গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনা প্রমাণ করে আমরা কতটা অমানবিক: ড. কামাল উদ্দিন

মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, গৃহকর্মী নির্যাতনের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো প্রমাণ করে, আমরা কতটা অমানবিক হয়ে উঠেছি। গৃহশ্রম ও দারিদ্র্যের আন্তসম্পর্ক রয়েছে। জীবন-জীবিকার সংগ্রামে বাসাবাড়িতে শিশুশ্রম বাড়ছে। গৃহকাজে নিয়োজিত শিশুদের সামর্থ্যের বাইরে শ্রম দেওয়া ও নিম্নমানের পরিবেশে থাকতে হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, পুষ্টিকর খাবার ও শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত হতে বাধ্য হচ্ছে। একই সঙ্গে নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হয়ে অত্যন্ত অমানবিক জীবনযাপনে বাধ্য হচ্ছে তারা।

বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সভাকক্ষে ‘গৃহকাজে নিয়োজিত শিশুর অধিকার ও সুরক্ষায় সুনির্দিষ্ট আইনের প্রয়োজনীয়তা’ নিয়ে সংলাপে এসব কথা বলেন কমিশনের চেয়ারম্যান।

চেয়ারম্যান বলেন, গৃহকর্মীদের প্রতি এসব অমানবিকতার বিষয় সমাধানের জন্য আর্থসামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক পরিসর বিবেচনায় নিতে হবে। গবেষণাধর্মী ও সামঞ্জস্যপূর্ণ আইন তৈরি করতে হবে। আইনটি যাতে সুপ্রতিষ্ঠিত ও শক্তিশালী হয়, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট লক্ষ্যনির্ভর পদক্ষেপ নিতে হবে। আইনটি যাতে শারীরিক ও মানসিক সুরক্ষার পাশাপাশি যৌন নির্যাতন ও নিপীড়ন থেকে রক্ষা করে, সেটাও খেয়াল রাখতে হবে। আইন তৈরিতে দীর্ঘসূত্রতা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।

গৃহকর্মী নির্যাতনের সাম্প্রতিক যেসব ঘটনা দেখছি, সেগুলো প্রমাণ করে আমরা কতটা অমানবিক হয়ে উঠেছি। এমনটা জানিয়ে ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের মনমানসিকতা কতটা নিচে নেমে গেছে। সভ্য সমাজের বহিঃপ্রকাশ আমাদের মাঝে নেই। আমাদের মানবিক ও শিক্ষিত সমাজ নির্মাণের প্রচেষ্টা চালাতে হবে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন থেকে আমরা গৃহকর্মী নির্যাতনের অভিযোগগুলো খুবই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করি। গৃহকর্মী খাদিজা ও প্রীতি উরাংকে নির্যাতনের বিষয়ে কমিশন কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে। যেগুলোর সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে।

চিকিৎসা-সংক্রান্ত সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে ড. কামাল উদ্দিন বলেন, সম্প্রতি চিকিৎসকদের অনৈতিক ও অমানবিক আচরণের সংবাদে আমাদের উদ্বিগ্ন করেছে। সুন্নতে খতনা ও প্রসূতির ভুল চিকিৎসা সংক্রান্ত খবরগুলো প্রমাণ করে, আমাদের সামাজিক অবক্ষয় কতটা হয়েছে। নৈতিকতা বিবর্জিত চিকিৎসা আমরা চাই না।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য মো. সেলিম রেজা, পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) কাজী আরফান আশিক, উপপরিচালক এম রবিউল ইসলাম, শাপলা নীড়ের কান্ট্রি ডিরেক্টর তমোকো উছিয়ামা, শিশু সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ সরফুদ্দিন খানসহ অন্য অতিথিরা।