মহাসড়কে নিরাপত্তায় যেসব পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি

রাতে পরিবহন চলাচল নিরাপদ করতে মহাসড়কে নিরাপত্তায় বেশ কয়েকটি ব্যবস্থা কঠোরভাবে বাস্তবায়নের কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি টাঙ্গাইলে ডাকাতি এবং ধর্ষণের ঘটনার পর মহাসড়কে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে আরও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি  জানানো হয়েছে বিভিন্ন মহল থেকে। মহাসড়কে সিসিটিভি স্থাপন, বাসে আইপি ক্যামেরা স্থাপন, হাইওয়ে পুলিশের চেকপোস্ট বাড়ানো, বাস ছাড়ার সময় যাত্রীদের ভিডিও করা, যাত্রীদের সচেতন করা, মালিকদের সচেতনতার পাশাপাশি কার্যকর ব্যবস্থা নিতে বাসের চালক, সুপারভাইজার ও হেলপারদের সচেতন করার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

এছাড়া, ৯৯৯-এ রাতে যেকোনও ফোন গেলে, যদি কেউ কথা না বলতে পারে পরিস্থিতি বিবেচনা করে ফোন করা ব্যক্তিকে ট্রেস করে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

হাইওয়ে পুলিশ বলছে, এরইমধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সিসিটিভি বসানোর কাজ চলছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ছাড়াও বিভিন্ন মহাসড়ক পর্যালোচনা করে সিসিটিভির আওতায় আনার জন্য সার্ভে করা হয়েছে। সারা দেশের সড়ক-মহাসড়ক সিসিটিভির আওতায় আনা গেলে কার্যকর ফল পাওয়া সম্ভব হবে। বিভিন্ন সার্ভে করে কোথায় কোথায় সিসিটিভি বসানো যায় এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থান ছাড়াও জনবল বাড়ানোর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।

সম্প্রতি টাঙ্গাইলে ডাকাতি করতে গিয়ে ধর্ষণের ঘটনার পর মহাসড়কে বিভিন্ন জায়গায় চেকপোস্ট পরিচালনা করছে হাইওয়ে পুলিশ। রাতে বিভিন্ন মহাসড়কে কোন কোন জায়গায় অপরাধের ঘটনা ঘটতে পারে সেগুলো চিহ্নিত করে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বিভিন্ন পয়েন্ট চিহ্নিত করে রাতে চলাচলকারী বিভিন্ন বাসে চেকপোস্ট পরিচালনা করে যাত্রীদের ভিডিও করা হবে। তবে চেকপোস্ট পরিচালনার সময় যানজট এবং যাত্রী ভোগান্তির বিষয়গুলো নজরে রেখেই সে অনুযায়ী কাজ করবে হাইওয়ে পুলিশ। যখন যে পরিস্থিতিতে যে ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয় সে অনুযায়ী কাজ করা হবে।

হাইওয়ে পুলিশ (গাজীপুর) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুস সাকিব বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মানুষকে সচেতন করার কোনও বিকল্প নেই। সীমিত সামর্থ্য দিয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। রাতে গণপরিবহনে রাস্তায় যাত্রী ওঠানোসহ কোনও সমস্যার সম্মুখীন হলে যাত্রীরা ‘৯৯৯’-এ সহায়তা নিতে পারেন। বিভিন্ন বাসের মালিক, হেলপার ও ড্রাইভারদের সঙ্গে কথা বলে বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে অবহিত হচ্ছে হাইওয়ে পুলিশ। দূরপাল্লার কোনও বাস রাতে রাস্তা থেকে কোনও যাত্রী ওঠাতে পারবে না। এ বিষয়ে আমার কাজ করছি।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সহকারী অধ্যাপক সাইফুন নেওয়াজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, রাতে যেসব বাস দূরপাল্লায় চলাচল করে সেসব বাসে যারা চালক এবং সুপারভাইজার, হেলপার থাকেন তাদের আরও বেশি সচেতন হতে হবে। রাস্তায় যাত্রী যেন ওঠাতে না পারে সেজন্য সেসব বাসে সিসিটিভি বসানো প্রয়োজন। তাহলে সেই বাসের মালিক বাসা থেকেই যাত্রীদের সম্পর্কে জানতে পারবেন। মালিকদের উচিত তাদের নিরাপত্তার জন্যই রাতে চলাচলকারী বাসে আইপি ক্যামেরা স্থাপন করা।

তিনি বলেন, ‘৯৯৯’-এর সচেতনতা বাড়াতে হবে। রাতে বিপদে পড়লে অনেক সময় ফোন করে কথা বলা সম্ভব হয় না। সে কারণে যেসব ফোন থেকেই আসুক না কেন, কেউ কথা বলতে না পারলেও সেগুলো ট্রেস করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারে।

শ্যামলী এন আর পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাকেশ ঘোষ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সম্প্রতি টাঙ্গাইলে যে ঘটনা ঘটেছে, তা যেন আর না ঘটে আমরা মালিকরা সেটাই চাই। প্রতিটি বাস স্ট্যান্ড থেকে ছেড়ে যাওয়ার সময় ভিডিও করা শুরু করেছি। এছাড়া যেসব জায়গায় যাত্রাবিরতি দেওয়া হয় সেখানেও ভিডিও করা শুরু হয়েছে। এছাড়া চালক, সুপারভাইজার ও হেলপারদের সচেতন থাকার জন্য বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।