শ্রমজীবী মানুষের জন্য মেহমানখানার ইফতার

বরাবরের মতো এবারও পবিত্র রমজানে শহরে খেটে খাওয়া, হতদরিদ্র ও অসহায় মানুষের জন্য বিনামূল্যে ইফতারির আয়োজন করছে মেহমানখানা। বিশেষ করে দিনমজুর, রিকশাচালক, ফুটপাতের ছিন্নমূল ও নিরাপত্তাকর্মীসহ স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য দৈনিক খাবারের আয়োজন করে তারা।

জানা যায়, সপ্তাহে পাঁচ দিন ছোলা, মুড়ি, খেজুর, চিড়া, জিলাপি ও শরবত দিয়ে ইফতারির আয়োজন করা হবে। শুক্র ও শনিবার বিশেষ খিচুড়ি খাওয়ানোর আয়োজন রাখা হয়েছে।

করোনা মহামারির সময় রাজধানীর ৫/১ লালমাটিয়া, ব্লক ডি-তে ১১ তরুণের উদ্যোগে চালু হয় এই ‘মেহমানখানা’। রমজান মাস ছাড়াও সারা বছর শুক্রবার রাতে নিরন্ন মানুষের জন্য মেহমানখানার পক্ষ থেকে থাকে বিনামূল্যে খাবার আয়োজন।

বিকাল থেকেই শুরু হয় খাওয়ানোর বিশাল আয়োজন। রাস্তার পাশে ফুটপাতে সারি বেঁধে চলে তাদের ইফতারি বিতরণ।

আয়োজকরা জানান, রমজানের শুরুতে হাজারখানেক মানুষের জন্য ইফতারির ব্যবস্থা করেন। পরবর্তী সময়ে সেই সংখ্যা বাড়ে।

এ বিষয়ে মেহমানখানার চেয়ারম্যান আছমা আক্তার লিজা বলেন, এবারের রমজানের আয়োজন প্রতিবছরের মতোই। প্রথম দিকে আমাদের রোজাদার মেহমান কম থাকে। আমরা প্রথম দিন এক হাজার লোকের আয়োজন করি। আগামীকালও (শনিবার) আমাদের এক হাজার লোকের প্রস্তুতি আছে। দিনে দিনে আমাদের মেহমানের সংখ্যা বাড়তে থাকে। তিন থেকে পাঁচ হাজার লোকের ইফতারি করানোর নিয়ত আমরা রাখি।

পরিচিতজনের সহযোগিতায় মেহমানখানার কার্যক্রম চলে জানিয়ে লিজা বলেন, করোনায় যেমন অনেক মানুষের উৎসাহ ছিল, অনেকে চাল-ডাল-আলু-পেঁয়াজ কিনে দিয়েছিল, এবার সেই উৎসাহ এখনও দেখা যাচ্ছে না। কিছু খুব কাছের মানুষ নিভৃতে ছোলা-চিনি-মুড়ি কিনে দিচ্ছে। তারা প্রচারণায় আসতে চান না। একেবারে ব্যক্তিগত জায়গা থেকে কিছু মানুষ সহযোগিতা করছে। কিন্তু বড় কোনও করপোরেট হাউস কিংবা কোনও ব্যক্তি এককভাবে পুরো মাস বা রোজার যেকোনও ১০ দিন খরচ চালানোর জন্য আসেনি। যেমনটা করোনার সময় দেখা গিয়েছিল। তবে দেখা যাক, আগে আমরা শুরু করি।

বরাবরের মতো মেহমানখানায় ইফতার করানোর জন্য স্বেচ্ছাসেবীরা প্রস্তুত আছেন জানিয়ে লিজা বলেন, আমরা ১৮ জন ভলান্টিয়ার নিয়ে মিটিং করেছি। তাদের সবাই এখন কর্মব্যস্ত। তাও তারা বলেছেন সহযোগিতা করবেন। আমরা মানুষকে ইফতারি করাতে পারবো, এইটা অনেক ভাগ্যের বিষয়।

মধ্যবিত্ত শ্রেণিরও আগমন ঘটে মেহমানখানায় মন্তব্য করে চেয়ারম্যান লিজা বলেন, এবার জিনিসপত্রের দাম অনেক বেশি। আমাদের নিয়মিত আয়োজনে প্রতি শুক্র ও শনিবার এখানে যে খাবারটা হয়, সে সময়টা দেখি অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ আসে। তারা এখানে বসে খেতে পারে না। অনেক নারী ঘোমটা দিয়ে আসেন, অনেক পুরুষ দূরে দাঁড়িয়ে থাকেন। আমাদের ভলান্টিয়াররা তাদের কাছে গিয়ে ইফতারি দিয়ে আসেন। কারণ মধ্যবিত্তের অনেক যন্ত্রণা, অনেক কষ্ট। আমরা যারা মধ্যবিত্ত আছি, তারা হাতও পাততে পারি না, ক্ষুধাও সহ্য করতে পারি না।