রাজধানীর চার থানার শৌচাগার

দিনেও রাতের অন্ধকার, দরজায় কলমের লক

গণশৌচাগার বা পাবলিক টয়লেটের অব্যবস্থাপনা ও অপরিচ্ছন্নতার কারণে হরহামেশাই  বিপাকে পড়তে  হয় সাধারণ মানুষকে, বিশেষ করে নারীদের। অনেক প্রতিষ্ঠানে নারীদের জন্য আলাদা টয়লেট না থাকায় চরম বিপাকে পড়েন তারা। দেখা যায়, টয়লেট আছে তো পানি নেই। বেসিন আছে তো পানির ট্যাব বিকল, লুকিং গ্লাস ভাঙা। আবার অনেক টয়লেটের দরজা ভাঙা। নোংরা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, আর  উৎকট গন্ধ তো আছেই।  ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ও চলতি জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে  রাজধানীর মোহাম্মদপুর, শাহবাগ, রমনা এবং কলাবাগান থানায় সরেজমিনে গিয়ে সেখানকার গণশৌচাগারগুলোর এমন সব চিত্র দেখা গেছে।    

কলম দিয়ে বন্ধ করা হয় রমনা থানার শৌচাগারের দরজা, ছবি: আবদুল হামিদ

রমনা থানার টয়লেটের দরজায় কলম দিয়ে লক

রাজধানীর বেইলি রোডে চার তলা ভবনে চলছে রমনা থানার কার্যক্রম। থানায় প্রবেশ করতেই ডান দিকে ডিউটি অফিসারের কক্ষ, আর বাম পাশে  ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কক্ষ। বাইরে ওসির কক্ষের পাশেই রয়েছে একটি শৌচাগার। সরেজমিনে দেখা যায়, শৌচাগারের দরজার লক ভাঙা,বলপেন ঢুকিয়ে লকের কাজ সারতে হচ্ছে। টিস্যু রাখার হোল্ডার না থাকায় ফ্ল্যাশের ঢাকনার ওপরে রাখা হয়েছে। এছাড়া ফ্লোরের অবস্থাও  নোংরা। যদিও টয়লেটের দেয়ালে লেখা আছে বেশ কিছু সচেতনতামূলক নির্দেশনা।

টয়লেটের এই দুরবস্থা দেখে থানায় সেবা নিতে আসা এক নারী বলেন, একটা থানার শৌচাগার কী করে এত নোংরা থাকতে পারে! অব্যবস্থাপনায় ভরা। লক নাই,ভাঙা। কেউ একজন বলপেন দিয়ে দরজা বন্ধ করার ব্যবস্থা করেছেন। টিস্যু রাখার হোল্ডার নাই। টিস্যু রাখা হচ্ছে ফ্ল্যাশের ওপরে।

রমনা থানার এক কর্মকর্তা বলেন, থানার সব বিষয়ে খোঁজ রাখা হয়। কিন্তু সমস্যা একটু থাকবেই। আমাদের যারা বাইরে ডিউটি করে তারা এবং সেবাগ্রহীতরা ওই শৌচাগারটি ব্যবহার করেন। তবে বিষয়টি জানা ছিল না, খোঁজখবর নিয়ে সুব্যবস্থা করবো।

মোহাম্মদপুর থানার টয়লেটে বেসিন আছে, তবে অচল, ছবি: কবির হোসেন মোহাম্মদপুর থানার টয়লেট নোংরা,অচল বেসিন

রাজধানীর জনবহুল একটি এলাকা মোহাম্মদপুর। সাধারণ ডায়েরি, মামলা এবং বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে প্রতিদিন শত শত মানুষ আসেন মোহাম্মদপুর থানায়। কিন্তু আগত  মানুষের জন্য থানায় ভালো শৌচাগারের ব্যবস্থা নেই। বর্তমানে যেটি রয়েছে, সেটির পরিবেশ নোংরা ও অপরিচ্ছন্।

গত ৩ জানুয়ারি বিকালে গিয়ে দেখা যায়, সেবা নিতে আসা ব্যক্তিদের জন্য বরাদ্দ শৌচাগারটির তিনটি বেসিনের সবকটি বিকল। দীর্ঘদিন পাইপ দিয়ে পানি না পড়ায় বেসিনগুলো নোংরা অবস্থায় পড়ে আছে। এখানে নেই কোনও টিস্যুর ব্যবস্থা। নারী-পুরুষের জন্য আলদা টয়লেটের ব্যবস্থাও নেই।

এ প্রসঙ্গে ডিএমপি মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার দেবাশীষ কর্মকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সুইপারদের দেখভালের অভাবে টয়লেটগুলো কিছুটা নোংরা অপরিচ্ছন্ন থাকতে পারে। নিজেরা একটু সচেতন হলেই এসব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’

শাহবাগ থানার শৌচাগার: দিনে বিরাজ করে রাতের অন্ধকার  

বাংলাদেশ জাতীয় যাদুঘরের উল্টো পাশে অবস্থিত থানা শাহবাগ। থানার আশেপাশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়,ডায়বেটিক হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালরের মতো বড় বড়  সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে এই এলাকায়। ফলে এ থানায় মানুষের যাতায়াতও অনেক বেশি। তবে থানার গণশৌচাগারের অবস্থা নাজেহাল।

গত ৫ জানুয়ারি দুপুরে শাহবাগ থানার গণশৌচাগারে গিয়ে দেখা যায়— থানার মূল ভবনের (পুরোনো) পাশে গণশৌচাগারের অবস্থান। আলোর স্বল্পতার কারণে দুপুরবেলায় মনে হয়েছে যেন সন্ধা নেমে এসেছে। প্রথম দর্শনেই মনে হবে এটি কোনও ভূতুরে ঘর। একটি ট্যাব দিয়ে অনবরত পানি ঝড়ছে। মেঝেতে ময়লা ও নোংরা। নেই কোনও টিস্যুর ব্যবস্থা।টয়লেট কক্ষগুলোর কোনটা নারী আর কোনটা পুরুষের, দরজায় লিখিত নির্দেশনা নেই।

এসব বিষয় নিয়ে কথা হয় শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর মোহাম্মদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘তেমন কোনও অসুবিধা নেই শৌচাগারে আলোর ব্যবস্থা আছে তো!’

কলাবাগান থানায় টয়লেট সংকট

রাজধানীর আরেকটি ব্যস্ততম এলাকা কলাবাগান। বহু সরকারি-বেসরকারি অফিস রয়েছে এই থানার আওতাধীন এলাকায়। গ্রিন রোডের পুরোটাজুড়ে রয়েছে ডজনেরও বেশি হাসপাতাল। পান্থপথ হয়ে বসুন্ধরা সিটি শপিং মহলের ঠিক উল্টোপাশে ডান দিকের গলিতে ৬ তলা ভাড়া ভবনে চলছে কলাবাগান থানার প্রশাসনিক কার্যক্রম।

সরেজমিনে দেখা যায়, একটি ফ্লোরের ডাইনিংয়ে  ডিউটি অফিসারদের বসার জায়গা। পাশেই রয়েছে  নারী-পুরুষের আলাদা হাজত খানা। পুরো  ফ্ল্যাটে   টয়লেট আছে মাত্র একটি। পুলিশের নারী-পুরুষ সদস্যরা সবাই এই টয়লেট ব্যবহার করছেন। বাইরে থেকে সেবা নিতে আসা ব্যক্তিরাও একই টয়লেট ব্যবহার করছেন। অতিরিক্ত মানুষের চাপে টয়লেটটি নোংরা অবস্থায় দেখা গেছে।

কলাবাগান থানার অফিসার ইনচার্জ মো. সাইফুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো থানা ভবন। আমরা ভাড়া করা ফ্ল্যাট বাসায় অফিস করি।  আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আমরা চাইলেও সব সুযোগ-সুবিধা দিতে পারি না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক থানার একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘যারা এখানে সেবা নিতে আসেন, তাদের অনেক কষ্ট করতে হয়। থানাটি আবাসিক এলাকার ভেতরে হওয়ায় সরু রাস্তা এবং  সরু গলি। টয়লেট মাত্র একটি। সবাই এই একটি মাত্র টয়লেট ব্যবহার করি। ফলে সসবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা যায় না।’