‘দেশের উন্নতি হলেও শ্রমিকের মজুরি বাড়েনি’

‘স্বাধীনতার ৫০ বছরে দেশের জিডিপি বেড়েছে, অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে উন্নয়ন হয়েছে; তবে এসময় শ্রমিকদের প্রকৃত মজুরি বাড়েনি। সেইসঙ্গে দেশের শ্রমজীবী মানুষের রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, অর্থনৈতিক কোনক্ষেত্রেই মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তাদের জীবন মানের কোনও উন্নয়ন ঘটেনি।'

শুক্রবার (২০ মে) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র'র (টিইউসি) উদ্যোগে মহান মে দিবস উপলক্ষে ‘উন্নয়নের সুফল থেকে শ্রমিকরা বঞ্চিত কেন?’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা বক্তারা এসব কথা বলেন।

সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, ১৯৮১ সাল থেকে ৯০ এর সময় শ্রমিক আন্দোলনের ফলে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির হার দেশের মোট জিডিপি বৃদ্ধির হারের চেয়ে বেশি ছিল কিন্তু ৯০ এর পর থেকে ২০০০ পর্যন্ত জিডিপি বেড়েছে কিন্তু শ্রমিকের প্রকৃত মজুরি বাড়েনি।

অর্থনীতির ভাষায় মানুষের উন্নয়নকেই সামগ্রিক উন্নয়ন হিসেবে বিবেচনা করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, 'উন্নয়ন বলতে কার উন্নয়ন? ১৭ কোটি ৯০ লাখ লোকের কোনও উন্নয়নের ছাপ নাই। ১০ লাখের কিছুটা উন্নয়ন দেখা যাচ্ছে। এই অবস্থায় শ্রমিকদের শুধু নিজের কথা ভাবলে তাদের উন্নয়ন হবে না। সবার জন্য, ন্যায় বিচারের জন্য শ্রমিকদের লড়াই করতে হবে।'

সভায় বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন বলেন, 'গত ৩০ বছরে যেভাবে উন্নয়ন আয় বেড়েছে সেভাবে শ্রমিকের মজুরি বাড়েনি। জিডিপি, উৎপাদনশীলতা অনুযায়ী খুবই কম হারে মজুরি বেড়েছে। এখানেই মূল বঞ্চনা।'

শ্রমিকেরা প্রতিনিয়ত প্রকৃত মজুরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, 'সংবিধানের ১৯ অনুচ্ছেদে সুযোগের সমতার কথা বলা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, প্রত্যেকেই তার যোগ্যতা অনুযায়ী পারিশ্রমিক পাবেন। এখানে বঞ্চনার কোনও সুযোগ নেই।'

সভার সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি শহীদুল্লাহ চৌধুরী বলেন, 'মাথাপিছু আয় ২৭শ ডলার আর শ্রমিকের মাইনে ২৭শ টাকা, এটা তো সরকারের উন্নয়নের কথা সঙ্গে মিলছে না। এ অবস্থার অবসান ঘটাতে হবে। শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে সামগ্রিক মুক্তির উদ্দেশ্যে আরও সংগঠিত হয়ে লড়াই করতে হবে।'

আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক ডা. ওয়াহেদুল ইসলাম খান, সহসভাপতি মাহবুবুল আলম, যুগ্ম সম্পাদক আবুল কালাম আজাদসহ প্রমুখ।