গ্রেফতার আতঙ্কে সিটি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা





সিটি কলেজের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরাউচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হতে দুই মাসেরও কম সময় বাকি। এর মধ্যেই দুই থেকে আড়াইশ পরীক্ষার্থীকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছে সিটি কলেজ কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা পরীক্ষাকেন্দ্র পরিবর্তনের দাবিতে বিক্ষোভের সময় কলেজে ভাঙচুর চালিয়েছে। এ কারণে কলেজও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে অনির্দিষ্টকালের জন্য।
এদিকে মামলা দায়ের করায় পরীক্ষার্থীদের মধ্যে শুরু হয়েছে গ্রেফতার আতঙ্ক। পরীক্ষার আগে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় ভীত ও বিব্রত অভিভাবক-শিক্ষার্থীরা। তবে পুলিশ জানিয়েছে, কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অহেতুক কাউকে হয়রানি করা হবে না।
কলেজের আশেপাশে পরীক্ষা কেন্দ্রের দাবিতে গত রোববার মিরপুর সড়ক সড়ক অবরোধ করে সিটি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা। এ সময় তারা কলেজের তিনটি ফটকে ভাংচুর চালায়। পরে পুলিশের লাঠি চার্জে তারা রাত ৯টার দিকে ছত্রভঙ্গ হয়ে বাসায় ফিরে যায়। এ সময় ছয় ছাত্রীসহ ৯ শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়।
এদিনের ঘটনায় সিটি কলেজ কর্তৃপক্ষ ধানমন্ডি থানায় অজ্ঞাত দুই থেকে আড়াইশ শিক্ষার্থীকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করে। পরীক্ষার্থীরা এখন মনে করছে, পুলিশ তাদের যে কোনও সময় গ্রেফতার করবে। এ নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা।
মঙ্গলবার বিকালে কয়েকজন শিক্ষার্থী এই প্রতিবেদককে ফোন করে তাদের আতঙ্কের কথা জানায়। তারা এতোটাই আতঙ্কগ্রস্ত যে নাম প্রকাশ করতেও ভয় পাচ্ছে, যদি পুলিশ তাদের চিনে ফেলে। কলেজটির বিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে বলে, ‘কলেজের সিনিয়র শিক্ষকরা বলেছেন তারা পুলিশের কাছে একটি নামের তালিকা দিয়েছেন। যারা সেদিন আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিল তাদের সবাইকে চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা হবে। এ খবর শুনে খুব ভয়ে আছি। কী করব বুঝতে পারছি না।’

ওই শিক্ষার্থী আরও বলে, ‘আমাদের পরীক্ষা শুরু এপ্রিলের ৩ তারিখ। অথচ এখন আমাদের এসব নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। পরীক্ষা দেব কী করে? শিক্ষকদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলেও বলা যাচ্ছে না। তারা কেবল পুলিশের ভয় দেখান।’

এরপর আরও এক শিক্ষার্থী নারায়ণগঞ্জ থেকে ফোন দিয়ে জানতে চায়, আমাদের এখন কী হবে? কলেজ বন্ধ, মামলা এবং পরীক্ষাকেন্দ্র অন্য জায়গায়। সবই আমাদের বিরুদ্ধে। আমাদের কথা শোনার কেউ নেই। আমরা কোন কলেজে পড়ি? যেখানে পরীক্ষার আগে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হলো!’

সিটি কলেজের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কলেজের এ বছরের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজে নেওয়া হবে জানিয়ে গত বুধবার ঢাকা শিক্ষাবোর্ড ওয়েব সাইটে পরীক্ষা কেন্দ্রের তালিকা প্রকাশ করে। যদিও এর আগের বছরগুলোতে সিটি কলেজের পরীক্ষাকেন্দ্র ছিল গভঃ ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ। বোর্ডের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সিটি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার সকালে কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করে আগের কেন্দ্রেই পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানায়। পরীক্ষার্থীরা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজে গিয়ে পরীক্ষা দিতে রাজি না। পরীক্ষার সময় তাদের আরও বেশি যানজটে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। নারায়ণগঞ্জ ও রাজধানীর পার্শ্ববর্তী এলাকার পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে সময় মতো আসতে পারবে না বলেও দাবি তাদের।

বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে দুই দিনের সময় নিয়েছিলেন অধ্যক্ষ। কিন্তু কোনো সুরাহা না হওয়ায় রবিবার সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করে। চলে রাত পর্যন্ত। এতে মিরপুর সড়কের একদিক অচল হয়ে পড়ে।

সার্বিক বিষয় নিয়ে সিটি কলেজের অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান খানের সঙ্গে কথা বলার জন্য তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে কল ও ম্যাসেজ দিয়েও তার সাড়া পাওয়া যায়নি। কলেজটি বন্ধ থাকায় মঙ্গলবার দুপুরে কলেজেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের এক এইচএসসি পরীক্ষার্থী জানায়, প্রতিবছর গভঃ ল্যাবরেটরি, ধানমণ্ডি আইডিয়ালে আমাদের পরীক্ষাকেন্দ্র হতো। এ বছর রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজে আমাদের পরীক্ষা নেওয়া হবে। আমি নারায়ণগঞ্জ থেকে আসি, এই যানজটের শহরে সময় মতো মোহাম্মদপুর পর্যন্ত আমার পক্ষে যাওয়া সম্ভব না। তাই পরীক্ষা কেন্দ্র কলেজের কাছাকাছি কোনও স্কুল-কলেজে দেওয়ার দাবিতে আমরা সড়ক অবরোধ করি।

এবিষয়ে ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আজম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঘটনার পর কলেজ কর্তৃপক্ষ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে। মামলায় অজ্ঞাত দুই থেকে আড়াইশ আসামি করা হয়েছে। তবে এখনও কেউ আটক নেই। কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেই সকল আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

/এআরআর/এজে/