থানা হেফাজতে আসামির অসুস্থতা নিয়ে ধোঁয়াশা

মামুন মিজি নামে এক আসামিকে রাজধানীর মিরপুরের পল্লবী থানা পুলিশ গ্রেফতারের পর তার অসুস্থতা নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশি হেফাজতে থাকা অবস্থায় অসুস্থতার কারণে আসামিকে পল্লবী থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা এসআই জহির স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে তাকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক আসামি মামুনকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে শারীরিক কোনও সমস্যা পাননি। এদিকে, পরিবারের সদস্যরা দাবি করেন পুলিশের নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ওই আসামি। শুক্রবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। পল্লবী এলাকার কালশী রোড এলাকা থেকে শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে মামুনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

আসামি মামুনের অসুস্থতার বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের কাছে মামুনের ভাই সুমন অভিযোগ করেন, গ্রেফতারের পর পুলিশের নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন মামুন। মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়ে দু লাখ টাকা দাবি করেছে পুলিশ– এমন অভিযোগও করেন তিনি।

ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর বিষয়টি নিশ্চিত হতে পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পারভেজ ইসলামকে ফোন দেওয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি। এ ছাড়া আসামি মামুনের সঙ্গে থাকা পল্লবী থানার এসআই জহিরও ফোন ধরেননি। এ বিষয়টির সত্যতা জানতে মিরপুরের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) জসিম উদ্দিনকে ফোন দেওয়া হলে বিষয়টি তিনি অবগত নন বলে জানান। রাত ১২টার পর ফোন দেওয়ায় বিরক্তি প্রকাশ করে পল্লবী থানার ওসির সঙ্গে যোগাযোগের কথা বলে ফোন কেটে দেন তিনি।

পরবর্তী সময়ে আসামি মামুনকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন চিকিৎসকরা। শারীরিক কোনও সমস্যা তারা পাননি। সেখানে বেড না থাকায় মামুনকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। আসামি মামুনকে নিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে যান সঙ্গে থাকা পল্লবী থানার এসআই জহির।

সাংবাদিকরা পুলিশি নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনার বিষয়টির তথ্য সংগ্রহ করতে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে গিয়ে ভিন্ন চিত্র দেখতে পান। সে সময় আসামি মামুনের সঙ্গে কথা বললে তিনি দাবি করেন, তাকে পুলিশ শারীরিকভাবে কোনও নির্যাতন করেনি। তবে কী কারণে তিনি অসুস্থতা বোধ করছেন বা কী ধরনের অসুস্থতা বোধ করছেন সে বিষয়েও দেননি কোনও সদুত্তর।

এসআই জহির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মারামারির একটি মামলায় শুক্রবার ২৩ সেপ্টেম্বর আসামি মামুনকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসি। তাকে কোনও ধরনের নির্যাতন করা হয়নি। শারীরিক অসুস্থতা অনুভব করায় তাকে হাসপাতালে আনা হয়েছে।’

চিকিৎসকের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ‘মামুনের শরীরে কোনও সমস্যা পাননি চিকিৎসকরা। তবে তাকে নিয়ে থানায় যেতেও বিব্রত বোধ করছি। চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাকে। আমাদের সে তার শারীরিক অসুস্থতার কথা বললে স্থানীয় কিংস্টন হাসপাতালে নিয়ে যাই। পরে সেখান থেকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যাই।’ মামুনের পরিবারের অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন বলেও দাবি করেন তিনি।

এদিকে, আসামি মামুন এবং পুলিশের সঙ্গে কথা বলার পর আবারও মামুনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাদের আর পাওয়া যায়নি। একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা ফোনও ধরেননি।