X
বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫
১৮ আষাঢ় ১৪৩২

গণপিটুনিতে রেনু হত্যা: চার বছরেও শেষ হয়নি বিচার

আরিফুল ইসলাম
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৪:০০আপডেট : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২০:০৭

রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় স্থানীয় একটি স্কুলে নিজের সন্তানকে ভর্তি করার খোঁজ-খবর নিতে গিয়ে ছেলেধরা গুজবে গণপিটুনির শিকার হয়ে নিহত হন তাসলিমা বেগম রেনু। এ ঘটনায় অজ্ঞাত পাঁচশত জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন রেনুর ভাগ্নে সৈয়দ নাসির উদ্দিন টিটু। মামলা দায়েরের প্রায় পাঁচ বছর হতে চললেও শেষ হয়নি বিচারকাজ। তবে রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, চলতি বছরের মধ্যে মামলার বিচারকাজ শেষ হবে এবং ভিকটিমের পরিবার ন্যায়বিচার পাবে।

বর্তমানে মামলাটি ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ মোরশেদ আলমের আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। সবশেষ গত ২৯ জানুয়ারি এ মামলায় ঢাকার এক মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাক্ষ্য দেন। এই সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আগামী ২৪ মার্চ পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ধার্য করেছেন আদালত।

জানতে চাইলে মামলার বাদী সৈয়দ নাসির উদ্দিন টিটু জানান, ‘পদ্মা সেতুতে মাথা লাগবে’—এমন গুজব ছড়িয়ে আমার খালাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। আসামিদের সর্বোচ্চ সাজার দাবি জানাচ্ছি। ভবিষ্যতে কোনও সেতু নির্মাণের জন্য মাথা লাগবে এমন গুজবে কাউকে যেন হত্যা করা না হয়। সেই বিষয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আশা করছি মামলাটির বিচার দ্রুত শেষ হবে। আসামিদের যেন দৃষ্টান্তমূলক সাজা হয়। এমন একটা বিচার হোক যার বার্তা সারা দেশে নজির সৃষ্টি করবে। পরে যেন এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে সমাজে।

মেয়ের সঙ্গে রেনু

নিহত রেনুর ছেলেমেয়ের কথা উল্লেখ করে সৈয়দ নাসির উদ্দিন টিটু আরও জানান, খালার বড় ছেলে মাহি এখন উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। সে হোস্টেলেই থাকে। আর ছোট মেয়ে তুবা মহাখালী শিশুমেলা স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ালেখা করছে। খালার মৃত্যুর পর প্রায় প্রতিদিনই বড় ছেলে মাহি তার মায়ের কথা বলে। মাহি তার মায়ের কথা চিন্তা করতে করতে পড়ালেখায় পিছিয়ে যাচ্ছে। মাহি এখনও তার মায়ের ছবি, ভিডিওগুলো দেখে আর কান্নাকাটি করে। এখন সে সব কিছু বুঝে গেছে। সবসময় সে এগুলো নিয়ে পড়ে থাকে। তবে তুবা অনেকটাই তার মায়ের কথা ভুলে গেছে। তুবা তার খালা-খালুকে মা-বাবা বলে ডাকে। তবে তাদের জন্মদাতা পিতা থেকেও নেই।

মামলা সম্পর্কে জানতে চাইলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল্লাহ আবু বলেন, আসামিরা হুজুগে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে একজন মধ্যবয়সী নারীকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে। এরা সমাজের শত্রু, দেশের শত্রু। এদের কঠিন শাস্তি হওয়া দরকার। সাক্ষীরা নিয়মিত আদালতে এলে এই বছরের মধ্যে মামলাটির বিচারকাজ শেষ করার চেষ্টা করবো। মামলাটির রায়ে প্রকৃতি দোষীদের সর্বোচ্চ সাজা দাবি করেন রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবী।

এদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী মমিনুর রহমান (মমিন) জানান, এটি নিছক দুর্ঘটনা মাত্র। আসামিরা কেউ জানতো না আসলে কি ঘটেছিল ওখানে। হুজুগে যা ঘটার ঘটে গেছে। মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। আশা করি মামলার রায়ে সব আসামিই ন্যায়বিচার পাবে। 

সংশ্লিষ্ট আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী একে এম সালাউদ্দিন জানান, মামলাটিতে ৩৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৭ জনের সাক্ষ্য শেষ করেছেন আদালত। আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীর সাক্ষ্য নিয়ে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ সমাপ্ত করা হবে। মামলাটির বিচার খুব শিগগিরই শেষ হবে বলে আশা করেন এই আইনজীবী। রায়ে সব আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তিও দাবি করেন তিনি।

রেনুর ছেলে

জানা যায়, ২০১৯ সালের ২০ জুলাই সকালে রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় মেয়েকে ভর্তি করাবেন বলে স্থানীয় একটি স্কুলে যান তাসলিমা বেগম রেনু (৪০)। এ সময় তাকে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়। ওই রাতেই রেনুর বোনের ছেলে সৈয়দ নাসির উদ্দিন টিটু বাদী হয়ে বাড্ডা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ৫০০ জনকে আসামি করা হয়। পরে সিসিটিভির ফুটেজ দেখে গণপিটুনিতে জড়িত কয়েকজনকে শনাক্তের পর গ্রেফতার করে পুলিশ।

২০২০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর আব্দুল হক ১৩ জনসহ অপ্রাপ্তবয়স্ক দুই জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০২১ সালের ১ এপ্রিল ১৩ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু হয়।

আসামিরা হলেন, ইব্রাহিম ওরফে হৃদয় মোল্লা, রিয়া বেগম ময়না, আবুল কালাম আজাদ, কামাল হোসেন, মো. শাহিন, বাচ্চু মিয়া, মো. বাপ্পি, মুরাদ মিয়া, সোহেল রানা, আসাদুল ইসলাম, বেল্লাল মোল্লা, মো. রাজু ও মহিন উদ্দিন। এদের মধ্যে দুই জনকে অপ্রাপ্তবয়স্ক বলে উল্লেখ করেন তদন্ত কর্মকর্তা। মামলায় জাফর হোসেন পাটোয়ারী ও ওয়াসিম আহমেদ অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে দোষীপত্র দেওয়া হয়েছে। আসামিদের মধ্যে মহিউদ্দিন ছাড়া সবাই জামিনে রয়েছে।

আসামি জাফর হোসেন পাটোয়ারী ও ওয়াসিম আহমেদ অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাদের বিচার শিশু আদালতে  হচ্ছে। এই মামলাটিও সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এ এই মামলা বিচারাধীন রয়েছে।

/এমএস/এমওএফ/
সম্পর্কিত
জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র নিহতের মামলার আসামি মৃত দুই আওয়ামী লীগ নেতা
চুরির অপবাদ দিয়ে কারখানায় শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যা, ‘মূলহোতা’ গ্রেফতার
সাবেক এমপি শেখরের স্ত্রীর প্লট জব্দ, গাড়ি ও ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ
সর্বশেষ খবর
টিভিতে আজকের খেলা (২ জুলাই, ২০২৫)
টিভিতে আজকের খেলা (২ জুলাই, ২০২৫)
ক্লাব বিশ্বকাপে এমবাপ্পের অভিষেক, জুভেন্টাসকে হারিয়ে শেষ আটে রিয়াল
ক্লাব বিশ্বকাপে এমবাপ্পের অভিষেক, জুভেন্টাসকে হারিয়ে শেষ আটে রিয়াল
জুলাই নিয়ে পুলিশ সদস্যের ‘আপত্তিকর’ পোস্ট, প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
জুলাই নিয়ে পুলিশ সদস্যের ‘আপত্তিকর’ পোস্ট, প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
রংপুরে নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে এনসিপির বিশাল পদযাত্রা
রংপুরে নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে এনসিপির বিশাল পদযাত্রা
সর্বাধিক পঠিত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন কমিটি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন কমিটি
যারা ফেসবুক লাল করেছিল, তাদের জীবন লাল করে দেবে আ.লীগ: পার্থ
যারা ফেসবুক লাল করেছিল, তাদের জীবন লাল করে দেবে আ.লীগ: পার্থ
বেসরকারি শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা যোগদানের দিন থেকে শুরু করতে হাইকোর্টের রুল
বেসরকারি শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা যোগদানের দিন থেকে শুরু করতে হাইকোর্টের রুল
যশোরে নির্মাণাধীন ভবনের বারান্দা ভেঙে দুই প্রকৌশলীসহ ৩ জনের মৃত্যু
যশোরে নির্মাণাধীন ভবনের বারান্দা ভেঙে দুই প্রকৌশলীসহ ৩ জনের মৃত্যু
এনবিআরের আরও ৫ শীর্ষ কর্মকর্তার দুর্নীতি অনুসন্ধান করছে দুদক
এনবিআরের আরও ৫ শীর্ষ কর্মকর্তার দুর্নীতি অনুসন্ধান করছে দুদক