিতে, আবার কেউ নিয়ে আসেন উপহার সামগ্রী।

ঈদের দিন সকালেও অনেকে এসেছেন মোরসালিনের বাসায়। মোরসালিনের স্ত্রীর নানি এসেছে নাতনির এই দুঃসময়ে। পরিবারটির সঙ্গে ঈদ করছেন তিনি।

নিহত মোরসালিনের স্ত্রী মিতু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার জীবনে আর কোনও ঈদ আসবে না। দুই সন্তানের দিকে তাকালে আমার চোখে অন্ধকার দেখি। কীভাবে এদের মানুষ করবো, কীভাবে এই শহরে টিকে থাকবো?’

বড় মেয়ে হুমায়রা কামরাঙ্গীরচরের একটি মাদ্রাসায় পড়ে। বাবা যে বেঁচে নেই, সে একটু একটু করে বুঝতে শিখেছে। তবে সাড়ে তিন বছরের হামজা কিছুই বুঝে না। মিতু বলেন, ‘‘সকালে ঈদের নতুন পোশাক পরিয়ে দেওয়ার পর ছেলে আমাকে বলে, ‘মা আমাকে আব্বুর কাছে নিয়ে চলো।’ কোথায় আমি তাকে পাবো?’’

নিহত মোরসালিনের মা নূরজাহান বেগমমোরসালিনের মৃত্যুতে গোটা পরিবারে শোকের ছায়া নেমেছে। ঈদের আমেজ নেই তাদের পরিবারে।  মোরসালিনের মা নূরজাহান বেগম বড় ছেলের সঙ্গে থাকেন। তার স্বামী মারা গেছেন ৮-৯ বছর আগে।

নূরজাহান বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে প্রতিদিনের মতো চাকরি করতে গেলো। আর তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হলো। আমার ছেলে তো কোনও অপরাধ করেনি। তার হত্যার বিচার আমি সরকার ও আল্লাহর কাছে দিয়েছি।’

হত্যার বিচার চেয়ে মোরসালিনের স্ত্রী মিতু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সরকার যদি চায়, তাহলে আসামিদের ধরা সম্ভব। আমি মনে করি, হত্যাকারীদের বিচার করা উচিত। কিন্তু এই মামলা নিয়ে আমাদের দৌড়ানোর মতো কেউ নেই। পুলিশ আমার সঙ্গে এখনও কোনও কথা বলেনি।’

গত ১৮ এপ্রিল নিউ মার্কেটে ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হন দোকান কর্মচারী মোরসালিন। গত ২১ এপ্রিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। একই সংঘর্ষে আহত ডি-লিংক কুরিয়ার সার্ভিসের ডেলিভারিম্যান নাহিদ হোসেন মারা যান আগের দিন।

আরও পড়ুন:

নিউমার্কেট এলাকায় সংঘর্ষ: আরও একজনের মৃত্যু