সীতাকুণ্ডে আগুন: ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন আহত আরও ১০ জন

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বি এম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনায় আহত আরও ১০ জনকে ক্ষতিপূরণের টাকা বুঝিয়ে দেওয়া হবে বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই)। তাদের মধ্যে পাঁচ জন পুলিশ সদস্য এবং পাঁচ জন ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ সদস্য। আহতদের অবস্থা অনুসারে ২, ৪ ও ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন তারা।

বুধবার (২০ জুলাই) বাংলা ট্রিবিউনকে এসব তথ্য জানিয়েছেন বি এম ডিপোর মালিকপক্ষ স্মার্ট গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক মেজর (অব.) শামসুল হায়দার সিদ্দিকী। তিনি আরও জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ১০ জনের ক্ষতিপূরণের টাকার চেক হস্তান্তর করা হবে।

ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ না পাওয়াদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, মৃতদের মধ্যে ২০ জনের পরিচয় শনাক্ত ডিএনএ পরীক্ষা জটিলতায় আটকে আছে। তাদের মধ্যে ১০ জনের পরিচয় নিশ্চিন্ত হওয়া গেছে। তাদের ২৫ জুলাইয়ের পরে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হতে পারে। তবে অন্যদের বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।

এদিকে, দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও ক্ষতিপূরণের টাকার পায়নি অনেকের পরিবার। কবে নাগাদ পাবেন বা আদৌ পাবেন কিনা, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা নেওয়া কয়েকজনের স্বজনরা।

তারা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কোরবানির আগে ক্ষতিপূরণের টাকা পাওয়ার আশা করলেও এখনও পাননি। বিএম ডিপো কর্তৃপক্ষ কোনও যোগাযোগ করেনি। আহতরা এখনও কাজে ফিরতে পারছেন না।

গত ৪ জুন রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিএম ডিপোতে প্রথমে আগুন এবং পরে দফায় দফায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে, যা নিয়ন্ত্রণে ৮৬ ঘণ্টা লাগে। 

ওই ঘটনায় ৫১ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। এরমধ্যে ২৯ জনের পরিচয় শনাক্ত করা গেছে। এসব লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তরও করা হয়েছে। ২২ লাশের পরিচয় শনাক্ত ডিএনএ রিপোর্টের জন্য আটকে থাকলেও গত ৭ জুলাই আট জনের পরিচয় মেলে। এসব লাশও হস্তান্তর করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২০ জুন হতাহতদের মধ্যে তিন ক্যাটাগরিতে ৬৯ জনকে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণের টাকা হস্তান্তর করে ডিপো কর্তৃপক্ষ। তাদের মধ্যে ৩১ জনই বিএম কনটেইনার ডিপোর কমকর্তা-কর্মচারী, ফায়ার সার্ভিসের ২৬ জন এবং অন্যান্য আট জন। বাকিদের মধ্যে ডিএনএ পরীক্ষার জটিলতায় ১৪টি লাশের পরিচয় এখনও শনাক্ত হয়নি, তাদের ক্ষতিপূরণও আটকে আছে। অন্যদের তালিকা এখনও চূড়ান্ত করতে পারেনি ডিপো কর্তৃপক্ষ।

স্মার্ট গ্রুপ জানায়, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এখন পর্যন্ত দগ্ধ ৬৯ জনকে ৫ কোটি ৬৭ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। গত ২০ জুন চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এই টাকা হতাহতদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ডিএনএ জটিলতায় মৃত ২০ জনের পরিবারের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের তিন জন বাদে ১৭ জনের পরিবার ক্ষতিপূরণ পাবে। একজনের দুই স্ত্রী দাবিদার, আরেকজনের নাম ভুল থাকায় টাকা দেওয়া যায়নি।

তিন ক্যাটাগরিতে ২৬ জনের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের ১৩ জনের পরিবারকে ১৫ লাখ করে, বিএম ডিপোর ৯ জন ও অন্যান্য ৪ জনের পরিবারকে ১০ লাখ করে টাকা দেওয়া হয়। অঙ্গহানি হওয়া ১৫ জনের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের ৯ জনকে ১০ লাখ করে, বিএম ডিপোর ৩ জন ও অন্যান্য ৩ জনকে ৬ লাখ করে টাকা দেওয়া হয়েছে। দগ্ধ বা আহত ২৩ জনের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের ৪ জন, বিএম ডিপোর ১৯ জন ও অন্য একজনকে ৪ লাখ করে টাকা দেওয়া হয়েছে।