নারীর ক্ষমতায়ন ও সমতা প্রতিষ্ঠায় পরবর্তী বাজেটে সুনির্দিষ্ট প্রকল্প গ্রহণের আহ্বান

নারীর ক্ষমতায়ন ও সমতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পরবর্তী বাজেটে আরও সুনির্দিষ্ট কিছু প্রকল্প গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। সংগঠনি বলছে, জেন্ডার বাজেট নিয়ে আরও কাজ করার আছে।

বুধবার (১৪ জুন) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ঘোষিত জাতীয় বাজেটের জেন্ডার সংবেদনশীলতা বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বক্তারা। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পক্ষ থেকে ঘোষিত জাতীয় বাজেটে জেন্ডার সংবেদনশীলতা বিশ্লেষণপূর্বক সংগঠনের প্রতিক্রিয়া উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা।

সংগঠনের পক্ষে উপস্থাপিত মূল বক্তব্যে বলা হয়, বাজেট বিশ্লেষণে যে ১৬টি ইন্ডিকেটর ব্যবহার করা হয় তার বিচার বিশ্লেষণে জেন্ডার লেন্স কতটা ব্যবহার করা হচ্ছে তা দেখার আছে। জেন্ডার বাজেট বিচার বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে সঠিক জেন্ডার লেন্স ও জেন্ডার সংবেদনশীলতার ইন্ডিকেটরসমূহ ব্যবহার করতে হবে; মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে, এই মন্ত্রণালয়কে ঢেলে সাজাতে হবে; অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় জোরদার করতে হবে; নারীদের জন্য সরাসরি কাজ করা মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে; এসব মন্ত্রণালয়ের কাজের পরিধি বৃদ্ধি করতে হবে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, খাদ্য, জনপ্রশাসন এবং সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জেন্ডার বান্ধব প্রকল্প কতগুলো এবং প্রকল্পগুলো কতটা জেন্ডার সংবেদনশীল দেখতে হবে। 

বক্তব্যে আরও বলা হয়, জেন্ডার নিয়ে কথা বলার সময় এসডিজি, নারী উন্নয়ন নীতিমালা, ৮ম পঞ্চম বার্ষিকী পরিকল্পনাকে বিবেচনায় নিতে হবে, জেন্ডার বাজেট প্রণয়নের ১ মাস আগে প্রতিটি প্রকল্পের সঠিক পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন করতে হবে ; ১৬টি ইন্ডিকেটরের উৎকর্ষ সাধনের জন্য গুণগতভাবেও পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন করতে হবে; জেন্ডার বৈষম্যমূলক রীতিনীতি দূরের জন্য কাজ করতে নীতি সহায়তার পাশাপাশি বরাদ্দ থাকার দরকার আছে। বাল্যবিয়ে, নিরাপত্তার অভাব, অপ্রদর্শিত কাজ— এখানে নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে বড় ধরনের কাজ করার সুযোগ আছে, সেই এজেন্ডা বাজেটে আনতে হবে বলে উল্লেখ করা হয়। পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়নের ও সমতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পরবর্তী বাজেটে আরও সুনির্দিষ্ট কিছু প্রকল্প গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়। 

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, জেন্ডার বাজেটে নারীর জন্য কোনও বরাদ্দ থাকে না। নারী-পুরুষের বৈষম্য কমিয়ে আনতে বরাদ্দকৃত বাজেট কীভাবে ভূমিকা রাখবে; সেটাই জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেট। নারী পুরুষের বৈষম্য চিহ্নিত করে বরাদ্দকৃত বাজেট কীভাবে তা দূর করবে, আজকে তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বে কীভাবে নারীকে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলা হবে, নারীর প্রতি সহিংসতা দূর করতে, প্রচলিত বৈষম্যমূলক রীতিনীতি দূর করতে কী ভূমিকা রাখছে; এসব পরিপ্রেক্ষিতকে বিবেচনায় রেখে জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেট বাস্তবায়ন  ও মনিটরিং মেকানিজম তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে মহিলা পরিষদ। 

মডারেটরের বক্তব্যে ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন, সমতা প্রতিষ্ঠা, বৈষম্য দূরের জন্য দরকার শক্তিশালী নারী আন্দোলন। নারী আন্দোলনের কারণে জেন্ডার বাজেট এসেছে। সামাজিক রীতিনীতি এখনও জেন্ডার বান্ধব না, জেন্ডার বাজেট হলেও তা নারীর ক্ষমতায়নকে তরান্বিত করতে পারছেনা। যে সকল প্রকল্প নারীদের উন্নয়নে ভূমিকা রেখে যাচ্ছে তার জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে। 

সংবাদ সম্মেলনের সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের আন্দোলন সম্পাদক রাবেয়া খাতুন শান্তির সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।