প্রকাশ বেশি কবিতার, কাটতি উপন্যাস ও প্রবন্ধের

বইমেলায় পাঠকের চাহিদা মেটাতে প্রতিদিনই প্রকাশকরা মেলায় আনছেন নতুন বই। বাংলা একাডেমি থেকে পাওয়া তথ্য মতে, মেলায় বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত নতুন বই এসেছে ৭৬৩টি। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি বই কবিতার। সংখ্যায় তা ২২০টি।

কবিতার বই বেশি হলেও পাঠকের চাহিদা বেশি উপন্যাস ও প্রবন্ধের। মেলার নবম দিন প্রকাশক ও বিক্রয়কর্মীদের সাথে কথা বলে এমন তথ্যই জানা যায়। প্রকাশক ও বিক্রয়কর্মীরা জানান, মেলা শুরু হওয়ার পর থেকে ক্রমেই বিক্রি বাড়ছে। পাঠকরা মেলায় ঘুরে নিজেদের পছন্দ মতো বই কিনছেন। আর পাঠকের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে উপন্যাস ও প্রবন্ধ। এছাড়া অন্য বইয়ের চাহিদাও রয়েছে মোটামুটি। তবে কবিতার চাহিদা খুব একটা নেই বলে তারা জানান।

রাজনৈতিক প্রবন্ধের প্রতি পাঠকের ঝোঁক বেশি, বিশেষ করে রাজনৈতিক স্যাটায়্যার। আর উপন্যাসের মধ্যে রোমান্টিক ও ঐতিহাসিক বিষয়গুলোর চাহিদা বেশি।IMG_20230209_183820

মেলায় কথাপ্রকাশের স্টল ইনচার্জ জাফিরুল বলেন, আমাদের এখানে মূলত প্রবন্ধগুলোই বেশি বিক্রি হচ্ছে। এর পাশাপাশি উপন্যাস, গল্পও ভালোই বিক্রি হচ্ছে। সার্বিকভাবে মেলায় উপন্যাসের চাহিদাই বেশি।

কাকলী প্রকাশনীর স্টল ইনচার্জ রেজাউল করিম বলেন, আমাদের এখানে উপন্যাস বেশি বিক্রি হচ্ছে। নির্মলেন্দু গুণের বই ছাড়া অন্য কবিতার বই তেমন বিক্রি হচ্ছে না। উপন্যাসের পাঠক বেশি, তারা এসে পছন্দের লেখকের উপন্যাস খোঁজেন। কেউ কেউ লিস্ট ধরে উপন্যাস কেনেন।

অন্যপ্রকাশের বিক্রয়কর্মী নাহিদ হাসনান বলেন, আমাদের প্যাভিলিয়নে উপন্যাসের চাহিদা বেশি। তবে হুমায়ুন আহমেদের উপন্যাসের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এরপর সাদাত হোসাইন, মৌরি মরিয়মসহ নতুন কিছু লেখক আছেন, তাদেরও পাঠক তৈরি হচ্ছে।

বাংলাপ্রকাশের বিক্রয়কর্মী তাহসিন বলেন, মেলার শুরু থেকেই বিক্রি ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। মোটামুটি কয়েক ধরনের বই বেশি বিক্রি হচ্ছে। তারমধ্যে উপন্যাস সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে। কিশোর ও রোমান্টিক উপন্যাসের চাহিদা বেশি দেখা যাচ্ছে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের উপন্যাসের চাহিদা আমাদের এখানে বেশি।

জ্ঞানকোষ প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী হিমন হোসেন বলেন, আমাদের প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে এবার মেলায় উপন্যাস ও প্রবন্ধের বিক্রি বেশি। প্রবন্ধদের মধ্যে মহিউদ্দিন মোহাম্মদের আধুনিক গরু রচনা সমগ্রসহ কয়েকটি রাজনৈতিক প্রবন্ধের চাহিদা বেশি।IMG_20230209_184235

নতুন বই

৯ ফেব্রুয়ারি বইমেলায় নতুন বই এসেছে ১২৩টি। এরমধ্যে গল্প ২২, উপন্যাস ২৫, প্রবন্ধ ৬, কবিতা ৪৬, গবেষণা ২, ছড়া ১, জীবনী ৩, রচনাবলি ১, মুক্তিযুদ্ধ ২, বিজ্ঞান ১, ভ্রমণ ২, ইতিহাস ৪, অনুবাদ ২, সায়েন্স ফিকশন ১ ও অন্যান্য বিষয়সংক্রান্ত বই এসেছে ৩টি।

মেলার নিয়মিত আয়োজন

বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় জন্মশতবার্ষিকীর শ্রদ্ধাঞ্জলি: কবীর চৌধুরী এবং জন্মশতবার্ষিকীর শ্রদ্ধাঞ্জলি: সাংবাদিক-সাহিত্যিক জহুর হোসেন চৌধুরী শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এসময় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আবদুস সেলিম ও জাহীদ রেজা নূর। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন কাজল বন্দ্যোপাধ্যায়, খায়রুল আলম সবুজ, মনজুরুল আহসান বুলবুল এবং মুস্তাফিজ শফি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শফি আহমেদ।

প্রাবন্ধিকদ্বয় বলেন, এক জীবনে কত যে বিপুল কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকা যায় তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ কবীর চৌধুরী। তিনি বাংলা-ইংরেজিতে যেমন মৌলিক লেখা লিখেছেন তেমনি অনুবাদও করেছেন এবং তার জীবদ্দশায় কমপক্ষে দশটি সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। কবীর চৌধুরী যথার্থ অর্থেই জাতীয় অধ্যাপক ছিলেন, কারণ তিনি ছিলেন সবারই শিক্ষক হবার গুণসম্পন্ন এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। অপরদিকে সাংবাদিক জহুর হোসেন চৌধুরী বর্ণাঢ্য সাংবাদিকতা জীবনের লড়াইয়ের কালটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। যৌবনে বামধারার প্রতি আকৃষ্ট জহুর হোসেন চৌধুরীর সাংবাদিকতার বৈশিষ্ট্য হলো বস্তুনিষ্ঠতাকে হেয় না করে সত্যকে তুলে ধরা।

আলোচকবৃন্দ বলেন, কবীর চৌধুরী এবং জহুর হোসেন চৌধুরী উভয়েই প্রগতির পথিক। তারা একটি শতাব্দীজুড়ে স্বাধীনতা, সাম্য ও অসাম্প্রদায়িকতার জন্য লড়াই করে গেছেন। শিক্ষা বিস্তার, সাংবাদিকতা এবং সমাজ-রাষ্ট্রের সামগ্রিক ইতিবাচক বিকাশের জন্য তাদের সংগ্রাম কখনও বিস্মৃত হবার নয়।

সভাপতির বক্তব্যে শফি আহমেদ বলেন, কবীর চৌধুরী এবং জহুর হোসেন চৌধুরীকে স্মরণ আমাদের জাতিগত কর্তব্য। তারা যে প্রতিকূল পরিবেশে আমাদের সবার জন্য ইতিবাচক সমাজ গড়ার সংগ্রাম করেছেন তা আজকের প্রজন্মকে স্মরণে রাখতে হবে।

এছাড়া লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন মালেক মাহমুদ, সুপা সাদিয়া, খান মুহাম্মাদ রুমেল, গিরীশ গৈরিক।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন বিমল গুহ, শিক্ষা বাউল এবং রমজান মাহমুদ। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী রাজিয়া রহমান, জাহান বশির এবং এএসএম সামিউল ইসলাম। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী কাঙ্গালিনী সুফিয়া, আব্দুর রহমান, বশির উদ্দিন সরকার, সুহান বিশ্বাস, কোহিনুর আকার গোলাপী, মো. নূরুল ইসলাম, বিমল বাউল, সুধীর মণ্ডল, অমিয় বাউল।

দশমদিনের সময়সূচি

১০ ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার বইমেলার দশম দিন মেলা শুরু হবে সকাল ১১টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। সকাল ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত মেলায় শিশুপ্রহর চলবে।

শিশুদের জন্য প্রতিযোগিতা

অমর একুশে উদ্‌যাপনের অংশ হিসেবে সকাল সাড়ে আটটায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতা উদ্বোধন করবেন শিল্পী হাশেম খান। এছাড়াও সকাল সাড়ে ৯টায় শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতার প্রাথমিক বাছাই অনুষ্ঠিত হবে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে।

বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে জন্মশতবার্ষিকী শ্রদ্ধাঞ্জলি: শিল্পী সফিউদ্দীন আহমেদ এবং জন্মশতবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি: এসএম সুলতান শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন মলয় বালা এবং সৈয়দ নিজার। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন সুশান্তকুমার অধিকারী, ইমাম হোসেন সুমন, নাসির আলী মামুন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন মুনতাসীর মামুন।