অবরোধে নিরাপদ বাহন মেট্রোরেল

উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চলাচলের জন্য মেট্রোরেল খুলে দেওয়া হয় গত ৫ নভেম্বর। এর পর আট দিনের মধ্যে অবরোধেই কেটেছে পাঁচ দিন। টানা অবরোধ কর্মসূচির কারণে গণপরিবহন পাওয়াই যেখানে দুষ্কর, সেখানে মেট্রোরেল যেন আশির্বাদ হিসেবে এসেছে। উত্তরা থেকে মতিঝিল রুট চালু হওয়ার পর এর সুবিধা উপলব্ধি করছেন নগরবাসী। নিরাপদে  ও সময়মতো কর্মস্থলে বা গন্তব্যে পৌঁছাতে পেরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন তারা।

রবিবার (১২ নভেম্বর) মেট্রোরেলের মিরপুর ১০ নম্বর ও সচিবালয় স্টেশনের  যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় তদের অভিমত-অভিজ্ঞতা।  গত ২৮ অক্টোবর থেকে এক বা দুই দিন করে বিরতি দিয়ে বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর ডাকে সারা দেশে হরতাল-অবরোধের টানা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। এতে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ বললেই চলে। একইসঙ্গে রাজধানীতেও যান চলাচল করছে সীমিত পর্যায়ে। রাজপথে বাস কম থাকায় ভোগান্তিতে পড়ছেন কর্মজীবীরা। তবে তাদের অনেকের জন্য ভোগান্তি লাঘব করে স্বস্তি নিয়ে এসেছে মেট্রোরেল। 

মেট্রোরেলের টিকিটের জন্য প্রতিদিন সকালে দেখা যাচ্ছে যাত্রীদের ভিড়

বেসরকারি চাকরিজীবী কবিরের অফিস মতিঝিলে। প্রতিদিন তাকে সেখানে যেতে হয়। তিনি বলেন, মেট্রোরেল মতিঝিল পর্যন্ত চালু হওয়ার পর থেকে আমি রেগুলার মেট্রোতেই যাই। অনেক সময় আমার বেঁচে যায়। রাস্তায় অবরোধের কারণে গাড়ি কম চলছে। কিন্তু আমার কোনও সমস্যা হচ্ছে না। আমি সময় মতোই যেতে পারছি।

চাকরিজীবী রাইসুল ইসলাম বলেন, আমরা মেট্রোর সুবিধা অলরেডি বুঝে গিয়েছি। যখন সবগুলো স্টেশন চালু হবে, আর ট্রেনের আসার টাইম কমে যাবে, তখন আমরা আরও বেশি সুবিধা পাবো।

সারা দেশে পালিত হওয়া অবরোধ কর্মসূচিতে এখন পর্যন্ত শতাধিক পরিবহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এতে হতাহতের খবরও পাওয়া যাচ্ছে। এসব নাশকতায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে যাদের প্রতিদিনই কাজের তাগিদে বের হতে হয় তাদের মনে। তবে যেসব যাত্রীরা কর্মস্থলে মেট্রোরেলে যেতে পারছেন তারা স্বস্তি ও আস্থা প্রকাশ করেছেন এই পরিবহন নিয়ে।

উত্তরা থেকে মতিঝিলগামী যাত্রীরা চলমান অবরোধে গণপরিবহনের সংকট থেকে নিস্তার পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন

আকবর হোসেনের অফিস গুলিস্তানে। তিনি বলেন, প্রতিদিন আমি অফিসের বাসে যাতায়াত করি। প্রায় দিনই অবরোধের কারণে বাস সার্ভিস বন্ধ থাকছে। তাই মেট্রোরেলে যাচ্ছি। এখন হরতাল-অবরোধে যে অবস্থা চলছে বাসে উঠতেই ভয় লাগে। কখন না আবার বাসে আগুন দিয়ে দেয়। মেট্রোতে সেই ভয় নাই। এটা (মেট্রোরেল) যে কী উপকার করেছে বলে বোঝানো যাবে না।

আরেক যাত্রী ইব্রাহিম বলেন, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলেও এখন মেট্রোতে নিরাপদে সময়মতো যেতে পারছি অফিসে। এখানে আগুন দেওয়ার বা ভাঙচুর করার কোনও ভয় নেই।

কোনও ঝক্কি-ঝামেলা ছাড়াই সময়মতো ও নিরাপদে ভ্রমণের মাধ্যমে পরিণত হয়েছে মেট্রোরেল

যানজটের নগরীতে চলাচলে গতি ফিরিয়ে আনার কারণেই মানুষের আস্থার বাহনে পরিণত হয়েছে মেট্রোরেল।  শরীফ হোসেন নামের এক যাত্রী বলেন, আমি এখন কাউকে সময় দিয়ে বলতে পারি যে আমি ২০ মিনিটের মধ্যে আসছি। আগে তো বলতে পারতাম না। কারণ রাস্তার জ্যামের কী অবস্থা সেটা আমরা জানতাম না। ২০ মিনিট সময় দিলে হয়তো এক ঘণ্টায়ও পৌঁছাতে পারতাম না।

যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগে চাকরি করেন শহীদুল ইসলাম। বাসাও তার সেখানেই। মিরপুর এসেছিলেন তার গুরুতর অসুস্থ রোগী দেখতে। তিনি বলেন, আমি মতিঝিল থেকে মেট্রোতে উঠে মিরপুর এসেছি। আধা ঘণ্টার মতো লেগেছে। আমি বাসে আসতে গেলে হয়তো দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা লাগতো। এখন সেটা লাগেনি। আর অবরোধের কারণে গাড়ি কম থাকাতেও আমার কোনও সমস্যা হয়নি। আমি সময় মতোই আসতে পেরেছি। এখন আবার রোগী দেখে চলেও যাচ্ছি।

ছবি: প্রতিবেদক।

আরও পড়ুন-

মেট্রোরেলের আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

প্রথমবারের মতো যাত্রী নিয়ে অফিসপাড়ায় মেট্রোরেল