আলোচনা সভায় বক্তারা

‘সহিংসতার শিকার নারীদের কথা শুনতে হবে’

‘সমাজে নারীর প্রতি সহিংসতা বহুমাত্রিক। মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের পাশাপাশি আরও আছে সামাজিক ঘৃণা, যা এক রকমের সহিংসতা। এসবের যারা শিকার তাদের কথা ধৈর্য সহকারে শোনার মানুষের সংখ্যা অনেক কম বাংলাদেশে। এই শোনার জায়গাটা তৈরি করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।’

বুধবার (৩০ নভেম্বর) ঢাকায় ষোলো দিনব্যাপী 'নারীর প্রতি সহিংসতা: সমাধানে ১৬ দিনের প্রচারাভিযান' উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও পিপিআরসি'র নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান।

সভার আয়োজন করে ব্রাত্যজন রিসোর্স সেন্টার (বিআরসি), সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট (সেড), পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও সহযোগী সংগঠনগুলো।

আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্যে সেড-এর পরিচালক ফিলিপ গাইন প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নারীদের সাথে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন সহিংসতা ও বৈষম্যের উপর আলোকপাত করেন। তিনি তার আলোচনায় নারী চা শ্রমিক, যৌনকর্মী, হিজরা, আদিবাসী নারী এবং বেদে নারীদের উপর নানা ধরনের সহিংসতা এবং তাদের বঞ্চনার চিত্র তুলে ধরেন।

আলোচনা সভার গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল সহিংসতার শিকার নারীদের কণ্ঠস্বর সামনে নিয়ে আসা।

শমশেরনগর চা বাগানের একজন শিক্ষিকা ২০১৫ সালে গণধর্ষণের শিকার হন। তিনি তার অভিজ্ঞতা নিয়ে বলেন, “ব্যাপারটি প্রথমে গোপন রাখার চেষ্টা করি, মাঝে মাঝে আত্মহত্যার কথাও ভাবতাম। মামলা করেও আজ আসামি জামিন নিয়ে জেলের বাইরে। আমার সাথে অবিচার হয়েছে। আমি ন্যায়বিচার চাই।”

ট্রান্সজেন্ডার নারী অধিকারকর্মী জয়া সিকদার তার বক্তব্যে বলেন, “হিজড়া একটা পেশা বা সংস্কৃতি, এটা কোনও লৈঙ্গিক পরিচয় নয়। লৈঙ্গিক পরিচয়ের এই জায়গাটা স্পষ্ট থাকা উচিত।"

বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সমন্বয়কারী ফাল্গুনি ত্রিপুরা বলেন, "পার্বত্য চট্টগ্রামের নারীদের একটি বড় সমস্যা তাদের ভাষা। এফআইআর করতে গেলে ভাষাগত সমস্যার কারণে অনেক তথ্য এদিক-ওদিক হয়ে যায়।"

নির্যাতনের শিকার অন্যান্যের মধ্যে আরও কথা বলেন শিশুদের জন্য আমরা'র সভাপতি হাজেরা বেগম, সেক্স ওয়ার্কার্স নেটওয়ার্কের সভাপতি আলেয়া আক্তার লিলি, বৈকণ্ঠপুর চা বাগানের নারী শ্রমিক মনি কল ও বেদে নারী তিতনা খাতুন।

বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, “আমাদের সোচ্চার থাকতে হবে প্রতিদিন, শুধু বছরের এই ষোলো দিন না। আমাদের আরও কাজ করতে হবে, প্রতিরোধ আরও দৃশ্যমান করে তুলতে হবে।

একাত্তর টেলিভিশনের কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স প্রধান মিথিলা ফারজানা বলেন, “আমাদের গল্প অনেক কিন্তু শুনছে অনেক কম মানুষ। গল্প উপস্থাপনের কৌশল জানতে হবে, পরিবেশনযোগ্য করে তুলতে হবে। গল্পগুলো শুধু আমরা নারীরা শুনলেই হবে না, পুরুষদেরও জানতে হবে। মিডিয়ার মাধ্যমে এই গল্পগুলো ছড়িয়ে দিতে হবে।"

বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু বলেন, “ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। পুরুষকেও এই আন্দোলনে নিয়ে আসতে হবে। অধিকার আদায়ে সোচ্চার হতে হবে।"

সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য রাখেন মুক্তি মহিলা সমিতির নির্বাহী পরিচালক মর্জিনা বেগম ও আদিবাসী নারী কর্মী তন্দ্রা চাকমা। হিজরাদের একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।