পদ্মা সেতু উদ্বোধনের ৩ মাস পার হলেও যাত্রী সংকটে রয়েছে দক্ষিণবঙ্গের লঞ্চগুলো। ফলে লঞ্চ শ্রমিকদের বেতন পেতে যেমন দেরি হচ্ছে, তেমনি কখনও আবার মিলছে না বেতন। চাকরি হারানোর শঙ্কায় আছেন অনেকে। অপরদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে কপালে ভাঁজ পড়েছে তাদের।
গত জুন মাসে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর সড়কপথে যেতে শুরু করেন দক্ষিণবঙ্গের বেশিরভাগ যাত্রী। লঞ্চ মালিকদের আশা ছিল, আরামে যাত্রার জন্য আবারও লঞ্চমুখী হবেন যাত্রীরা। তবে যাত্রী ফিরলেও আগের রমরমা অবস্থা ফেরেনি বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। ফলে লঞ্চ ব্যবসায় নেমে এসেছে ভাটা, যার প্রভাব পড়েছে শ্রমিকদের বেতনে।
রাজধানীর সদরঘাটে লঞ্চ শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগের মাসগুলোতে ৫ তারিখের মধ্যে বেতন মিললেও এখন বেতন পেতে ১৫-২০ তারিখ হয়ে যায়। কিছু লঞ্চের শ্রমিকের আগস্ট মাসের বেতনও বাকি আছে। শ্রমিকরা বলছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে যেখানে বেতন বাড়ার কথা, সেখানে এখন নিয়মিত বেতন পাওয়াই দায়। অনেকে চাকরি হারানোর ভয়ে আছেন। তারা বলছেন, একদিকে বেতন ও চাকরির অনিশ্চয়তা, অপরদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জীবনযাপন কোণঠাসা হয়ে পড়ছে।
এমভি ফারহান লঞ্চের মাস্টার আব্দুল রইস বলেন, ‘আগে একসঙ্গে অনেক লঞ্চ চলতো। এখন রোটেশন করে চলে। লঞ্চ স্টাফদের মাঝে চাকরি হারানোর আতঙ্ক রয়েছে। কারণ, মালিকপক্ষের তো সক্ষমতা থাকতে হবে। তেলের দাম বেড়েছে, জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘যারা এই পেশায় আছেন, অনেক দিন আছেন, অন্য কাজও জানা নেই, লঞ্চ কমে গেলে তাদের অনেকের চাকরি থাকবে না।’
সুন্দরবন লঞ্চের স্টাফ মইন উদ্দিন বলেন, ‘ছেলেমেয়ে বড় হয়েছে, ফলে খরচ বেড়েছে। জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে ১৫ হাজার টাকা বেতনে চলে না। আমরা তাও ১০-১৫ তারিখের মধ্যে বেতন পাই। অনেক লঞ্চে গত মাসের বেতনও দেওয়া হয়নি। সামনে কী যে হবে জানি না।’
তিনি বলেন, ‘আগে একটা লঞ্চ সপ্তাহে ৬ দিন চলতো, এখন রোটেশনে ৩ দিন চলছে। এরমধ্যে তেলের দাম বেড়েছে। করোনাকালের ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে পারেনি কোম্পানিগুলো। অনেক কোম্পানিই বসে গেছে।’
শহীদুল হক আরও বলেন, ‘ভবিষ্যৎ নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন আমরা। আমার ধারণা, অনেক কোম্পানি ব্যবসা ছেড়ে দেবে।’ আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শ্রমিকদের বেতন বাড়ানো দরকার আমরাও জানি। কিন্তু অনেক কোম্পানির মালিক বাজার খরচই তুলতে পারছেন না। তারপরও সবাই চেষ্টা করছেন শ্রমিকদের বেতন চালিয়ে যাওয়ার। আমরা সমিতি থেকেও শ্রমিকদের বেতন নিয়মিত দেওয়ার জন্য বলেছি।’