সড়কে এখনও নামেনি অনেক বাস

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে ভাড়া সমন্বয় করা হলেও এখনও রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে নামেনি অনেক বাস। একদিকে যেমন সকাল থেকেই ছিল সড়কে কম সংখ্যক বাসের চলাচল, সেই সঙ্গে যাত্রীর সংখ্যাও এক এক জায়গায় কম-বেশি দেখা গেছে। রাজধানীর কোথাও কোথাও সকাল থেকেই গন্তব্যে যাওয়ার জন্য যাত্রীদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন অফিসগামীরা।

রবিবার (৭ আগস্ট) সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। 

মোহাম্মদপুর, গাবতলী, টেকনিক্যাল, শ্যামলী, কল্যাণপুর, আসাদগেট এলাকায় দেখা গেছে অফিসগামী মানুষের তীব্র চাপ। সেই তুলনায় বাসের সংখ্যা খুবই কম। তবে সড়কে চাপ রয়েছে ব্যক্তিগত গাড়ি এবং সিএনজির।

ছবি: সাজ্জাদ হোসেন

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত শুক্রবার জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ঘোষণার পর হুট করেই বাসের সংখ্যা কমে যায় রাজধানীতে। গতকাল শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় এর প্রভাব তেমন পড়েনি। শনিবার দিবাগত রাতে গণপরিবহনের ভাড়া সমন্বয় করা হলেও অনেক কোম্পানির বাসই সড়কে নামেনি। এদিকে আজ রবিবার সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস, আবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও খোলা। সবমিলিয়ে যাত্রীদের চাপ কিছুটা বেশি। 

সকাল থেকেই সড়কগুলো দেখা গেছে অনেকটাই ফাঁকা দেখা, ছিল না প্রতিদিনের মতো যানজটের সারি। যাত্রীচাপ সামলাতে অনেক বাসের গেট বন্ধ করেই চলাচল করতে দেখা গেছে। 

সকালে ৮টার দিকে শ্যামলীতে দেখা যায়, দীর্ঘ সময় পর এক একটি বাস আসলে তাতে যাত্রীরা ওঠার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। দাঁড়িয়ে গাদাগাদি করে বিভিন্ন গন্তব্যে গিয়েছেন যাত্রীরা। অনেককে দরজায় বাঁদরঝোলা হয়েও গন্তব্যে ছুটতে দেখা গেছে।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিজীবী মো. রশিদ বলেন, ‘আমার বাসা মোহাম্মদপুর। বাসা থেকে বের হয়ে কিছুদূর হেঁটে এসে বাসে উঠি। কিন্তু আজ বাসের জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছে। তারপরও পাইনি। আর সে কারণে হেঁটে হেঁটেই আসাদগেট এসে বাসের জন্য অপেক্ষা করছি।’

মিরপুরে বাসের জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে গন্তব্যের যাওয়ার জন্য রওয়ানা দেন জুয়েল। এ সময় তিনি বলেন, বাসটি আসার পর একপ্রকার যুদ্ধ করেই বাসে ওঠতে হয়েছে। ভাড়া বাড়ার পরও বাসের সংকটের কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

ছবি: সাজ্জাদ হোসেন

রাজধানীর এয়ারপোর্ট, কুড়িল বিশ্বরোড, বাড্ডা, রামপুরা এসব এলাকাতেও খোঁজ নিয়ে একই চিত্রের তথ্য পাওয়া গেছে।

মিরপুর ট্রাফিক বিভাগ গাবতলী জোনের সার্জেন্ট আলমগীর হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আজ সকাল থেকেই সড়কে বাসের সংখ্যা কিছুটা কম। তেলের দাম বাড়ার কারণে অনেকে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামেননি।  চালকদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পেয়েছেন বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

আবার কিছু কিছু রুটে গাড়ি থাকলেও যাত্রী সংখ্যা বেশ কম লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষ করে মিরপুর থেকে বেশ কিছু গাড়ি খালি আসন নিয়েই চলাচল করতে দেখা গেছে।

ছবি: নাসিরুল ইসলাম

এদিকে ভাড়া বাড়ানো হলেও তালিকা প্রকাশ না হওয়ায় গন্তব্য অনুযায়ী ভাড়ার জন্য যাত্রী এবং বাসের হেলপারদের মধ্যে বাকবিতণ্ডার সৃষ্টি হচ্ছে।  

যাত্রীরা বলছেন, তেলের দাম বেড়েছে, সেই সাথে ভাড়াও বেড়েছে। কিন্তু তারপরও ভোগান্তি কিছু ছাড়ছে না। তালিকা প্রকাশ না হওয়ায় যতটুকু বেড়েছে হেল্পাররা তার চেয়েও অনেক বেশি ভাড়া দাবি করছেন। 

ছবি: নাসিরুল ইসলাম

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রজাপতি পরিবহনের চালক রোকন বলেন, ‘এখনও ভাড়ার তালিকা আমাদের কাছে আসেনি। যতটুকু জানতে পেরেছি সন্ধ্যার মধ্যে চলে আসবে। প্রতি কিলোমিটার আড়াই টাকা হিসাব করে আমরা যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া নিচ্ছি।’

মৌমিতা পরিবহনের চালক মিজান বলেন, ‘আজ রাস্তায় যাত্রী কম থাকবে, এ বিষয়টি চিন্তা করে অনেকেই গাড়ি নিয়ে বের হননি। তেলের দাম বেড়েছে, এখন কোথাও প্যাসেঞ্জারের জন্য অপেক্ষা করলে গাড়ি স্টার্ট বন্ধ করে অপেক্ষা করতে হচ্ছে।’

তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার সাহেদ আল মাসুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তেজগাঁও এলাকায় বিভিন্ন ধরনের গাড়ির চাপ রয়েছে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখার জন্য মাঠে থাকা সার্জেন্টদের বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’