রেণু হত্যা মামলা

তুবা জানে মা চাঁদ হয়ে গেছে, মাহির চুপচাপ

মাহির সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। তুবা প্রথম শ্রেণিতে। মায়ের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই মানসিক আঘাতে নীরব হয়ে গেছে মাহির। সারাক্ষণ কী যেন ভাবে। আর তুবা বলে, মা আকাশের চাঁদ হয়ে গেছে। এসব বলছিলেন রেণু হত্যা মামলার বাদী সৈয়দ নাসির উদ্দিন টিটু।

২০১৯ সালের ২০ জুলাই রাজধানীর উত্তর বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিজের সন্তানের ভর্তির ব্যাপারে খোঁজ নিতে গেলে ছেলেধরা সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা হয় তাসলিমা বেগম রেণুকে। এ ঘটনায় রেণুর ভাগনে সৈয়দ নাসির উদ্দিন টিটু বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন।

সেই মামলার অগ্রগতি বিষয়ে কথা হয় টিটুর সঙ্গে। বললেন ‘তিন বছর আগে খালাকে হারিয়েছি। বিচার এখনও শেষ হয়নি। আমরা চাই মামলাটির যেন দ্রুত নিষ্পত্তি হয়।’

তুবা ও মাহিরের প্রসঙ্গে টিটু বললেন, ‘মাহিরসপ্তম শ্রেণিতে পড়ছে। তুবা এখন প্রথম শ্রেণিতে। মাহির এ ঘটনায় এতটাই মানসিক আঘাত পেয়েছে যে, বেশ চুপচাপ হয়ে গেছে। সারাক্ষণ কী যেন ভাবে। আর তুবাকে কেউ মায়ের কথা জিজ্ঞেস করলে ও বলে, মা চাঁদ হয়ে গেছে।’

এখনও ঘুমাতে গেলে মাকে খোঁজে তুবা

‘আমরা আমাদের জায়গা থেকে ওদের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু ভবিষ্যতে ওদের জন্য কী দিয়ে যেতে পারবো তা নিয়ে চিন্তিত। কী হবে ওদের জানি না। সরকার যদি ওদের পাশে দাঁড়ায় তবে হয়তো ভালো কিছু হবে।’

এদিকে মামলার অন্যতম আসামি হৃদয়ের আইনজীবী সেলিম মিয়া বলেন, ‘এটি একটি গণহত্যা। সুনির্দিষ্টভাবে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই। হৃদয় এখন কারাগারে। সে ছিল একজন হকার। ওই স্কুলের সামনে সবজি বিক্রি করতো। সে দেখে কিছু লোকজন এক নারীকে ছেলেধরা সন্দেহে মারধর করছে। অতি উৎসাহী হয়েই সে সেখানে যায়।’

রেণু হত্যা মামলার প্রধান আসামি হৃদয় রিমান্ডে

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু বলেন, ‘এটি আলোচিত মামলা। সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। সাক্ষীরা নিয়মিত আদালতে এসে সাক্ষী দিলে মামলাটির দ্রুত নিষ্পত্তি করা সম্ভব। তবে মাঝে-মধ্যে সাক্ষীরা আসেন না। এতে মামলা শেষ করা কঠিন হয়ে যায়। আশা করছি দ্রুত এর নিষ্পত্তি হবে।’

গত ২০২০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর আদালতে ১৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর আব্দুল হক।

আসামিদের মধ্যে জাফর ও ওয়াসিম ঘটনার সময় শিশু বয়সী থাকায় তাদের মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এ বিচারাধীন। বাকি ১৩ আসামির বিচার চলছে ঢাকার ৬ষ্ট অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ফাতিমা ইমরোজ কনিকার আদালতে।

মামলার আসামিরা হলেন— মো. শাহীন (৩১), মো. বাচ্চু মিয়া (২৮), মো. বাপ্পি (২১), ইব্রাহিম ওরফে হৃদয় মোল্লা (২০) মুরাদ মিয়া (২২), মো. সোহেল রানা (৩০), মো. বিল্লাল (২৮), মো. আসাদুল ইসলাম (২২), মো. রাজু (২৩), আবুল কালাম আজাদ (৫০), মো. কামাল হোসেন (৪০), মো. ওয়াসিম (১৪), রিয়া বেগম ময়না (২৭) ও মো. জাফর হোসেন (২০)।

এদের মধ্যে ওয়াসিম, হৃদয় ও রিয়া বেগম আদালতে দোষ স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

‘রেণুকে ছেলেধরা বলে প্রথম সম্বোধন করেছিলেন রিয়া’

২০১৯ সালের ২০ জুলাই সকালে রাজধানীর উত্তর বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিজের সন্তানের ভর্তির ব্যাপারে খোঁজ নিতে গিয়েছিলেন তাসলিমা বেগম রেণু। ছেলেধরা সন্দেহে তাকে পিটিয়ে হত্যা করে স্থানীয় কয়েকজন। ওইদিন সকাল পৌনে ৯টার দিকে উত্তর বাড্ডা কাঁচাবাজারের সড়কে এই ঘটনা ঘটে।

ওই রাতেই বাড্ডা থানায় অজ্ঞাত ৪-৫ শ’ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন নিহতের ভাগনে সৈয়দ নাসির উদ্দিন টিটু।

আরও পড়ুন...

গণপিটুনিতে রেণু হত্যার ঘটনায় ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিট

ছেলেধরা গুজবে হত্যাকাণ্ডের শিকার রেণুর পরিবারের পাশে তথ্যমন্ত্রী