উপমহাদেশের প্রথম দিকের কয়েকটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একটি হচ্ছে ঢাকা কলেজ। ১৮৪১ সালে যাত্রা শুরু। কালের বিবর্তনে ঢাকা কলেজ সদরঘাট থেকে কার্জন হল হয়ে সবশেষ ঠাই পায় নিউমার্কেটের বর্তমান স্থানে। ১৮ একর জায়গার ওপরে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী এই কলেজে নেই পর্যাপ্ত টয়লেট ব্যবস্থা। যা আছে সেগুলোরও ভঙ্গুর অবস্থা। কলেজের টয়লেটগুলোতে প্রায় সময়ই জমে থাকে নোংরা পানি। কোনও টয়লেটের ফ্ল্যাশ কল নষ্ট। আবার উপরের তলাগুলো থেকে নিচ তলায় এসে টয়লেট ব্যবহার করতে হয়। সরেজমিনে দেখা যায়, টয়লেটজুড়ে যত্রতত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে টিস্যু, ছেড়া কাগজ, নষ্ট ট্যাব, ইটের টুকরাসহ নানা ধরনের আবর্জনার স্তুপ।
গত ২১ ডিসেম্বর ঢাকা কলেজের মূল ভবন, উদ্ভিদবিজ্ঞান ভবন, আইসিটি ভবন ও নবনির্মিত লে. শেখ জামাল ভবন ঘুরে দেখা যায়, টয়লেটের দরজার ছিটকিনি ভাঙা। কোথাও বা বদনা নেই। ফ্ল্যাশ থাকলেও তা সচল নয়।
কলেজের দোতলা-বিশিষ্ট মূল ভবন অন্যান্য ভবনের তুলনায় বেশ বড়। দোতলায় টয়লেট আছে মাত্র একটি। বাকি সবগুলো টয়লেটের অবস্থান সিঁড়ির নিচে নিচতলায়। মূল ভবনে ওপর ও নিচতলা মিলে ৯টি গ্যালারিসহ কক্ষ আছে প্রায় অর্ধশতাধিক। এর বিপরীতে টয়লেট মাত্র ৬টি। অডিটোরিয়াম সংলগ্ন আরেকটি টয়লেট রয়েছে। শিক্ষার্থীদের সিঁড়ি বেয়ে নিচে গিয়ে টয়লেটের কাজ সারতে হয়। ভবনটি বেশ পুরোনো হওয়ায় টয়লেটের অবস্থাও বেশ নাজুক। ঠিকভাবে পরিষ্কারও করা হয় না।
লে. শেখ জামাল ভবন এখনও উদ্বোধন না হলেও টয়লেটগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এই ভবনের টয়লেটের পানির ট্যাব দিয়ে অবিরাম পানি পড়তে থাকে। কমোডের ফ্ল্যাশও কাজ করে না। লাইটের সুইচ নষ্ট। বেসিনের কল নষ্ট ও লুকিং গ্লাস এরইমধ্যে উধাও হয়ে গেছে। ভবনটি ১০ তলা হলেও বর্তমানে শুধুমাত্র চতুর্থ তলা ব্যবহার করা হয়। তবে সব টয়লেটের দশা একই।
তিন তলা-বিশিষ্ট আইসিটি ভবন। এখানে দুটি ডিপার্টমেন্ট। এই ভবনে শুধু মাত্র তৃতীয় তলায় টয়লেট রয়েছে। ফলে নিচ তলার শিক্ষার্থীদের তিন তলায় গিয়ে টয়লেটের কাজ করতে হয়। কিন্তু সেই টয়লেটেরও বেসিনের কল নষ্ট। ওয়াশরুমের দরজার সিটকিনি নেই। বিদ্যুতের ভালবগুলো নষ্ট।
উদ্ভিদবিজ্ঞান ভবনটি চার তলা। তৃতীয় ও নিচতলায় শিক্ষার্থীদের ব্যবহারের জন্য একটি করে টয়লেট রয়েছে।
অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী গোপাল চন্দ্র জানান, আমাদের ডিপার্টমেন্ট মেইন ভবনের দ্বিতীয় তলায়। কিন্তু টয়লেট করতে যেতে হয় নিচ তলায়। সেই টয়লেট আবার সিঁড়ির নিচে। মাথা নিচু করে ঢুকতে হয়, আবার একইভাবে বের হতে হয়। তিনি বলেন, ‘টয়লেটের অবস্থা দেখে মনে হয়— প্রতিদিন পরিষ্কার করা হয় না। টয়লেটের জন্য নিচ তলায় যাওয়া-আসা চরম বিরক্তিকর।’
কলেজে সরকারি-বেসরকারি মিলে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী রয়েছেন প্রায় ৯০ জন। কিন্তু তাদের ব্যবহারের জন্য আলাদা কোনও টয়লেট নেই। শিক্ষার্থীদের ব্যবহৃত টয়লেটেই তাদেরও যেতে হয়। কখনও কখনও তারা মসজিদের টয়লেট ব্যবহার করে থাকেন। ফলে নানারকম ভোগান্তি পোহাতে হয় তাদের, এমন অভিযোগ করেছেন কয়েকজন কর্মচারী।
সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হয় কলেজে পরীক্ষা দিতে আসা নারী শিক্ষার্থীদের। ঢাকা কলেজ কেন্দ্রে বিভিন্ন বর্ষের যে পরীক্ষা হয়, তার সবগুলোই ইডেন কলেজের। তৃতীয় বর্ষের সদ্য সমাপ্ত পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী ফারজানা নাদিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঢাকা কলেজে পরীক্ষা দিতে এসে বেশি বেগ পোহাতে হয় টয়লেটের। দেখা যায় যে, নিচতলার হলে অংশ নেওয়া পরীক্ষার্থীদের যেতে হয় ওপর তলার টয়লেটে। আবার ওপর তলার পরীক্ষার্থীদের নিচতলায় যেতে হয়। চরম একটা ভোগান্তি। আইসিটি ভবনের তৃতীয় তলাটা দেখলে ভুতুরে মনে হয়। অথচ ওই ভবনে তৃতীয় তলা ছাড়া আর কোথাও টয়লেট নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ‘মূল ভবনটা তখন ইন্টারের জন্য করা হয়েছিল গ্যালারি আকারে। তাই টয়লেট সংকট। এটা তো এখন আর সমাধান সম্ভব না। নতুন বিল্ডিংয়ের সিকিউরিটি নেই। আর বাইরের লোকেরা যখন পরীক্ষা দিতে আসে, তখন তারাই নষ্ট করে। গত তিন মাসে কয়েকবার ঠিক করা হয়েছিল, কিন্তু বার বার নষ্ট হচ্ছে। কলেজ খোলার আগে আবারও সব চেক করে ঠিকঠাক করা হবে। আমাদের ক্লিনার মাত্র ৬ জন। এত কম সংখ্যক ক্লিনার দিয়ে এত বড় ক্যাম্পাস পরিষ্কার রাখা কঠিন। তবুও আমরা চেষ্টা করছি লোকবল বাড়ানোর।’
উল্লেখ্য, ঢাকা কলেজে ইন্টারমিডিয়েট, অনার্স ও মাস্টার্সসহ বর্তমানে মোট শিক্ষার্থী রয়েছে ১৭ হাজার। এছাড়া নিয়মিত বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষাসহ অন্যান্য পরীক্ষা হয়ে থাকে এখানে।