‘দেশের ২৫ শতাংশ মানুষ হঠাৎ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যেতে পারে’

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক বজলুল হক খন্দকার বলেছেন, দেশের প্রায় ২৫ শতাংশ মানুষ অরক্ষিত। তারা যেকোনও ধাক্কায় হঠাৎ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যেতে পারে। বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) অনলাইনে অনুষ্ঠিত ‘সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী: বাংলাদেশ কোথায় দাঁড়িয়ে’ শীর্ষক ওয়েবিনারে তিনি এসব কথা বলেন

বজলুল হক খন্দকার বলেন, মধ্যবিত্তের আয় সীমিত। দুর্যোগ বা উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময় এই তারা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, দুর্যোগের সময় তারা কারও কাছে হাত পাততে পারে না, আবার লাইনে দাঁড়িয়ে স্বল্পমূল্যের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতেও তাদের আত্মসম্মানে লাগে। ফলে তাদের কষ্ট কারও চোখে পড়ে না। তিনি মনে করেন, দেশের মধ্যবিত্তদের জন্যও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি প্রয়োজন।

তিনি উল্লেখ করেন, মালয়েশিয়ায় দেখা গেছে, কোভিডে সে দেশের মধ্যবিত্তরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমাদের দেশেও মধ্যবিত্তরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বজলুল হক বলেন এক্ষেত্রে সরকার দুটি কাজ করতে পারে। প্রথমত, সামাজিক নিরাপত্তা খাতের আওতা বৃদ্ধি করে দেশের অন্তত ৫৫-৬০ শতাংশ মানুষকে এর আওতায় নিয়ে আসা। তবে সরকারের সীমাবদ্ধতা আছে। দ্বিতীয়ত, মানুষের যখন অবস্থা ভালো থাকে, তখন পেনশন, বেকারত্ব, বিমা বা স্বাস্থ্যবিমার মতো সুরক্ষা মানুষ নিতে পারে। দুর্যোগের সময় মানুষ যেন সেখান থেকে ঋণ নিতে পারে, সে রকম ব্যবস্থা থাকতে হবে। এই দুটি মাধ্যমে দেশে সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা দাঁড়িয়ে যেতে পারে।

তিনি বলেন, সরকার সামাজিক নিরাপত্তা খাতে জিডিপির ২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশ বরাদ্দ দিয়েছে। তবে সরকারি কর্মচারীদের পেনশন বাদ দিলে তা ১ দশমিক ৫ থেকে ১ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে আসে। আবার সুবিধাভোগী নির্বাচনেও নানা ধরনের সমস্যা আছে। যত মানুষ সরকারের সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আছেন, তাঁদের মধ্যে ৭১ শতাংশ ভুল মানুষকে দেওয়া হয়। আবার ৪৬ দশমিক ৫ শতাংশ আছেন, প্রয়োজন না থাকলেও তারা ভাতা পাচ্ছেন।

অন্যদিকে দেশের শহরাঞ্চলে দরিদ্রের সংখ্যা ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ হলেও সুরক্ষা পাচ্ছেন ১০ দশমিক ৯ শতাংশ। কিন্তু গ্রামাঞ্চলে দরিদ্রের সংখ্যা ২৬ দশমিক ৪ শতাংশ হলেও সুরক্ষা পাচ্ছেন ৩৫ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ। এ ধরনের সমস্যার কারণে বিদ্যমান সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির সফলতা কম।

এমন বাস্তবতায় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিকে চারটি স্তম্ভে ভাগ করার পরামর্শ দেন বজলুল হক খন্দকার। যেমন, সামাজিক সহায়তা, সামাজিক বিমা, শ্রমবাজার-বিষয়ক কর্মসূচি ও সামাজিক সেবা। তিনি অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদেরও সামাজিক সুরক্ষা খাতের আওতায় নিয়ে আসার পরামর্শ দেন।