৭ বছরে সর্বোচ্চ মৃত্যু এবারের ঈদযাত্রায়

গত ৭ বছরের মধ্যে এবারের ঈদুল আজহার যাত্রায় সর্বোচ্চ দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এবারের ঈদুল আজহার আগে-পরে ৩১৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৩৯৮ জন। আহত হয়েছেন ৭৭৪ জন। এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের প্রতিবেদনে উঠে আসা এ তথ্য জানান সমিতির মহাসচিব মোজ্জাম্মেল হক চৌধুরী। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক, আঞ্চলিক দৈনিক ও অনলাইনে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এ সময় রেল ও নৌপথ মিলিয়ে দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৪৪০ জন। সব মিলিয়ে আহত ৭৯১ জন। গত ঈদুল আজহার তুলনায় সড়ক দুর্ঘটনা ২৪.৭৬ শতাংশ এবং নিহত ৩১.৪১ শতাংশ বেড়েছে। বিগত ৭ বছরের তুলনা করলে এবারের ঈদেই সড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি সর্বোচ্চ।

সংবাদ সম্মেলনে মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘করোনা না থাকার কারণে এবার ঈদে বেশি মানুষের যাতায়াত হয়। রাজধানী থেকে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ এবং ৪ কোটি মানুষ আন্তঃজেলায় যাতায়াত করেছে।’

এবারও দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে মোটরসাইকেল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এবারের ঈদে ১১৩টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৩১ জন নিহত, ৬৮ জন আহত হয়েছেন। যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৩৫.৪২ শতাংশ ও নিহতের ৩২.৯১ শতাংশ। দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ১৫৭ জনই ছিলেন চালক। এর মধ্যে নিহত হয়েছেন ১২৪ জন।’

তিনি আরও বলেন, বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোট যানবাহনের ২৯.০৩ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২৩.১৮ শতাংশ ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান-লরি, ৫.৬২ শতাংশ কার-মাইক্রো-জিপ, ৩.৯৮ শতাংশ নছিমন-করিমন-ট্রাক্টর-লেগুনা-মাহিন্দ্রা, ১১.৪৭ শতাংশ অটোরিকশা, ৯.৩৬ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা-ইজিবাইক-ভ্যান-সাইকেল ও ১৭.৩৩ শতাংশ বাস দুর্ঘটনায় পড়েছিল।

সংবাদ সম্মেলনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবং সেইফ রোড অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট অ্যালায়েন্স (শ্রোতা)-এর সভাপতি ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘নানা উদ্যোগ নেয়ার পরও সড়ক দুর্ঘটনা ঊর্ধ্বমুখী। এ সময়ে সড়কে নিরাপত্তাহীনতা অন্যতম একটি মানবিক বিপর্যয়। আমরা বন্যা ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় নিয়ে বলি। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে তেমন কিছু করছি না। এর ভয়াবহতা ও ব্যাপকতা বেড়েই চলেছে। মুন্সীগঞ্জের ভয়াবহতা সবাই দেখেছেন। এখন আমাদের বড় ধরনের উপলব্ধির প্রয়োজন রয়েছে।’

বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনিস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ বলেন, ‘অধিকাংশ সড়ক দুর্ঘটনা ডিভাইডার বিহীন রাস্তাগুলোতে হয়েছে। আমাদের চালকদের যে আচরণ, তাতে সব রাস্তায় ডিভাইডার লাগবে। সরকারকে এই উদ্যোগ নিতে হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও ছিলেন উত্তরা মোটরসের চিফ অপারেটিং অফিসার মো. শাহদাত হোসেন, বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির যুগ্ম মহাসচিব মো. এম মনিরুল হক প্রমুখ।