বিএনপি-জামায়াতের তৃতীয় দফায় ডাকা ৪৮ ঘণ্টার সর্বাত্মক অবরোধের অর্থ বদলে গেছে। গত সপ্তাহের অবরোধে মানুষ একদমই বের না হলেও তৃতীয় দফার অবরোধ শুরুর দিনে বুধবার (৮ নভেম্বর) রাজধানীর বেশিরভাগ এলাকায় যান চলাচল ছিল প্রায় স্বাভাবিক। সকাল থেকেই যাত্রীবাহী বাস, সিএনজি অটোরিকশা, রাইড শেয়ারিংয়ের মোটরসাইকেল, পণ্যবাহী পিকআপ চলাচল করছে। এমনকি সায়েদাবাদ টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার কিছু বাসও ছেড়ে গেছে। তবে বরাবরের মতো ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা ছিল কম।
বিভিন্ন এলাকায় কাজে যোগ দেওয়া মানুষ বলছে, দিনের পর দিন অবরোধ দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো যে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, এটা তাদের বুঝা উচিত। আর পরিবহন মালিকরা বলছেন, আগুনের ভয়ে বাস চলছে না। নাহলে কিছুই বন্ধ থাকতো না।
একইভাবে বেলা ৫টার পর থেকে রাজধানীর সড়কগুলোতে আবারও যানবাহনের চাপ ছিল। তবে দুপুরের একটা বড় সময় যান চলাচল ছিল না বললেই চলে।
যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগ বাস টার্মিনালে সকাল থেকে যাত্রীর জন্য অপেক্ষমান ছিল সারি সারি বাস। বাসের পাশে কিছুক্ষণ ঘুরে রিকশায় করে রওনা দেন বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত রাশিদুল। কেন রিকশায় অফিসে যাচ্ছেন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বাসে হুটহাট আগুন দেওয়া হচ্ছে, যাত্রী কম। রিকশা অনেকটা নিরাপদ মনে করি। অফিস তো দিনের পর দিন ছুটি দেবে না। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কীভাবে নিরাপদে পৌঁছাবো, সেটা নিজেদেরই ভাবতে হয়।’
বাসে গাড়িতে আগুনের ঘটনা না থাকলে কিছুই বন্ধ থাকতো না উল্লেখ করে শিকড় পরিবহনের একটি বাসের সহকারী নাম প্রকাশ না করে বলেন, যারা বাসের যাত্রী, তারা অফিসসহ জীবনযাপনের সব কাজই করছে। কিন্তু বাসে উঠছে না। দিনের বেলা যাও যাত্রী পাওয়া যায়, সন্ধ্যার পর বাসে আর কেউ উঠতে চায় না। এ রকম ২০১৪/১৫ সালের দিকেও হয়েছিল। বাসে ওঠা আতঙ্ক হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আমাদের মতো যাদের বাস বের না করলে পেটে ভাত জুটবে না, তারা এভাবে দিনের পর দিন বসে কাটালে কীভাবে চলবো।
ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েতুল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা স্বাভাবিকভাবে পরিবহন চলাচলের ঘোষণা দিয়েছিলাম। সে অনুযায়ী কিছু বাস চলছে, কাউন্টার খোলা আছে। কিন্তু যাত্রী নেই বললেই চলে। যাত্রীরা আগুন ও সন্ত্রাসের ভয়ে বাসস্ট্যান্ডে আসছে না বলেই মনে হয়। সেই ভয় না থাকলে সব স্বাভাবিক থাকতো।’
উল্লেখ্য, বিএনপি-জামায়াতের ডাকে প্রথম দফায় গত ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ৭২ ঘণ্টার অবরোধ পালন করা হয়। এরপর ৫ ও ৬ নভেম্বর দ্বিতীয় দফায় সারা দেশে অবরোধ কর্মসূচি ছিল। বর্তমানে তৃতীয় দফায় ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ চলছে।