জামিন পাননি নর্থ সাউথের দুই ট্রাস্টি

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের জমি কেনা বাবদ অতিরিক্ত ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগের মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রাস্টি বোর্ডের দুই সদস্যকে জামিন দেননি হাইকোর্ট। তারা হলেন, এম এ কাশেম ও রেহানা রহমান।

তবে তাদের কেন জামিন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে মামলার বিবাদীদের এ রুলে জবাব দিতে বলা হয়েছে।

তাদের জামিন আবেদনের শুনানি শেষে মঙ্গলবার (২ আগস্ট) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব আদেশ দেন।

আদালতে জামিন আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক ও ব্যারিস্টার সাঈদ আহমেদ রাজা। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক। 

এর আগে গত ১২ মে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের জমি কেনা বাবদ অতিরিক্ত ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয় দেখিয়ে তা আত্মসাতের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।

দুদকের উপ-পরিচালক মো. ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী ঢাকায় এ মামলা করেন বলে কমিশনের মহাপরিচালক সাঈদ মাহবুব খান জানান।

মামলার আসামিরা হলেন- নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদ, বোর্ডের চার সদস্য এম এ কাশেম, বেনজীর আহমেদ, রেহানা রহমান, মোহাম্মদ শাহজাহান এবং আশালয় হাউজিং অ্যান্ড ডেভেলপার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিন মো. হিলালী।

এজাহারে বলা হয়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে পাশ কাটিয়ে ট্রাস্টি বোর্ডের কয়েকজন সদস্যের অনুমোদন বা সম্মতির মাধ্যমে ক্যাম্পাস উন্নয়নের নামে ৯ হাজার ৯৬ দশমিক ৮৮ ডেসিমেল জমির দাম ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ ১৩ হাজার ৪৯৭ টাকা বেশি দেখিয়ে তা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলের টাকা আত্মসাতের হীন উদ্দেশ্যে কম দামে জমি কেনা সত্ত্বেও বেশি দাম দেখিয়ে তারা প্রথমে বিক্রেতার নামে টাকা প্রদান করেন। পরবর্তী সময়ে বিক্রেতার কাছ থেকে নিজেদের লোকের নামে নগদ চেকের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করে আবার নিজেদের নামে এফডিআর করে রাখেন। পরবর্তী সময়ে নিজেরা উক্ত এফডিআরের অর্থ উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন।

‘অবৈধ ও অপরাধলব্ধ আয়ের অবস্থান গোপনের জন্য ওই অর্থ হস্তান্তর ও স্থানান্তর মাধ্যমে মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধও সংঘটন করেন।’

মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯/৪২০/১৬১/১৬৫ক ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর ৪(২)(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০’ অনুযায়ী নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ বোর্ড অব ট্রাস্টিজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন অ্যান্ড আর্টিকেলস (রুলস অ্যান্ড রেগুলেশনস) অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় একটি দাতব্য, কল্যাণমুখী, অবাণিজ্যিক ও অলাভজনক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

এদিকে গত ২২ মে একই মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চার সদস্যের জামিন আবেদন খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তাদের শাহবাগ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পাশাপাশি তাদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিম্ন আদালতে হাজির করতে বলা হয়।

ট্রাস্টি বোর্ডের চার সদস্য হলেন- এম এ কাশেম, বেনজীর আহমেদ, রেহানা রহমান ও মোহাম্মদ শাহজাহান।

হাইকোর্টের আদেশের ধারাবাহিকতায় চার ট্রাস্টিকে ঢাকার বিচারিক আদালতে হাজির করা হলে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।

আরও পড়ুন: নর্থ সাউথের ট্রাস্টিদের অপরাধ গুরুতর বিধায় জামিনে বাধা