বাংলা ট্রিবিউন-ওয়াটারএইড বৈঠকি

‘অপরিচ্ছন্ন শৌচাগার বিভিন্ন রোগের অন্যতম কারণ’

‘দেশে মানুষের পয়োনিষ্কাশন ও শৌচাগারের স্বাস্থ্যগত ব্যবস্থা অনেক বছর ধরে অনুপস্থিত। আমরা ভুলে যাই যে আমরা জীবন বাঁচানোর জন্য খাদ্য গ্রহণ করি, এই খাদ্য যখন বর্জ্য হিসেবে মানবদেহ থেকে বেরিয়ে আসে, তখন যদি এর স্বাস্থ্যসম্পন্ন ব্যবস্থা না করা যায়, তাহলে এটি মানুষের অন্যতম একটি রোগের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। মানসম্মত শৌচাগার যেগুলো আছে, সেগুলো তো চাহিদার তুলনায় খুবই কম। মানুষের জন্য একটি পরিচ্ছন্ন জায়গার ব্যবস্থা থাকতে হবে। এটি নাগরিক অধিকারের মধ্যে পড়ে।’

মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) মুন্নী সাহার সঞ্চালনায় দেশের শীর্ষস্থানীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউন ও ওয়াটারএইডের আয়োজনে ‘নাগরিক গণশৌচাগার চিত্র’ শীর্ষক বৈঠকিতে এসব কথা বলেন বক্তারা।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. লেলিন চৌধুরী বলেছেন, ‘এখন পর্যন্ত দেশের শীর্ষ কর্তাব্যক্তি থেকে শুরু করে নিম্নতম জায়গায় বসবাসরত মানুষের মধ্যে যত পরিকল্পনাই থাকুক না কেন, সবচেয়ে গৌণ বিষয় হয়ে থাকে শৌচাগারের বিষয়টি। ডায়রিয়া, হেপাটাইটিসসহ নানা সংক্রামক রোগ নারী ও পুরুষের শরীরে বাসা বাঁধে। বিশেষ করে, নারীদের মূত্র-সংক্রান্ত ইনফেকশন এবং তা থেকে কিডনি বিকলতার মতো ঘটনাও হচ্ছে।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ বলেছেন, ‘মানসম্মত টয়লেট যেগুলো আছে, সেগুলো তো চাহিদার তুলনায় খুবই কম। সে ক্ষেত্রে আমাদের জন্য এগুলো একটি মডেল হতে পারে কিন্তু পাশপাশি অন্যান্য মডেল আমাদের খুঁজে বের করা দরকার। নগর পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা— তিন জায়গায় নারীদের যে চাহিদা, সেই চাহিদাকে খুব বেশি বিবেচনা না করেও কিন্তু এই নগর উন্নয়ন হয়। এই জায়গায় যেন আমাদের পরিষ্কার একটি ধারণা তৈরি হয়।’

ওয়াটারএইড বাংলাদেশের পলিসি অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি ডিরেক্টর পার্থ হেফাজ সেখ বলেছেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় সরকার বিভাগের সঙ্গে কাজ করছি। তাদের সঙ্গে আমরা বাংলাদেশের পাবলিক টয়লেট অপারেশন্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টের জন্য একটি নীতিমালা তৈরি করছি, যেটি প্রায় শেষ পর্যায়ে আছে। বিমানবন্দর, শপিং মল কিংবা বাস টার্মিনালে পাবলিক টয়লেটে কী কী সুযোগ-সুবিধা থাকতে হবে, নীতিমালায় সেসব রাখার চেষ্টা করেছি। আমরা যেসব পাবলিক টয়লেট করেছি, সেখানে নারী-পুরুষের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

বাংলা ট্রিবিউনের বিশেষ প্রতিনিধি উদিসা ইসলাম বলেছেন, ‘৫০ লাখ নাগরিক একটি জায়গা চায়, যেখানে অর্থের বিনিময়ে হলেও যাতে টয়লেটের কাজটি সারা যায়। ওয়াটারএইড ঢাকায় যে ৩৪টি টয়লেট নির্মাণ করেছে, তা তো ঢাকায় বসবাসরত মানুষের তুলনায় যথেষ্ট নয়। এখানে আরও কাজ করার আছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘শুধু পাবলিক টয়লেট বলতে যে ইউনিটগুলো করা হয় সেগুলো না, মানুষ সাধারণত যেখানে যায় সেগুলোর পরিস্থিতি নাগরিক অধিকারের মধ্যে পড়ে কি না। কারণ মানুষের জন্য একটি পরিচ্ছন্ন জায়গার ব্যবস্থা থাকতে হবে। এটি অধিকারের মধ্যে পড়ে। সেটি কেন আমরা আজ পর্যন্ত নিশ্চিত করতে পারলাম না। এটা সুনির্দিষ্ট একটি প্রতিষ্ঠানের কাজ না।’

এ বৈঠকি সরাসরি সম্প্রচার করেছে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন নিউজ। পাশাপাশি বাংলা ট্রিবিউনের ফেসবুক ও হোমপেজে লাইভ দেখানো হয়েছে এ আয়োজন।