সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন: ভোক্তা ডিজি

ওয়াসা একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। ভোক্তা অধিদফতরও সরকারি প্রতিষ্ঠান। আমাদের কাছে ওয়াসা নিয়ে অনেক অভিযোগ আসে। কিন্তু আরেকটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়ায় বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান।

মঙ্গলবার (২০ জুন) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে বাংলাদেশ সাধারণ নাগরিক সমাজ আয়োজিত ‘পানির অপচয় রোধ ও এলাকাভিত্তিক পানির মূল্য নির্ধারণে নাগরিক মতামত’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

শফিকুজ্জামান বলেন, ওয়াসার দুর্নীতি রোধে শতভাগ প্রযুক্তিবান্ধব মিটার ব্যবস্থা চালু করতে হবে। সেই সঙ্গে পানির লিকেজ বন্ধ, এলাকাভিত্তিক নজরদারি জোরদার, পানির অপচয় রোধে নাগরিক সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। ওয়াসা একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। ভোক্তা অধিদফতরও সরকারি প্রতিষ্ঠান। আমাদের কাছে ওয়াসা নিয়ে অনেক অভিযোগ আসে। কিন্তু আরেকটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তাই যাতে অভিযোগ না আসে, সে ব্যাপারে ওয়াসাকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কারণ ১০টি নাগরিক সেবার মধ্যে অন্যতম ঢাকা ওয়াসা।

তিনি বলেন, বর্তমানে ওয়াসা অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছে সত্য। কিন্তু নাগরিকদের সঙ্গে একটি দূরত্ব তৈরি হওয়ায় ওয়াসা ইমেজ সংকটে রয়েছে। এ জন্য ওয়াসা কর্তৃপক্ষকে নাগরিক সচেতনতা গড়তে বেশি বেশি সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। 

তিনি বলেন, বসুন্ধরা এলাকায় ওয়াসার এক মিটার লাইন সঞ্চালন না থাকা সত্ত্বেও ওয়াসা বিল পায়। এটিও ভেবে দেখা দরকার। ওয়াসার কিছু দুর্নীতিবাজ মিটার রিডারের সঙ্গে কিছু ব্যবহারকারী নাগরিকও দায়ী। আর এই দুর্নীতির ফলে ওয়াসা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়।

তিনি আরও বলেন, আমি জাপানে দেখেছি সেখানে যতক্ষণ রুমে থাকবে, ততক্ষণ রুমে বিদ্যুৎ থাকে। রুম থেকে বেরিয়ে গেলে বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে যায়, এটা সেন্সর সিস্টেম। তবে সেন্সর সিস্টেম আমাদের দেশে ব্যয়সাপেক্ষ। আমরা ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ হবো। সেই লক্ষ্যে দেশের সব কার্যক্রম চলছে। স্মার্ট বাংলাদেশ হতে হলে আমাদের পানির অপচয় রোধ করতে হবে।

ঢাকা ওয়াসার বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক উত্তম কুমার রায় বলেন, আইএমএফ পানিতে ভর্তুকি দিতে সরকারকে বারংবার নিষেধ করছে। আমাদেরও ভর্তুকি তুলে নিতে চাপ দিচ্ছে। কিন্তু সরকার ও ওয়াসা কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত ভর্তুকি অব্যাহত রেখেছে। আমি নিজে যদি অন্যায় করে থাকি, তাহলে আমাকে ওয়াসা থেকে বের করে দেওয়ার জন্য প্রয়োজনে আন্দোলন করেন, বের হয়ে যেতে বলেন। কিন্তু ওয়াসা যদি বেসরকারি খাতে চলে যায়, এক রিডার পানি কত টাকায় খাবেন, তা একবার ভেবে দেখেন। তাই কারও সমালোচনা করতে গিয়ে ওয়াসাকে ধ্বংস করবেন না।

পানি ও নদী নিয়ে গবেষণাকারী আমিনুল রসুল বলেন, ঢাকা-গুলশান, বনানী, ধানমন্ডির বাসিন্দাদের পানির ব্যবহার হিসাব করলে দেখা যাবে এসব পানির ব্যবহার সবচেয়ে বেশি অপচয়ের পরিমাণও বেশি। তাই এসব এলাকায় পানির দাম ভিন্ন হওয়া জরুরি।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস, বাংলাদেশ সাধারণ নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ, এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সাবেক সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ, স্বাধীনতা পার্টির চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজু, তরুণ সংঘের চেয়ারম্যান ফজলু হক, সোহেল মৃধা প্রমুখ।