কৃষকের সন্তানরাই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন বেশি: আসাদুজ্জামান নূর

রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর বলেছেন, ‘আমাদের দেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের প্রকৃত সত্য হলো, মুক্তিযুদ্ধে যারা অংশ নিয়েছিলেন তাদের মধ্যে শতকরা ৭০ ভাগই ছিলেন নিরক্ষর কৃষকের সন্তান। যারা ইতিহাস, রাজনীতি বা ইতিহাসবিদদের জীবনী পড়ে জ্ঞান অর্জন করেন, তাদের সংখ্যাটা আদতে কম ছিল। ১৬ ডিসেম্বর বা ২৬ মার্চ এলে আমরা টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দেখি। এতে শহুরে দু-একজন মুক্তিযোদ্ধা কথা বলেন। তবে এর বাইরেও অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে আছেন। তাদের কথা আমরা শুনি না।’

রবিবার (১১ সেপ্টেম্বর) জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক জন-ইতিহাস ইনস্টিটিউটের শততম আয়োজন উপলক্ষে ‘কিশোরের মুক্তিযুদ্ধ, মেসবাহ কামালের স্মৃতি ও সংগ্রাম’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন ‘গ্রামের নিরক্ষর কৃষকের সন্তান– যারা হয়তো সর্বোচ্চ স্কুল পর্যন্ত পড়েছেন, তাদের মধ্যে গভীর দেশপ্রেমের ভাবনাটা কীভাবে এলো সেটা আমাদের ভাবিয়ে তোলে। একটা লুঙ্গি, গেঞ্জি পরে তারা হালকা অস্ত্র নিয়ে রাতে বেরিয়ে পড়েছেন পাকিস্তানের মতো শক্তিশালী একটি সেনাবাহিনীর সামনে। এই সাহস, দেশপ্রেম তারা কোথা থেকে পেলেন?’

তিনি উল্লেখ করেন, তাদের বিশ্বাসের জায়গাটা ছিল অন্তত প্রবল। দেশ স্বাধীন হবে এবং আমরা একটা স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ পাবো– এটাই ছিল তাদের বিশ্বাস। তবে এই বিশ্বাসের জন্ম হয়েছে কোথা থেকে? এই প্রশ্নের উত্তর হলো, বঙ্গবন্ধু বলেছেন যুদ্ধে যেতে হবে। দ্বিতীয় কোনও বিষয় তাদের মাথায় ছিল না। প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধার কাছে বঙ্গবন্ধু সশরীরে উপস্থিত ছিলেন না। সশরীরে না থেকেও তিনি কত প্রবলভাবে উপস্থিত ছিলেন– সেটা যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি তারা অনুভব করতে পারবেন না।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক চলচ্চিত্র নির্মাতা ফুয়াদ চৌধুরী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে শিশু-কিশোরদের অবদানকে যেভাবে তুলে ধরার কথা সেভাবে তুলে ধরা হয় না।’ তাদের ইতাহাসকে চর্চা করার আহ্বান জানান নির্মাতা ফুয়াদ চৌধুরী।

আন্তর্জাতিক জন-ইতিহাস ইনস্টিটিউটের সভাপতি অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘একাত্তরে আমাদের সবার বয়স অন্তত ১০ বছর করে বেড়ে গিয়েছিল। সে সময়টা এমন ছিল– মনে হতো ইথারে কথা ভেসে আসছে। কোনও ঘটনা ঘটলে সারা দেশে মুহূর্তেই ছড়িয়ে যেতো। রেডিও-টেলিভিশন তখন পাকিস্তান সরকারের নিয়ন্ত্রণে ছিল। তার পরও বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতা একদিন পরে প্রচারিত হয়েছে।’

জন-ইতিহাস ইনস্টিটিউটের অনুষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক বিভাগের সম্পাদক অঞ্জন মেহেদীর সঞ্চালনা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল মমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন জন-ইতিহাস ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. সানিয়া সিতারা। আরও বক্তব্য রাখেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও দর্শন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান এবং ইতিহাসবিদ অধ্যাপক শরিফ উদ্দিন আহমদ।