সাংবাদিক মানিক সাহা হত্যার ফের তদন্ত ও বিচার দাবি

একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক মানিক সাহা হত্যার ঘটনায় ফের তদন্ত এবং দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা। সোমবার (১৫ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে মানিক সাহার স্মৃতিচারণ সভায় এই দাবি জানানো হয়।

সভায় সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকী বলেন, ‘মানিক সাহা নিজেও জানতেন, তিনি যেভাবে সত্যের সৈনিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তার ওপর আক্রমণ আসবে। তবে তিনি কখনোই মৃত্যুর ভয়ে ভীত ছিলেন না। যারা মানিক সাহার মতো সাংবাদিকদের হত্যা করে তারা সত্যের শত্রু। এসব হত্যাকাণ্ডের বিচারের নামে যে প্রহসন হয় এটা মানিক সাহার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সাংবাদিক হত্যায় প্রহসনের বিচার প্রতিরোধ করতে হলে তার আত্মত্যাগকে চিরঞ্জীব রাখা আমাদের দায়িত্ব।’

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘আইন যদি অন্যায্য হয় তাহলে সুষ্ঠু বিচার সম্ভব না। মানিক সাহাসহ অন্যান্য সাংবাদিক হত্যার বিচারের পেছনে আইনের প্রয়োগের অভাবই দায়ী। মানিক সাহা হত্যার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে আমাদের একটি দীর্ঘ মেয়াদি আন্দোলন করতে হবে।’

মানিক সাহা হত্যাকাণ্ডের বিচারে একটি ‘গণতদন্ত কমিশন’ গঠনের আহ্বান জানিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, ‘মানিক সাহা আমৃত্যু জনমুখী সাংবাদিকতা করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ ও সমতার পক্ষে আপোষহীন ছিলেন। জনমুখী সাংবাদিকতার জন্যই মৌলবাদী শক্তি তাকে হত্যা করেছে। তার হত্যার বিচারের নামে ২০০৬ সালে যে রায় হয়েছে, তা ছিল গোজামিলের রায়। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্ত চাই। এই হত্যার পরিকল্পনাকারীসহ জড়িত সবার বিচারের দাবিতে আমাদের সোচ্চার হতে হবে।’

সভায় মানিক সাহার জীবন ও কর্ম সম্পর্কে নানান স্মৃতি তুলে ধরে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘মানিক সাহা সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে সব সময় স্বোচ্চার ছিলেন। বৈষম্য ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন তিনি। নীতিহীনতাকে পরাজিত করে যদি বাংলাদেশে নীতিনিষ্ঠা আনা যায়, তাহলে তার হত্যার বিচার হবেই।’

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশের সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, ‘মানিক সাহাকে হত্যার ২০ বছর পরও আমরা বিচারের দাবি জানাচ্ছি। সাংবাদিক হত্যা, নির্যাতনের বিচার বরাবরের মতোই হচ্ছে না। সাংবাদিকতা, সংস্কৃতি সবকিছুর ওপর হামলা হচ্ছে। সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে আমাদের অবিলম্বে সোচ্চার হতে হবে।’

সভায় আরও বক্তব্য রাখেন– বিএফইউজের সহ-সভাপতি মানিক লাল ঘোষ, নিউজ২৪-এর নির্বাহী সম্পাদক রাহুল রাহা, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাংগঠনিক সম্পাদক বিমল কান্তি প্রমুখ।

২০০৪ সালের ১৫ জানুয়ারি চরমপন্থীদের বোমা হামলায় নিহত হন খুলনা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি মানিক সাহা। ২০১৬ সালে তার হত্যা মামলায় ৯ জনকে যাবজ্জীবন সাজা দেন খুলনার দ্রুত বিচার আদালত। মামলার রায়ে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশা করেছিলেন বাদীপক্ষ, সাংবাদিকসমাজসহ অনেকে।