ই-অরেঞ্জের অর্থ লোপাট: যা আছে বিএফআইইউ’র  প্রতিবেদনে

দেশের অন্যতম ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে অর্থ লোপাটের অভিযোগের সত্যতাসহ বেশ কিছু তথ্য তুলে ধরে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করেছে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ই-অরেঞ্জ, অরেঞ্জ বাংলাদেশ ও রেড অরেঞ্জ ইন্টারন্যাশনালের নামে ১৩টি হিসাব খুলে লেনদেন করে সংশ্লিষ্টরা। এই ১৩টি হিসাবে ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত লেনদেন করা হয়েছে। এ সময়ে এক হাজার ১১১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা জমা ও এক হাজার ১০৯ কোটি ৯৭ লাখ টাকা উত্তোলনের মাধ্যমে মোট দুই হাজার ২২১ কোটি ৪২ লাখ টাকার লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে।

বুধবার (২ নভেম্বর) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে প্রতিবেদনটি দাখিল করা হয়েছে।

বিএফআইইউ’র প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ই-অরেঞ্জের স্বত্বাধিকারী সোনিয়া ও তার স্বামী মাসুকুর রহমানের নামে ২৪টি হিসাবে লেনদেন হয়েছে। ওই ২৪ হিসাবের মাধ্যমে সময়ে সময়ে সন্দেহভাজন দুই ব্যক্তি প্রায় ১২০ কোটি টাকার লেনদেন সম্পন্ন করে। সিআইডির অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের পরিচালিত সব হিসাবের লেনদেন ২০২১ সালের ২৫ জুলাই  স্থগিত করা হয়েছে।   

প্রতিবেদনের তথ্যমতে, প্রাথমিক পর্যায়ে এটির মালিকানায় সোনিয়া মেহজাবিন থাকলেও পরবর্তী সময়ে তা পরিবর্তন করে তার ভাই পুলিশ কর্মকর্তা (বরখাস্ত) শেখ সোহেল রানার স্ত্রী নাজনীন নাহারা বীথির নামে হস্তান্তর করা হয়। সোনিয়া মেহজাবিন, স্বামী মাসুকুর রহমান, ভাই শেখ সোহেল রানা ও চাচা মোহাম্মদ জায়েদুল ফিরোজ নগদে টাকা উত্তোলন ও ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর এবং নিজ নামে সম্পদ ক্রয় করার জন্য মোট ১৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ই-অরেঞ্জের হিসাব হতে স্থানান্তর/উত্তোলন করেন। তারা স্বার্থসংশ্লিষ্ট হিসাব থেকে এসব টাকা সরিয়েছেন। গ্রাহকদের অগ্রিম মূল্য পরিশোধিত অর্ডারের কাঙ্ক্ষিত পণ্য সরবরাহ না করে সন্দেহভাজন উল্লিখিত অর্থ তাদের ব্যক্তিগত হিসাবে স্থানান্তর করেছে। নগদে উত্তোলন ও ব্যক্তিগত স্থায়ী সম্পদ কিনেছেন মর্মে পরিলক্ষিত হয়েছে, যা প্রতারণার শামিল।

এর আগে ই-অরেঞ্জ থেকে ৭৭ কোটি টাকার পণ্য কিনে প্রতারণার শিকার ৫৪৭ জন গ্রাহকের পক্ষে মো. আফজাল হোসেন, মো. আরাফাত আলী, মো. তরিকুল আলম, সাকিবুল ইসলাম, রানা খান ও মো. হাবিবুল্লাহ জাহিদ নামের ছয় জন গ্রাহক চলতি বছরের মার্চ মাসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন।

রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ৭ এপ্রিল হাইকোর্ট রুল জারি করেন। একইসঙ্গে এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন আদালত।

রুলে গ্রাহকদের নিরাপত্তা, সুরক্ষায় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের সঙ্গে সম্পৃক্ত বনানী থানার সাময়িক বরখাস্ত পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানা, স্বত্বাধিকারী সোনিয়া মেহজাবিন ও বীথি আক্তারসহ অন্যদের বিরুদ্ধে গ্রাহক ঠকানো, অর্থপাচারের অভিযোগে আইনি ব্যবস্থা নিতে বিবাদীদের ব্যর্থতা ও নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। একইসঙ্গে সোহেল রানা, স্বত্বাধিকারী সোনিয়া মেহজাবিন ও বীথি আক্তারসহ অন্যদের কাছ থেকে টাকা উদ্ধার করে ক্ষতি অনুপাতে আবেদনকারীসহ প্রতারিত গ্রাহকদের মাঝে সেই টাকা বণ্টন বা বিতরণের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, রুলে তাও জানতে চেয়েছেন আদালত।

আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আহসানুল করিম ও আব্দুল কাইয়ুম লিটন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক।

পরে ওই আদেশের ধারাবাহিকতায় হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করলো বিএফআইইউ।

প্রসঙ্গত, গ্রাহকদের টাকা আত্মসাতের ঘটনায় অভিযুক্ত ই-অরেঞ্জের সঙ্গে সম্পৃক্ত সোহেল রানাকে ২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সীমান্ত এলাকা থেকে আটক করা হয়। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যরা অনুপ্রবেশের অভিযোগে পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার চ্যাংড়াবান্ধা সীমান্ত থেকে তাকে আটক করেন। পরে ৫ সেপ্টেম্বর তাকে সাময়িক বরখাস্তের কথা জানায় ঢাকা মহানগর পুলিশ।