কেমন আছে রেনুর পরিবার

‘পদ্মা সেতুতে শিশুর মাথা লাগবে’— দেশজুড়ে এমন গুজব ছড়ানো হয় ২০১৯ সালের দিকে। সরকার প্রজ্ঞাপন ও বিভিন্ন প্রচারণা চালিয়ে সেই গুজব প্রতিহত করে। তারপরও সারাদেশে পাঁচ জনকে হত্যা করা হয়। সকল নির্মমতাকে যেন ছাড়িয়ে যায় ঢাকায় তাসলিমা বেগম রেনু (৪০) নামের এক নারীকে ছেলেধরা সন্দেহে হত্যার ঘটনা।

বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) দুপুরে রেনুর বড় বোন নাজমুন নাহার নাজমার সঙ্গে তার মহাখালীর বাসায় এ প্রতিবেদকের কথা হয়। নাজমা বলেন, ‘সন্তানদের স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য সেদিন খোঁজ-খবর নিতে বের হয়েছিল রেনু। আমি সাভারে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে ছিলাম। রেনুর ঘটনা শুনে এলাকায় ছুটে আসি। এসে দেখি বোনের সারা গায়ে রক্ত।’

তিনি আরও বলেন, ‘গুজব ছড়িয়ে রেনুকে নিষ্ঠুরভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। প্রতিমুহূর্তে সেই বর্বরতার চিত্র চোখে ভেসে ওঠে। আজ পদ্মা সেতু নিয়ে উচ্ছ্বাসের এই ক্ষণে আমার বোনের কথাও মনে পড়ে। সকল গুজব ছাড়িয়ে পদ্মা সেতু চালু হয়েছে শুনে ভালো লাগছে।’

নাজমুন নাহার আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। বিচার শুরু হয়েছে। বোনের হত্যায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। এতে করে কাউকে আর এমন নির্মম গণপিটুনির শিকার হতে হবে না।’

রেনুর মেয়েনাজমার কাছেই বেড়ে উঠছে রেনুর দুই সন্তান। তাদেরকে নিজ সন্তানের মতোই আগলে রেখেছেন তিনি।

৬ বছর বয়সী রেনুর মেয়ে তুবা। ঘটনার সময় তার বয়স ছিল সাড়ে ৩ বছর। সেই তুবা এখন বুঝতে শিখেছে। তুবা জানে তার মা ভিনদেশে। কখনও কথা হয় না। তবে মায়ের ছবি দেখলে সে চিনতে পারে।

রেনুর বড় ছেলে মাহিরের বয়স ১৩। মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রাবাসে আছে সে। প্রায়ই মায়ের ছবি দেখে। মা হারানোর শোক এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি মাহির।

রেনুর মা ছবুরা খাতুনও (৭৫) ছোট মেয়েকে হারিয়ে বুকে পাথর চেপে আছেন। প্রায়ই কাঁদেন। পদ্মা সেতুর খবর শুনে তিনি আনন্দিত। এখন মেয়ের হত্যার বিচার দ্রুত শেষ হলে শান্তি পাবেন বলে জানান ছবুরা।

রেনুর ছেলেরেনুর বোনের ছেলে ও মামলার বাদী নাসির উদ্দিন টিটু বলেন, ‘একজন নারীকে গুজব ছড়িয়ে পিটিয়ে দিবালোকে একদল পশু হত্যা করলো। কেউ তখন প্রতিবাদ করলো না। আমার খালা পদ্মা সেতু নিয়ে গুজবের বলি। সেই সেতু আজ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। এটা আমাদের জন্য অহঙ্কারের।’

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) জানিয়েছে, রেনু হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ইন্সপেক্টর আব্দুল হক ১৫ জনের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। এর মধ্যে দু’জন অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাদের শিশু আদালতে এবং ঢাকার সপ্তম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে প্রাপ্তবয়স্ক ১৩ অভিযুক্তের বিচার চলছে।