খুলনা নগরীর গণশৌচাগারের বেশিরভাগই অস্বাস্থ্যকর

খুলনা মহানগরীতে প্রায় ২০টি গণশৌচাগার রয়েছে। এরমধ্যে দুটি আধুনিক ব্যবস্থাপনার হলেও বাকিগুলো সেই পুরোনো আমলের। আধুনিক গণশৌচাগার দুটির বিষয়ে সাধারণ মানুষ বা প্রতিবন্ধী—কোনও পক্ষেরই কোনও অভিযোগ নেই। এগুলোতে রয়েছে পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যবিধির অনুসরণ। কিন্তু বাকিগুলো নিয়ে মানুষের অভিযোগের শেষ নেই। প্রায় প্রতিটি গণশৌচাগারে বিরাজ করছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। দিনের বেলাও থাকে অন্ধকারাচ্ছন্ন। থাকে না পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা। টয়লেটে দরজা থাকলেও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা না থাকায় নারীদের অংশে অনায়াসেই ঢুকে পড়ে পুরুষরা।

শহীদ হাদিস পার্ক ও সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডের আধুনিক টয়লেট এবং সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডের ভেতরের টয়লেট, নতুন রাস্তার মোড় ও যশোর রোডের চশমা মার্কেটের পাশের কমিউনিটি টয়লেটের সরেজমিন এমন চিত্র পাওয়া গেছে।

খুলনা সিটি করপোরেশন পরিচালিত গণশৌচারগুলো হচ্ছে—পশ্চিম ও পূর্ব রূপসা বাসস্ট্যান্ডের ভেতরে, খুলনা ওয়াসা, সোনাডাঙ্গা ট্রাক টার্মিনাল, নতুন রাস্তা মোড়, বিএল কলেজ, জোড়াগেট পাইকারি কাঁচা বাজার, খুলনা রেলস্টেশন, সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড, শেখপাড়া বাজার, মিস্ত্রিপাড়া বাজার, বড় বাজারের মাছ বাজার, বয়রা বাজার, রায়েরমহল ক্রিসেন্ট মার্কেট, শহীদ হাদিস পার্ক (আধুনিক), রুজভেল্ট জেটি সংলগ্ন ও চশমা মার্কেটের পাশের কমিউনিটি টয়লেট। এছাড়া কেডিএ পরিচালিত টয়লেটটি হচ্ছে সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডের সামনের আধুনিক টয়লেট। এছাড়া সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল প্রধান ভবনের নিচে ও পরিবহন কাউন্টারের নিচে রয়েছে আরও দুটি টয়লেট। এসব টয়লেট সিটি করপোরেশন বা কেডিএ পরিচালিত হলেও এগুলোর সবই ইজারা দেওয়া হয়েছে।

সরেজমিন সোনাডাঙ্গা টার্মিনালের প্রধান ভবনের নিচের টয়লেটে দেখা যায়, নারীদের অংশে অহরহ পুরুষ প্রবেশ করছেন। আর নারীরা সেখানে অপেক্ষা করছেন। এখানকার পুরুষ ও নারী—দুই অংশেই অপরিচ্ছন্ন ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ দেখা গেছে। এই টয়লেটে নেই পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা। ভেতরে দিনের বেলায়ও অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকে। সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনালে কেসিসির টয়লেটটি দিনের বেলায় আলো বন্ধ রাখা হয়। জানা গেছে, বিদ্যুৎ বিল সাশ্রয় করার জন্য ইজারাদার লিটন এভাবে টয়লেটটি পরিচালনা করেন। দেখা গেছে, প্রতিটি কক্ষই অপরিচ্ছন্ন। বেসিন থাকলেও তা নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর।

যশোর রোডের চশমা মার্কেটের পাশের কমিউনিটি টয়লেটটি তৈরি হয়েছে সংকীর্ণ জায়গায়। একটাই প্রবেশ পথ হওয়ায় সেবা গ্রহণকারীদের সমস্যায় পড়তে হয়। ভেতরে ফ্লোরজুড়ে সবসময়ই পানি জমে থাকে। ব্যবহারকারীরা এ অবস্থায় বাধ্য হয়েই এখানে আসেন। নতুন রাস্তা মোড়ের টয়লেটটিও অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় দেখা যায়। শুধু তাই নয়, টয়লেটের ভেতরেই ইজারাদারের প্রতিনিধির পরিবারের কাপড়ের স্তূপ দেখা যায়।

নতুন রাস্তা মোড় টয়লেট ইজারাদারের প্রতিনিধি আনিস মহাজন বলেন, তিনি এখানে ১৮ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন। দৈনিক ৯৮ টাকা হিসাবে ইজারা নেওয়া হলেও লোকজন কম আসায় এই পরিমাণ টাকা ওঠে না। ফলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে গেলে পকেট থেকে টাকা ব্যয় করতে হয়। যা করা কঠিন। তবে আমরা নিজেদের উদ্যোগে পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করি।’

সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে কেসিসির টয়লেট ব্যবহারকারী শামীম বলেন, ‘এখানে পানি নেই, আলো নেই, পরিবেশও অপরিচ্ছন্ন। কিন্তু কিছু করার নেই।’ অপর ব্যবহারকারী শাহজাহান বলেন, ‘বাসচালক ও হেলপাররাই এখানে বেশি আসেন। ফলে তারা নিজেরা যেমন চলে, এখানের পরিবেশও তেমনই থাকে। তারা গোসল করতে গিয়ে পায়খানাও করে চলে যায়। চালক ও হেলপাররা নিজের বাসায় পরিচ্ছন্নভাবে চললেও এখানে এসে সেভাবে চলে না।’

এই টয়লেটের ইজারাদার রফিকুল ইসলাম লিটন। তার  প্রতিনিধি মো. মাসুম এখানেই থাকেন। মাসুম দাবি করেন, ‘শৌচাগার প্রতিদিন অন্তত দুবার পরিষ্কার করা হয়।’ তিনি স্বীকার করেন, বিদ্যুৎ বিল সাশ্রয়ের জন্য দিনের বেলা লাইট বন্ধ রাখা হয়।

সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনালের প্রধান ভবনের নিচের টয়লেট ব্যবহারকারী এক নারী নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘এখানে দেখলেন তো মহিলা টয়লেটে পুরুষ ঢুকে পড়ছে। আর ভেতরে বদনা নেই।’ এই টয়লেট পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ইজারাদারের কর্মী নিজের নাম প্রকাশে রাজি হননি। তিনি বলেন, নিজেরাই টয়লেট পরিষ্কার করি। লোকজন এখন কম আসে, ইজারার টাকাই ওঠে না। এ অবস্থায় স্বাস্থ্যকর উপায়ে পরিচ্ছন্ন রাখা কঠিন।

যশোর রোডের  চশমা মার্কেটের পাশের কমিউনিটি টয়লেট ব্যবহারকারী মো. হাসান বলেন, ‘কমিউনিটি টয়লেট নাম হলেও কমিউনিটির জন্য এখানে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নেই। পানি নেই। কম জায়গা হওয়ায় পানি ছিটে গায়ে লাগে। আধুনিক যুগে এমন অস্বাস্থ্যকর টয়লেট থাকা উচিত না।’

‘কমিউনিটি টয়লেটের’ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা মো. আলম বলেন, ‘এটি সংস্কার করা প্রয়োজন। পরিষ্কার করা হলেও বেশিক্ষণ তা পরিচ্ছন্ন রাখা যায় না। জুতা স্যান্ডেল বাইরে রাখার জায়গা না থাকায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়।’

কেসিসির সম্পত্তি শাখার কর্মকর্তা নুরুজ্জামান তালুকদার বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের আওতায় ১৭টি পাবলিক টয়লেট রয়েছে। এরমধ্যে একটি নতুন টয়লেট। বাকিগুলো পুরোনো। সবগুলোই আধুনিক প্রকল্পের আওতায় রয়েছে। পুরোনোগুলোতে কিছু সমস্যা আছে। আধুনিক করা হলে আর সমস্যা থাকবে না।’