মেলায় গবেষণাধর্মী বইয়ের কাটতি বাড়ছে

অমর একুশে বইমেলায় প্রতিদিনই আসছে নতুন নতুন বই। এসব বইয়ের আবার রয়েছে কয়েকটি ভাগ। এবারের বইমেলায় পাঠকের দৃষ্টি কেড়েছে গবেষণাধর্মী বইও। মেলার বিশতম দিন মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত এসেছে ৩৬টি গবেষণাধর্মী বই।

গবেষণাধর্মী বইগুলোর জন্য রয়েছে বিশেষ স্টল-প্যাভিলিয়ন। সময়ের সাথে সাথে প্রায় সব প্রকাশনা সংস্থাই গবেষণাধর্মী বইয়ের প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছেন বলে জানিয়েছে প্রকাশকরা। এর অন্যতম কারণ আগের চাইতে এধরণের বইয়ের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়া। উচ্চ শিক্ষা পর্যায়ের শিক্ষার্থী, গবেষক ও শিক্ষকরা এসব বইয়ের মূল ক্রেতা বলেও জানান তারা।429103760_1171261334280963_1856985743714929763_n

বাংলা একাডেমির ভেতরে রয়েছে গবেষণাধর্মী ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো। এরমধ্যে একটি বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। প্রতিষ্ঠানটির সেলস মার্কেটিং অফিসার জুলফিকার আলী বলেন, মেলায় প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ১৩৭টি বই ও জার্নাল রয়েছে। এসকল বইয়ের আগের তুলনায় চাহিদা বেড়েছে। ক্রেতা মূলত গবেষক ও শিক্ষকরা। শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুই-একটা বই নিয়ে আগ্রহ রয়েছে।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির বিক্রয়কর্মী মকবুল হোসেন বলেন, আমাদের চার শতাধিক গবেষণা বই ও জার্নাল রয়েছে। এগুলোর চাহিদা মোটামুটি ভালোই। যারাই কিনছেন তারা হয় গবেষক, না হয় শিক্ষক। শিক্ষার্থীদের মধ্যেও চাহিদা রয়েছে ভালো। তবে বিক্রির হার আগের চাইতে ক্রমেই বাড়ছে।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের স্টলে দায়িত্বপালন করা মো. আলী হোসেন বলেন, আমাদের বই ও জার্নালের সংখ্যা পঞ্চাশের অধিক। আমাদের বইয়ের চাহিদা ভালো। যারা এই ধরনের বই কেনেন, তারা খুঁজে খুঁজে এখানে চলে আসেন৷

427067483_1432400220684607_7340146481191221451_nক্রিয়েটিভ ঢাকা পাবলিকেশনের প্রোডাকশন এক্সিকিউটিভ কামাল হোসেন জানান, আমাদের গবেষণাধর্মী বই প্রায় ৫০টির মতো। এবার এখন পর্যন্ত এসেছে ৫টি, আরও আসবে ১০টি। আমরা দেখছি ক্রমেই গবেষণাধর্মী বইয়ের চাহিদা বাড়ছে। তরুণ থেকে শুরু করে উচ্চ পর্যায়ের গবেষক সবাই কিনছেন। আমাদের আশা এটি আরও বাড়বে।

ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডের (ইউপিএল) অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার একেএম কামরুজ্জামান জানান, ইউপিএলের প্রায় হাজার খানেক গবেষণাধর্মী বই আছে। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া, শিক্ষক, গবেষক, পিএইচডির শিক্ষার্থীরাই মূলত বইগুলো কিনছেন। সময়ের সাথে সাথে এই ধরনের বইয়ের চাহিদা আরও বাড়ছে বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, আগে বিভিন্ন প্রকাশনা মূলত গল্প-উপন্যাস জাতীয় বই প্রকাশ করতো। কিন্তু বর্তমানে গবেষণা করার জন্য শিক্ষার্থীরা, গবেষকরা পর্যাপ্ত বইয়ের অভাববোধ করছেন। যার ফলে প্রায় সকল প্রকাশনা সংস্থাগুলো গবেষণাধর্মী বই বের করার চেষ্টা করছে। সময়ের সাথে সাথে এটি আরও বাড়বে বলে আমি মনে করি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ইউপিএলের বই বেশি কিনছেন বলেও জানান তিনি।

ছবি: নাসিরুল ইসলামনতুন বই

মেলার বিশতম দিন মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) নতুন বই এসেছে ৯৯টি।

মূল মঞ্চের আয়োজন

বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্মরণ: জামাল নজরুল ইসলাম’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিজ্ঞানবক্তা আসিফ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সুব্রত বড়ুয়া এবং আরশাদ মোমেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক আবদুল মান্নান।

প্রাবন্ধিক আসিফ বলেন, অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গণিতবিদ, পদার্থবিদ ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং বিশ্ববরেণ্য কসমোলজিস্ট। আন্তর্জাতিক মহলে তিনি জে, এন, ইসলাম হিসেবে পরিচিত। পঞ্চাশ বছরের বৈজ্ঞানিক জীবনে তিনি ধ্রুপদী সব বিজ্ঞান-ধারার ওপর কাজ করে গেছেন। এরমধ্যে আছে কোয়ান্টাম ক্ষেত্রতত্ত্ব, আপেক্ষিকতার সূত্র, নক্ষত্রের গঠন ও মহাবিশ্ব তত্ত্ব। তবে তার গবেষণার প্রধান বিষয় ছিল আপেক্ষিকতাবাদ ও মহাবিশ্বতত্ত্ব। তার লিখিত দ্য আলটিমেট ফেট অব দ্য ইউনিভার্স গ্রন্থটি ফরাসি, ইতালীয়, জার্মান, পর্তুগিজসহ বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। পৃথিবীর বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে বইটি পাঠ্যবই হিসেবে পড়ানো হয়।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম বড় বিজ্ঞানী হয়েও ছিলেন নিরহংকারী, অত্যন্ত আন্তরিক, সদাশয় ও সরল মনের অধিকারী একজন মানুষ। তিনি বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। আমাদের তরুণ প্রজন্মকে জামাল নজরুল ইসলামের বিজ্ঞানচেতনা দ্বারা উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

লেখক বলছি

লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি আতাহার খান, কথাসাহিত্যিক মোস্তফা কামাল, গবেষক চৌধুরী শহীদ কাদের এবং লেখক ও পর্বতারোহী ইকরামুল হাসান শাকিল।

রিকশাচিত্র প্রদর্শন বই ও সংলাপ মঞ্চের আয়োজন

এই মঞ্চে বিকাল ৫টায় ড. হাসান কবীর রচিত ও বাংলা একাডেমি প্রকাশিত বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের কৃষি বই নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি রহিমা আখতার কল্পনা, বিপ্লব মুস্তাফিজ, প্রত্যয় জসীম, ফারুক আহমেদ, মনিরুজ্জামান মিন্টু, মনিরুজ্জামান রোহান এবং কাজী আনিসুল হক। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী ইকবাল খোরশেদ, দেওয়ান সাইদুল হাসান, অনন্যা রেজওয়ানা, মীর মাসরুর জামান রনি, সংগীতা চৌধুরী, জিনিয়া ফেরদৌস রুনা এবং চন্দ্রিমা দেয়া। এছাড়া মনিরুল ইসলামের পরিচালনায় দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করে স্বরব্যঞ্জন বাচনিক উৎকর্ষ ও চর্চা কেন্দ্র।

অমর একুশের কর্মসূচি

শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস (২১ ফেব্রুয়ারি) উপলক্ষে রাত সাড়ে বারোটায় একুশের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে দিনের কর্মসূচি শুরু হবে। বইমেলা শুরু হবে সকাল ৮টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। সকাল ৮টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর। সভাপতিত্ব করবেন কবি শামীম আজাদ।

অমর একুশে বক্তৃতা ২০২৪

বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে অমর একুশে বক্তৃতা ২০২৪। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। অমর একুশে বক্তৃতা প্রদান করবেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।