পাচারের শিকার ব্যক্তি সরকারি আইনি সহায়তা পাবেন

মানবপাচারের শিকার ব্যক্তিরা আইনি সহায়তা পেতে নানা জটিলতায় পড়েন। এজন্য অনেকেই বিচারিক আদালতে যান না। আবার অনেকেই এই সেবা সম্পর্কে জানেন না। এজন্য সচেতনতা তৈরি করার কথা বলেছেন ঢাকা জেলা লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা ও সিনিয়র সহকারী জজ মো. সায়েম খান। তিনি বলেন, মানবপাচারের শিকার যেকোনও ব্যক্তি, নারী হোক কিংবা পুরুষ, সবাই লিগ্যাল এইড (আইনগত সহায়তা) পাবেন।

বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মিলনায়তনে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা ও ব্র্যাক মাইগ্রেশন কর্মসূচির উদ্যোগে আয়োজিত মানবপাচার মামলার বিচারিক কার্যক্রম সংক্রান্ত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। 

প্রসঙ্গত, জেলা লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা একজন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা হওয়ায় সুবিধাভোগী জনগণ আস্থা ও বিশ্বাসের সঙ্গে তাদের আইনগত সমস্যাগুলো তার কাছে তুলে ধরেন। জেলা লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা তার বিচারিক ও প্রশাসনিক জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার আলোকে তাদের প্রয়োজন অনুসারে আইনি পরামর্শ, আইনগত সহায়তা বা সালিসি সেবা দেন। দেশের ৬৪ জেলায় বিনামূল্যে এই সেবা চালু আছে।

সায়েম খান বলেন, আইনগত সহায়তার জন্য জেলা লিগ্যাল এইডে ভুক্তভোগীরা যে আসছে না, সেটির দায় আমাদেরই নিতে হবে। কেন আসছে না, তা জানতে মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে হবে। অনেকেই হয়তো লিগ্যাল এইডের বিষয়ে জানেন না, তাই হয়তো আসেন না। আপনারা জানাবেন, আমাদের কাছে পাঠাবেন। আমরা আইনি সহায়তা নিশ্চিত করবো।

মতবিনিময় সভায় লিবিয়া ও ভারতে পাচারের শিকার দুই জন ভুক্তভোগী তাদের অভিজ্ঞতার কথা জানান।

এসময় সভায় উপস্থিত মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপিরা জানান, মামলা দায়ের হলেও সাক্ষী আসে না। এজন্য মামলা নিষ্পত্তি করতে সময় লাগে। অন্যদিকে যেসব মামলা হচ্ছে সেসব সরাসরি মানবপাচার সংশ্লিষ্ট না। সেজন্য অনেক ক্ষেত্রে মামলা খারিজ হয়ে যায়। অন্যান্য ঘটনা সাজিয়ে মানবপাচার আইনে মামলা দেওয়া হয়। মানবাপাচারকারিরাও আইনের ফাঁক ফোঁকর জানে। আবার মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে প্রমাণ লাগে, সেটাও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পাওয়া যায় না।

সভায় ব্র্যাকের মাইগ্রেশন কর্মসূচির সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান বলেন, পাচারের শিকার ব্যক্তি কি জানে কোন আইনে মামলা করতে হবে? সেটা থানা পুলিশ নিজেই ঠিক করে দেয়। মানবাপাচারের মতো সংঘবদ্ধ অপরাধের আসামি কিন্তু প্রভাবশালী, কোনও সাধারণ ব্যক্তি না। সুতরাং মামলা দায়েরের সময় তিনি বেশ ভালো করেই জানেন যে পুলিশকে কী বললে মামলা দুর্বল হবে। তাই প্রথমত, পুলিশ মামলা নিতে চায় না। হলেও কোন ধারায় মামলা হবে সেটা পুলিশ ঠিক করে দেয়। তাই এখানে ভুক্তভোগীর খুব বেশি দায় নেই।

তিনি আরও বলেন, একজন কৃষক, একজন গার্মেন্টকর্মী এবং প্রবাসীকর্মী এদেশ চালান। আদালতে বিচারের জন্য আসা তাদের জন্য যুদ্ধ করার সমান। পুলিশ, আদালত দিয়ে অপরাধ কমানো যাবে না। দৃষ্টান্ত তৈরি করতে হবে একটি মামলার রায় দিয়ে। যাতে অপরাধীরা  বোঝে যে বাংলাদেশে মানবাপাচারের ঘটনায় সাজা হবে।