বাধা পেরিয়ে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বানে পর্দা নামলো ব্র্যাক হোপ ফেস্টিভ্যালের

কবিতা, গান, অংশগ্রহণমূলক নানা কর্মশালা, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা, তাগা ফ্যাশন অ্যাওয়ার্ড, আমরা নতুন ইয়াং চেঞ্জমেকার্স অ্যাওয়ার্ড, নানা দেশের শিক্ষার্থীদের সমবেত গানসহ মঞ্চে নানান উপস্থাপনায় পর্দা নামলো তিন দিনব্যাপী ব্র্যাক হোপ ফেস্টিভ্যালের। শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) আর্মি স্টেডিয়ামে আহ্বান জানানো হলো শত বাধা পেরিয়ে এগিয়ে যাওয়ার।

ব্র্যাক জানায়, আগামীর বাংলাদেশ নিয়ে আশা আর সম্ভাবনার কথাই মূলত ধ্বনিত হলো এই উৎসবে। এই দেশ বিনির্মাণে যারা ভূমিকা রেখেছেন, যাদের শ্রম, ঘাম, আর হার না মানার শক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ – শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে তাদের প্রতিও। ব্র্যাক হোপ ফেস্টিভ্যালে নানা আয়োজনে ধ্বনিত হয়েছে তারুণ্যের জয়গান, শত বাধা পেরিয়ে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান আর সম্ভাবনার বাংলাদেশের কথা।

শেষ দিনের সব আয়োজনের কেন্দ্রে ছিল তারুণ্যের জয়গান। দিনটি শুরু হয় ব্র্যাক স্কুল, কিশোর উন্নয়ন ক্লাব, ব্র্যাক কুমন ও একমাত্রা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের প্রদর্শিত কবিতা, গান ও নাচের পরিবেশনার মাধ্যমে। 330558253_742541634189479_5192505612029504680_n

উৎসবের শেষ দিনটিকে উৎসর্গ করা হয় বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম ও  চেঞ্জমেকারদের প্রতি যারা নিজ নিজ প্রকল্পের মাধ্যমে কমিউনিটির সেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। পুরষ্কার প্রদানের মাধ্যমে সম্মানিত করা হয় তাদের। তরুণ প্রজন্মের চেঞ্জমেকারদের দেওয়া হয় ‘আমরা নতুন ইয়াং চেঞ্জমেকারস অ্যাওয়ার্ড’।330655906_513203294175638_4727824112731649009_n

এছাড়া বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নারীদের এই প্রথমবারের মতো দেওয়া হয় ‘তাগা আউটস্ট্যান্ডিং ইয়াং প্রফেশনালস অ্যাওয়ার্ড’।

ভাষার মাসে বিশ্বের সব মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ব্র্যাক ইউনিভারসিটির দেশি-বিদেশি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ভাষায় সংগীত পরিবেশনা মুগ্ধ করে দর্শকদের। নেমেসিস, আর্টসেল, নগর বাউল জেমসরাও মঞ্চ মাতান এদিন।

মঞ্চে গান গাইছেন জেমস। ছবি: সাজ্জাদ হোসেন330704122_1200565124154072_6874496460881343754_nব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক শামেরান আবেদ বলেন, ‘আমরা মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার, জ্ঞান, দক্ষতা ও অর্থনৈতিক সক্ষমতার সুযোগ তৈরি করে তাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলি। আমাদের লক্ষ্য মানুষকে স্বনির্ভর করে তোলা যাতে তিনি নিজেই নিজের জীবন পরিবর্তনের দায়িত্ব নিতে পারেন। এশিয়া ও আফ্রিকায় ১০ কোটিরও বেশি মানুষ তাদের জীবনমান পরিবর্তনের লড়াইয়ে ব্র্যাকের অংশীদার হয়ে কাজ করছেন। আশা করি সমতাপূর্ণ পৃথিবী গড়ে তোলার এই লড়াইয়ে আপনারা আমাদের পাশে থাকবেন।’330339083_645836134017473_4279305306864531836_n

সমাপনী বক্তব্যে সবাইকে ধন্যবাদ জানান ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্‌।

এদিন সব শেষে সংগীত শিল্পী জেমস-এর জমকালো পরিবেশনায় উন্মাতাল হয়ে উঠে পুরো স্টেডিয়াম প্রাঙ্গণ।330309720_578976453824095_8354929032477588765_n

শেষ দিনে আরও ছিল জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা। পুরো পৃথিবী এখন জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় করণীয় এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বৈশ্বিক বাস্তবতার সঙ্গে সময়োপযোগী অভিযোজন কৌশল নিয়ে ‘সাসটেইনেবিলিটি: ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড এডাপটেশন স্ট্র্যাটেজি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। দৈনিক প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি ইফতেখার মাহমুদের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্‌, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট  সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য কৌশল বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক জয়নব ফারুকী আলী, আগা খান পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য কৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খন্দকার হাসিবুল কবির, ব্র্যাকের ক্লাইমেট চেঞ্জ প্রোগ্রামের পরিচালক ড. মো. লিয়াকত আলী, ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব এডুকেশনাল ডেভেলপমেন্টের (বিআইইডি) ডিজাইন লিড এমারেল্ড উপমা বৈদ্য ও ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের জলবায়ু অ্যাক্টিভিস্ট ইমরান হোসেন।330600845_1273104996938739_2239808136433662155_n

330594998_512110987739136_3818969420129666935_nব্র্যাক জানায়, গত অর্ধশতকে ছোট ছোট উদ্যোগ আর আশার আলোর মশাল জ্বেলে নিজেদের জীবন পাল্টে দিয়েছেন হাজারও মানুষ। তাদের গল্পগুলো তুলে ধরার মাধ্যমে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করা এবং শিক্ষা, আর্থিক ক্ষমতায়ন, নারী-পুরুষের সমতা, জলবায়ু পরিবর্তন, ও মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি ও আচরণ পরিবর্তনের বার্তা দিয়ে শেষ হলো তিন দিনের এই আয়োজন।

ছবি: সাজ্জাদ হোসেন