রাতেই উপকূলে আঘাত হানবে হামুন

বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’। ইতোমধ্যে ৭ নম্বর বিপদসংকেত জারি করেছে আবহাওয়া অফিস। এটি আজ (মঙ্গলবার) রাত ১০টা থেকে বুধবার সকাল ১০টার মধ্যে বরিশাল ও চট্টগ্রাম মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে উপকূল অতিক্রম করবে। এর প্রভাবে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি শুরু হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ বিশ্লেষণ করে আবহাওয়া অফিস জানায়, ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে উপকূলের ১৫টি জেলায় স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। এসব জেলায় সরকারি ছুটি বাতিল করা হয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান মন্ত্রণালয়ে জরুরি বৈঠক করেন। এ সময় বরগুনা, ভোলা, সন্দ্বীপ, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুরসহ ১০টি জেলাকে ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে এসব দুর্গত এলাকার ১৫ লাখ মানুষকে রাত ৮টার মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

এ ছাড়া উপকূলের ১২টি জেলাজুড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে গবাদিপশু ও শিশুখাদ্যের জন্য দুই কোটি টাকা বরাদ্দ নগদ দেওয়া হয়েছে বৈঠকে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকারের সঠিক ব্যবস্থাপনার কারণে ঘূর্ণিঝড়ে মৃত্যুর সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। হামুন প্রবল ঘূর্ণিঝড় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের সব প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। দুপুর থেকেই উপকূলের মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে আনার কাজ শুরু হয়ে যাবে।

মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১০টা থেকে বুধবার সকাল ১০টার মধ্যে উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান।

এবার হামুনের নাম দিয়েছেন ইরানের আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা। যেটি উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত প্রবল বেগে ধেয়ে আসছে বাংলাদেশ উপকূল অভিমুখে।

সকাল ৯টায় আবহাওয়া অধিদফতর জারি করা বুলেটিনে হামুনের গতিপথ সম্পর্কে জানানো হয়েছে,  ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর-পূর্বদিকে অগ্রসর হয়ে বুধবার সকাল থেকে ভোলা হয়ে বরিশাল ও চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করবে।

আরও বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি ১৮ থেকে ২০ কিলোমিটার গতিতে উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। উপকূলীয় এলাকায় ৩ থেকে ৫ ফুটের বেশি জলোচ্ছ্বাসেরও আশঙ্কা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট মেঘমালার অগ্রভাগ এরই মধ্যে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় প্রবেশ করেছে। এর প্রভাবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি শুরু হয়েছে।

মঙ্গলবার সকাল ৯টায় ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৪৫ কিমি পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৪১০ কিমি পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩২৫ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩১০ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর ও উত্তর-পূর্বদিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিমির মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিমি, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১১০ কিমি পর্যন্ত বাড়ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে অতি ভারী বৃষ্টিতে ১৫ জেলায় জলোচ্ছ্বাস, ৫ জেলায় ভূমিধসের শঙ্কা রয়েছে। এ সময় কমপক্ষে ৫ ফুটের বেশি উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হতে পারে বলে জানায় আবহাওয়া অফিস।