আধা ঘণ্টার পথ শেষ হচ্ছে না দুই ঘণ্টায়ও

রাজধানীতে ঈদের আমেজ চলে এসেছে পুরোপুরি। আজ মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) থেকে সরকারিভাবে ঈদের ছুটি শুরু হয়েছে। ঘরমুখী মানুষেরা ফিরতে শুরু করেছেন নিজ নিজ বাড়িতে। কিন্তু পথের যানজটের কারণে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। আধা ঘণ্টার পথ তারা পেরোতে পারছেন না দুই ঘণ্টায়ও।

রাজধানী থেকে বের হওয়ার অন্যতম এক পথ হচ্ছে গাবতলী। কিন্তু গাবতলীতে পশুর হাট থাকায় সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজট। মঙ্গলবার (২৭ জুন) সরেজমিন দেখা যায় রাজধানী থেকে বেরোনোর মুখে যানজটের চিত্র।

যানজটে ঘরমুখো যাত্রীরা পড়েছেন বিপাকে

সাভার রুটে নিয়মিত যাতায়াত করা যানবাহনগুলো পড়েছে ভোগান্তির কবলে। এই রুটে চলাচল করা বসুমতী বাসের হেলপার মনির বলেন, মিরপুর এক নম্বর থেকে মাজার রোড পর্যন্ত আসতে আমার দুই ঘণ্টা সময় লাগলো। এখনও গাবতলী পৌঁছাতে পারি নাই। যেখানে আমার মিরপুর এক নম্বর থেকে হেমায়েতপুর যেতে সময় লাগে আধা ঘণ্টা।

কল্যাণপুর থেকে শুরু হয়ে যানজট চলে গেছে আমিনবাজার সেতুর শেষ পর্যন্ত

যেসব যাত্রী গাবতলী পর্যন্ত যাবেন তারা অনেকেই বাস থেকে নেমে হেঁটে রওনা হয়েছেন গন্তব্যে। এমনই এক ব্যক্তি শফিক। তিনি বলেন, আমি যাবো গরুর হাটে। তাই বাসে রওনা হয়েছিলাম। টেকনিক্যাল মোড়ে প্রায় ২০ মিনিট জ্যামে আটকে থাকার পর এখন হেঁটেই যাচ্ছি।

গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে যেসব বাস ঢাকা থেকে বের হবে সেসব বাসকে আটকে থাকতে হয়েছে জ্যামে। আর দূরপাল্লার যাত্রীদের বাস টার্মিনাল পর্যন্ত পৌঁছাতেই পড়তে হয়েছে ভোগান্তিতে। অনেকেই নিজেদের ব্যাগ ও মালামাল নিয়ে হেঁটেই রওনা হয়েছেন বাস টার্মিনালের উদ্দেশে।

দূরের গন্তব্যের যাত্রীরা অনেকেই বাস ধরতে হাঁটতে শুরু করেন

ঈদের ছুটিতে রংপুরে যাচ্ছেন রফিকুল আলম। তিনি বলেন, আমি থাকি আদাবরে। আজ বাড়ি যাবো বলে আগেই টিকিট কেটে রেখেছিলাম। আসার সময় অনেকক্ষণ জ্যামে বসে থাকতে হয়েছে। কষ্ট করে টেকনিক্যাল পার করেছি। এখন হেঁটেই যাচ্ছি বাসস্ট্যান্ডে। সঙ্গে ব্যাগ কম থাকলে আরও আগেই বাস থেকে নেমে যেতাম।

পশুর হাটকে কেন্দ্র করে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় ছিল যানজট

গাবতলী থেকে থেকে বের হওয়ার কিংবা গাবতলী দিয়ে ঢাকায় ঢোকার পথে জ্যামের মূল কারণ গাবতলীর পশুর হাট। ঈদের ছুটি শুরু হওয়ায় পশুর হাটে মানুষের আনাগোনা শুরু হয়েছে। অনেকে কোরবানির পশু কিনে বাড়ি ফিরছেন। কেউ বা আবার এসেছে কিনতে বা দেখতে। এছাড়াও প্রতিনিয়তই আসছে পশু বহনকারী পিকাপভ্যান। এতে সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘ যানজট। পশুর হাটকে কেন্দ্র করে এই যানজট পৌঁছেছে কল্যাণপুর পর্যন্ত। অপর পাশে এই যানজট পৌঁছেছে আমিনবাজার সেতুর শেষ পর্যন্ত। আর মিরপুর এক নম্বরের দিকে তা গেছে আনসার ক্যাম্প ছাড়িয়ে।

আমিনবাজার সেতুর পাশের দোকানদার সুজন মিয়া বলেন, সবসময় এমন জ্যাম থাকে না। এখন গরুর হাটের জন্য জ্যাম এত বেড়েছে।

পশুবাহী ট্রাকের কারণেও চাপ বেড়েছে মহাসড়কে

গাবতলী পশুর হাটের সামনে কর্মরত সার্জেন্ট কবির রাস্তার দীর্ঘ যানজট নিয়ে বলেন, পশুর হাটের কারণেই এই দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে। দেখা যাচ্ছে যে প্রতিনিয়তই মানুষজন পশু কিনে হাট বের হচ্ছেন, রাস্তা পার হচ্ছেন। এতে একটি গাড়ি চলাচলের যে স্বাভাবিক গতি তা ব্যাহত হচ্ছে। তারা চাইলেই স্বাভাবিকভাবে যেতে পারছে না। তাই দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এখানে যানজটের অন্য কোনও কারণ নেই। এই যানজট একদিকে শহরের বাইরে, অন্যদিকে শহরের ভেতর পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছে।

দূরপাল্লার বাসগুলোকেও দাঁড়িয়ে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা

গাবতলীর মতো একই চিত্র দেখা গিয়েছে গুলিস্তানে। সদরঘাটগামী বা কদমতলী রুটের বাসগুলো যানজটে আটকে গেছে পুরানা পল্টন মোড়েই। চিড়িয়াখানা থেকে কদমতলী রুটে চলাচল করে দিশারী পরিবহন। এই বাসে হেলপার মিরাজ বলেন, আমাদের পল্টন মোড় থেকে ফুলবাড়িয়া যেতে নরমাল সময়ে ১০ মিনিটের মতো লাগে। আর আজ তো পল্টন থেকে গোলাপ শাহ মাজার পর্যন্ত যেতেই আধা ঘণ্টা লেগে যাচ্ছে।

সদরঘাট থেকে লঞ্চে পিরোজপুর যাবেন শামীম হোসেন। তিনি বলেন, আমার ৬টায় লঞ্চ, এখন বাজে বিকাল সাড়ে ৪টা।  কিন্তু রাস্তায় যে জ্যাম লেগেছে তাতে আমি ৬টার আগে সদরঘাট যেতে পারবো না। তাই বাস থেকে নেমে হেঁটেই চলে যাচ্ছি।

গাবতলী পশুর হাটের সামনের রাস্তায় যান চলাচল করছিল অত্যন্ত ধীর গতিতে

যাত্রীবাহী আরেক বাসের হেলপার জানান, রাস্তার মধ্য দিয়ে হুট করে গাড়ি ঘোরানোর কারণেও যানজট সৃষ্টি হয়।

ফুলবাড়িয়া মোড়ে দায়িত্বরত সার্জেন্ট ফরিদ বলেন, যানজটের আসলে বেশ কয়েকটি কারণ আছে। এর মূলে রয়েছে রথযাত্রা, আজ ফিরতি রথ ছিল। ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে রথযাত্রা জয়কালী মন্দিরের দিকে গেছে। এ কারণে বেশ কিছুক্ষণ জ্যাম ছিল। এছাড়া গার্মেন্টস ছুটি হওয়ার কারণে বেশিরভাগ শ্রমিক বাড়ি ফিরতে রওনা হয়েছেন সদরঘাটের দিকে। তাই মানুষের একটা জ্যামও আছে। আর ঈদের সময় বলে স্বাভাবিকভাবেই তুলনামূলক জ্যাম কিছুটা বেশি।

ছবি: প্রতিবেদক।