পল্টন থানায় অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেল, মালিক খুঁজছে পুলিশ

রাজধানীর পল্টন থানায় ৫০ থেকে ৬০টি মোটরসাইকেল পড়ে আছে। গত ৭ ডিসেম্বর বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের পর নয়াপল্টন এলাকা থেকে এসব মোটরসাইকেল তুলে নিয়ে পল্টন থানায় রাখা হয়। সংঘর্ষের সময় ফেলে চলে গিয়েছিলেন জানিয়ে মোটরসাইকেল ফেরত পেতে পল্টন থানায় আবেদনও করেছেন কয়েকজন। তবে পুলিশ বলছে, ফেলে যাওয়া এসব মোটরসাইকেলের অধিকাংশই বিএনপি নেতাকর্মীদের। আর কিছু মোটরসাইকেল স্থানীয় ব্যবসায়ী ও মার্কেটে আসা লোকজনসহ পথচারীদের।

গত ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টন এলাকায় সংঘর্ষের পরে ওই এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ওই দিন রাত ৮টার দিকে নাইটেঙ্গেল মোড় (বিজয়নগর মোড়) থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে পড়ে থাকা অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেল ভ্যানে করে উঠিয়ে নিয়ে যেতে দেখা যায়।

মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী মোটরসাইকেল ফিরে পাওয়ার জন্য পল্টন থানায় আসেন। কিন্তু তাদের এ বিষয়ে পরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। তবে গাড়ির মালিককে কাগজপত্রসহ থানায় হাজির হয়ে মোটরসাইকেল শনাক্ত করতে হবে।

বিএনপির কর্মী-সমর্থদের সঙ্গে সংঘর্ষের দিন সড়কে পড়ে থাকা অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেল জব্দ করে পুলিশ

রাজধানীর নিউমার্কেট গাউছিয়া মার্কেটের কাপড় ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম গত ৭ ডিসেম্বর বেলা ২টার দিকে নয়াপল্টন পলওয়েল মার্কেটের সামনে আসেন একজনের কাছ থেকে পাওনা টাকা নিতে। পরে টাকা নিয়ে নয়াপল্টন পূবালী ব্যাংকের শাখায় টাকা জমা দিতে যাওয়ার পথে বিএনপি’র সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে মোটরসাইকেল ফেলে চলে যান।

ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, পুলিশের গোলাগুলি শুরু হলে জীবনের ভয়ে মোটরসাইকেল ফেলে নয়াপল্টন সমিতি মসজিদ গলিতে চলে যাই। পরে সন্ধ্যা পর্যন্ত বার বার মোটরসাইকেলের আশপাশে ঘোরাফেরা করেছি। কিন্তু পুলিশ রাস্তা বন্ধ করে দিলে আর মোটরসাইকেলে হাত দিতে সাহস দেখাইনি। সন্ধ্যার পরে পুলিশ ফকিরাপুল মোড় থেকে নাইটেঙ্গেল মোড় পর্যন্ত  রাস্তার পাশে পার্কিং করে রাখা মোটরসাইকেল ভ্যানে করে তুলে থানায় রাখে।

সোমবার (১২ ডিসেম্বর) পল্টন থানায় ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল ফিরিয়ে নিতে পল্টন থানায় যোগাযোগ করেন। থানা থেকে বলা হয়, মোটরসাইকেল ফেরত দেওয়ার বিষয়ে এখনও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পাননি তারা। নির্দেশনা পেলে সবাইকে জানানো হবে।

রাজধানীর পল্টন মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সেদিন রাস্তায় ফেলে যাওয়া মোটরসাইকেলের অধিকাংশই বিএনপি নেতাকর্মীদের। আমরা যাচাই-বাচাই করছি। পরে ফিরিয়ে দেওয়া বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানানো হবে।

ওসি সালাউদ্দিন মিয়া বলেন, কয়েকজন মোটরসাইকেল ফিরিয়ে নিতে থানায় যোগাযোগ করেছে। তাদের পরিবেশ-পরিস্থিতি শান্ত হলে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। সেদিন ৫০ থেকে ৬০টি মোটরসাইকেল রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে থানায় রাখা হয়েছে। যেগুলো মামলার আলামত হিসেবে দেখানো হয়নি। যার কারণে মালিকদের ফিরিয়ে দেওয়া হবে। তবে মোটরসাইকেল মালিকদের কাগজপত্রসহ থানায় আসতে হয়েছে।

ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার (এডিসি) এনামুল হক মিঠু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের দিন রাতে বিএনপি পার্টি সামনে থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া মোটরসাইকেলের বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।

মামলার আলামত হিসেবে জব্দ না দেখিয়ে সংঘর্ষের স্থান থেকে কোনও জিনিসপত্র পুলিশ নিতে পারে কিনা জানতে চাইলে তিনি এডিসি মিঠু বলেন, পুলিশ নিয়ে যেতে পারে। কারণ মোটরসাইকেল তাদেরই (বিএনপির নেতাকর্মীদের)। আমরা যাচাই-বাচাই করছি।