‘দেশকে মেধাশূন্য করতে শিক্ষকদের ওপর ধারাবাহিক হামলা’

দেশকে মেধাশূন্য বানানোর জন্য ধারাবাহিকভাবে শিক্ষকদের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির। শনিবার (২ জুলাই) বিকালে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘অব্যাহত শিক্ষক নির্যাতন ও হত্যার প্রতিবাদে’ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী আয়োজিত সাংস্কৃতিক সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন।

উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় সংগীত বিভাগের গান পরিবেশনের মাধ্যমে সমাবেশ শুরু হয়। আবৃত্তি করেন সুবর্ণা আফরিন, গান পরিবেশন করেন তৌহিদা স্বাধীন।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, যে শিক্ষার্থী শিক্ষককে খুন করে, সে তো আসলে খুনি। পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। ক্ষমতাসীনদের আশ্রয়ে শিক্ষকদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। শিক্ষার্থীদের যে নৈতিক অবক্ষয় হচ্ছে, এর জন্য সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তাদের সংস্কৃতিমনা করে গড়ে তুলতে হবে। এর জন্য রাষ্ট্রকে মূল ভূমিকা পালন করতে হবে।

শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘আমাদের বহু দিনের দাবি ছিল, সাম্প্রদায়িক রাজনীতি বন্ধ করার। গতকাল অধ্যাপক রতন সিদ্দিকীর বাড়িতে নাস্তিক, মুরতাদ আখ্যা দিয়ে হামলা চালিয়েছে। কারা চালিয়েছে, আমরা সবাই দেখেছি। কিন্তু পুলিশ বললো, আমরা সব মিটমাট করে দিয়েছি। এগুলো মিটমাটের বিষয় নয়। দেশকে মেধাশূন্য করার জন্য, পাকিস্তান বানানোর জন্য ধারাবাহিকভাবে হামলাগুলো চালানো হচ্ছে। মৌলবাদীরা তথ্য প্রযুক্তিতে এগিয়ে গেছে। এগুলোর ব্যবহার করে তারা সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছড়াচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকারকে আমরা বলবো, হেফাজত-তোষণ বন্ধ করুন। এদের মতো কালসাপকে যারা তোষণ করেছে সবাই বিপদে পড়েছে। বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানোর জন্য এসব করা হচ্ছে।’ এ সময় তিনি ধর্ম অবমাননার দায়ে গ্রেফতারকৃতদের অবিলম্বে মুক্তি এবং এ সংক্রান্ত সব মিথ্যা মামলা যাচাই করে প্রত্যাহার করার দাবি জানান।

অধ্যাপক এম এম আকাশ অব্যাহত শিক্ষক নির্যাতন সম্পর্কে বলেন, ‘আমাদের দেশ আমাদের হাতে নেই, আমাদের সমাজ আমাদের হাতে নেই। না হলে রতন সিদ্দিকীর সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটতে পারে না। হামলাকারীরা তার স্ত্রীকে অভিযোগ করে বলে, ‘তুমি টিপ পরেছো কেন!’ মৌলবাদীরা আচার-আচরণ, পোশাক-আশাক, সংস্কৃতি, স্কুল-কলেজ, শিক্ষানীতি সবকিছুতে হস্তক্ষেপ শুরু করেছে।’

উদীচীর সহ-সভাপতি প্রবীর সর্দার বলেন, ‘আমাদের কাজ সংস্কৃতি চর্চা করা, আন্দোলন সংগ্রাম আমাদের কাজ নয়। কিন্তু আমাদের জায়গা থেকে এসব অনাচার দেখে চুপ থাকতে পারি না। তাই আন্দোলনে নামতে হয়। ঘরে বসে প্রতিবাদ সম্ভব নয়। আমাদের অস্ত্র গান-কবিতা। আমরা তা দিয়েই মোকাবিলা করবো।’

বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল বলেন, ‘আজকে শিক্ষার্থীরা শিক্ষক স্বপন কুমারের গলায় জুতার মালা দেয়নি, দিয়েছি আমার ও আপনাদের গলায়। সরকারের এদিকে কোনও দৃষ্টি নেই।’

তিনি বলেন, ‘আজকে হিন্দু শিক্ষকদের ওপর হামলা করেন। আমাদের যদি মেরে ফেলেন তাতে লাভটা কী! আমি বিজ্ঞান চর্চা করি, কোনও ধর্মের প্রতি কটুক্তি করি না। আমাদের যদি মেরে ফেলেন, তবে আপনাদের সন্তানরা বিজ্ঞান শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে।’

এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন–ডক্টরস অ্যান্ড হেল্থের সভাপতি ডা. এম এইচ ফারুকী, শিক্ষাবিদ মমতাজ লতিফ, প্রজন্ম একাত্তরের সাধারণ সম্পাদক আসিফ মুনির, বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. নুর মোহাম্মদ তালুকদার, কবি কামরুজ্জামান, উদীচীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে, কেন্দ্রীয় খেলাঘরের সাধারণ সম্পাদক দোলন সাহা, মহিলা পরিষদের সদস্য খালেদা ইয়াসমিন কনাসহ আরও অনেকে।