জামায়াতের আমিরের ১০ দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ

রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার নিজ বাসা থেকে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডাক্তার শফিকুর রহমানকে গ্রেফতার করেছে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)। এরপর তার ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) যাত্রাবাড়ী থানার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মো. আবুল বাসার তাকে আদালতে হাজির করেন। একই সঙ্গে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। আবেদন বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরীর আদালতে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে ডিএমপির উপকমিশনার (মিডিয়া) ফারুক হোসেন জানান ডাক্তার শফিকুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এর আগে জামায়াতের আমিরকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। মঙ্গলবার সকালে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিলটি রাজধানীর মৌচাক মার্কেটের সামনে থেকে শুরু হয়ে মালিবাগ রেলগেটে প্রতিবাদ সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।

বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী সমাবেশে জামায়াতের পক্ষ থেকে ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ দাবি করেন, বাংলাদেশের গণমানুষের মুক্তির জন্য ১০ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করার পরপরই এই আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার অত্যন্ত ন্যক্কারজনকভাবে আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানকে গ্রেফতার করেছে। আমরা এই গ্রেফতারের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে আমিরে জামায়াতের মুক্তির দাবি জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, মূলত জনগণের ১০ দফা দাবি আদায়ের আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করতেই আমিরে জামায়াতকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করছি, সরকারের এই গ্রেফতার, হামলা-মামলা ও ভয়-ভীতি দেখিয়ে দেশের মানুষের মুক্তির জন্য চলমান এ আন্দোলনকে বন্ধ করা যাবে না।

এর আগে, গত ৯ নভেম্বর সিলেট থেকে গ্রেফতার করা হয় ডা. শফিকুর রহমানের ছেলে ডাক্তার রাফাত সাদিককে। গ্রেফতারের পর সিটিটিসির বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট জানায়, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলের প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন রাফাত সাদিক। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে গ্রেফতার হওয়া তিন জঙ্গিকে জিজ্ঞাসাবাদে তার নাম বেরিয়ে আসে।

উল্লেখ্য, ডা. শফিকুর রহমান ১৯৫৮ সালের ৩১ অক্টোবর মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৮৩ সালে সিলেট মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। তিনি ছাত্রজীবনে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সিলেট শহর শাখার সভাপতি ছিলেন। তিনি ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য হন। ডা. শফিক ১৯৮৬ থেকে ’৮৮ পর্যন্ত সিলেট জেলা শাখা জামায়াতের সেক্রেটারি ও ১৯৮৯ থেকে ’৯১ পর্যন্ত সিলেট জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির এবং ১৯৯১ থেকে ৯৮ পর্যন্ত সিলেট জেলা জামায়াতের আমির, ১৯৯৮ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত সিলেট মহানগরী জামায়াতে ইসলামীর আমির হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি ১৯৯৮ সালে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মনোনীত হন। ২০১০ সাল থেকে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল, ২০১১ থেকে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং ওই বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল হন। ২০১৭ থেকে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করছিলেন। ২০১৯ সালে তিনি জামায়াতের আমির পদ পান। শফিকুর রহমানের স্ত্রী ডা. আমিনা শফিক অষ্টম জাতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন।