‘১৫ মিনিটে বিমানবন্দরে যাওয়া স্বপ্নের মতো’

রাজধানীর নাগরিক জীবনে সবচেয়ে বড় বাধা যানজট। অফিসের দিকে রওনা হয়ে কিংবা বাসায় ফেরার সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে পথে আটকে থাকতে হয় নগরবাসীকে। বিমানবন্দর সড়কে তীব্র যানজটের কারণে যাত্রীরা ফ্লাইট মিস করে, এমন খবর প্রায়ই শোনা যায়। এতে অর্থ, সময় যেমন খরচ হয়, তেমনি থাকতে হয় মানুষিক দুশ্চিন্তায়। আর এই যানজট থেকে মুক্তি পেতে দেশের প্রথম ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে খুলে দেওয়া হচ্ছে। যে সড়কে মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিনিটেই ফার্মগেট থেকে বিমানবন্দরে স্বাচ্ছন্দ্যে পৌঁছানো সম্ভব। আর এমন সুসংবাদ পেয়ে উচ্ছ্বাসে আনন্দে মেতে উঠছে নগরবাসী।

১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই এক্সপ্রেসওয়ে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত এর প্রথম অংশের উদ্বোধন হয়েছে শনিবার। রবিবার (৩ সেপ্টেম্বর) থেকে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে যোগাযোগের নতুন এই দিগন্ত।

আজ বিকাল ৩টা ৪২ মিনিটে কাওলা প্রান্তে এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন ফলক উন্মোচন করেন  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর তিনি মোনাজাতে অংশ নেন। উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী প্রথম যাত্রী হিসেবে টোল দিয়ে পার হন এই উড়াল সড়ক। দেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাওলা প্রান্ত থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত ১৬ মিনিটে পার তিনি।

তবে রবিবার (৩ সেপ্টেম্বর) ভোর ৬টা থেকে সাধারণ যান চলাচল শুরু হবে।

ফার্মগেট দিয়ে চলাচল করা মানুষের মনে স্বস্তি, ভোগান্তি ছাড়া গন্তেব্যে পৌঁছার আশা

বিকালে সরেজমিনে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ফার্মগেট প্রান্তে গেলে দেখা যায়, উৎসুক জনতার ভিড়। তারা অপেক্ষায় রয়েছেন কখন খুলবে নতুন এই পথ। কেউ কেউ পরিবার-পরিজন নিয়ে সড়কের প্রবেশমুখে সেলফি তুলছেন, ছবি তুলছেন। যানজটমুক্ত নতুন এ পথ উপহার পেয়ে আনন্দের কমতি নেই তাদের মনে।

বিশেষ করে ওই সড়কে চলাচলকারী পরিবহনশ্রমিকরা বেশি উচ্ছ্বসিত হয়েছেন। একইভাবে যাত্রীদেরও খুশির কমতি দেখা যায়নি। তারা বলছেন, যেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লাগত বিমানবন্দরে পৌঁছাতে, সেখানে ১৫ থেকে ১৬ মিনিটে গন্তব্যে পৌঁছানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে। এটি কম কিসে? ১৫মিনিটে বিমানবন্দরে যাওয়া এখন স্বপ্নের মতো।ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (ছবি: ফোকাস বাংলা) উত্তরা ৯ নম্বর সেক্টরে ব্যবসা করেন হিরণ মিয়া। ব্যবসায়িক কাজে ফার্মগেট-কাওরানবাজার দিকে প্রতিদিনই আসতে হয়। ফার্মগেটে কথা হলে হিরণ মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বিমানবন্দর হয়ে কুড়িল পর্যন্ত একটানা আসা যায়। বনানী ঢোকামাত্র গাড়ি আর নড়ে না। প্রতিদিনই রাস্তায় আমাদের অনেক সময় চলে যায়। এক্সপ্রেসওয়ে চালু হওয়ার পর যদি আমরা অল্প সময়ে কয়েক মিনিটে যেতে পারি, আসতে পারি, তাহলে আর কী লাগে? এর চেয়ে আর সুবিধা কী হতে পারে? আমরা যারা নিয়মিত আসা-যাওয়া করি, আমাদের জন্য খুবই ভালো হয়েছে।

প্রাইভেট কার চালক মোখলেসুর রহমান বলেন, নতুন রাস্তা দিয়ে যেতে হলে টোল দিতে হবে। অসুবিধা নাই। তারপরও ভালো লাগবে। যেভাবে জ্যাম ঠেলে যেতে হয়। মাঝেমধ্যে গাড়িতে মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকি। এর অবসান তো কিছুটা হবে আশা করি। সরকারকে ধন্যবাদ জানাই ঢাকাকে যানজটমুক্ত করার জন্য। এমন আরও প্রকল্প যেন হাতে নেয়। তাহলে সরকারের সুনাম হবে। এ ছাড়া জনগণেরও উপকার হবে।

ফার্মগেট এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, অতিরিক্ত গাড়ির চাপের জন্য ফার্মগেট সব সময় গাড়ির জট বেঁধে থাকে। এটি চালু হওয়ার পর আমরা আশা করছি অনেকটা যানজট কমবে। এ ছাড়া এলাকার রাস্তাঘাটের অনেকটা পরিবর্তন আসছে। ওপর দিয়ে গাড়ি চলাচল করলে নিচে অনেকটা ফাঁকা থাকবে। লোকজনেরও চলাচলে সুবিধা হবে। ফার্মগেট অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে। আশা করি সামনেও আরও হবে।

প্রকল্পটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে ঢাকার যানজট অনেকটা কমবে

এক্সপ্রেসওয়েটি কুড়িল-বনানী-মহাখালী-তেজগাঁও-মগবাজার-কমলাপুর-সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী এলাকা পর্যন্ত যাবে। প্রকল্পটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে ঢাকার যানজট অনেকটা কমবে বলে আশা করছেন রাজধানীবাসী।

ঢাকা শহরের যানজট নিরসনসহ ভ্রমণে সময় ও ব্যয় সাশ্রয়ের লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ নেয় সরকার। এতে রাজধানীর যোগাযোগব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

তারা বলছেন, এই অবকাঠামো যানজটের শহর ঢাকায় যাতায়াতে গতি আনবে, সময় বাঁচাবে, ভোগান্তি কমবে, স্বস্তি মিলবে। যানজট নিরসনে বাংলাদেশ সরকারের সবচেয়ে বড় প্রকল্প ও চালু হতে যাওয়া প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এটি।

পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ বলছে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে বিমানবন্দর ও উত্তরাকেন্দ্রিক যে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়, সেটি অনেকাংশে কমে আসবে। এতে বাঁচবে সময়, ট্রাফিক সদস্যদের কাজও কমবে। বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট যাওয়া-আসা করতে সময় লাগবে মাত্র ১০ মিনিট।