বইমেলায় এখনও নজরুল-রবীন্দ্রনাথেই আগ্রহ বেশি

বাংলা সাহিত্যে নিজ গুণে চিরস্মরণীয় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তাদের সৃষ্ট সাহিত্যকর্মের প্রতি সাহিত্যপ্রেমী মানুষের আগ্রহ সমভাবে রয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষ বাড়ছে কোথাও কোথাও। এবারের বইমেলায় নজরুল কবিতা ও গানে এবং রবীন্দ্রনাথ ছোটগল্প, উপন্যাস ও নাটকের জন্য পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে বেশি।

অমর একুশে বইমেলার ২২তম দিন বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বইমেলায় বিক্রয়কর্মী ও পাঠকদের কাছে জানা যায় এমন তথ্য।

বিক্রয়কর্মীরা জানান, সাহিত্যপ্রেমীদের কাছে সব সময়ই নজরুল ও রবীন্দ্রনাথ সমানভাবে সমাদৃত। তাদের বই কখনোই বিক্রি খারাপ ছিল না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের বইয়ের চাহিদা আরও বাড়ছে। এই চাহিদা কখনোই ফোরাবে না।

নজরুল-রবীন্দ্রনাথের বই তুলনামূলক বড়রাই বেশি কিনছেন জানিয়ে তারা বলেন, রবীন্দ্রনাথ-নজরুল বুঝতে হলে যথেষ্ট ম্যাচুরিটি দরকার। সে জন্যই বড়দের আগ্রহ তুলনামূলক বেশি।

শিশু-কিশোরদের মাঝেও এই দুই বিখ্যাত সাহিত্যিকের চাহিদা রয়েছে বলে জানান শিশু চত্বরের বিক্রয়কর্মীরা। তবে তারা তুলনামূলক ছোট বই পড়তে পছন্দ করে। তাই রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের শিশু সাহিত্যগুলো ছোট করে প্রকাশ করলে শিশুদের আগ্রহ আরও বাড়বে বলেও জানান তারা।

নজরুল প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী মো. রাসেল বলেন, কাজী নজরুল ইসলামের বইয়ের চাহিদা কখনোই খারাপ ছিল না। সব সময়ই চাহিদা ভালো। সব বয়সের লোকই নজরুলের বই কিনছেন। তবে মধ্যবয়সীদের কাছে তার চাহিদা তুলনামূলক বেশি। নজরুলের বইগুলোর মধ্যে সঞ্চিতা, কাব্য আমপারা, উপন্যাসসমগ্র, কবিতাসমগ্র বইগুলো বেশি বিক্রি হচ্ছে।

পুথিনিলয় প্রকাশনার বিক্রয়কর্মী আফরোজা আক্তার আঁখি বলেন, রবীন্দ্রনাথের আগ্রহ সব সময়ই বেশি। তার মানের সাহিত্য দেশে নেই বললেই চলে। তিনি সব সময়ই সব শ্রেণির পাঠকের কাছে সমাদৃত হয়েছেন। তার বইয়ের মধ্যে ছোটগল্প, নাটক ও উপন্যাসের চাহিদা মেলায় বেশি। রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যের প্রতি পঞ্চাশোর্ধ্বের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি। তবে তুলনামূলক কম বয়সী পাঠক কম। কারণ তার সাহিত্য বুঝতে হলে ম্যাচুরিটি দরকার।

শিশু চত্বরে আরো প্রকাশনের পরিচালক রোমান বলেন, আমাদের রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের তিনটি বই আছে শিশু-কিশোরদের জন্য। বইগুলো মোটামুটি ভালোই চলছে। তবে ছোট করে শিশু সাহিত্যগুলো প্রকাশ করলে শিশু-কিশোরদের আগ্রহ আরও বাড়বে।

ঝিঙেফুল প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী মো. হানিফ বলেন, নজরুল ইসলাম ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বইয়ের চাহিদা শিশু-কিশোরদের মধ্যে আগ্রহ যথেষ্ট ভালো। তবে তারা ছোট বই খোঁজে বেশি। কিন্তু তাদের জন্য যে বইগুলো আছে, সেগুলো বেশ বড়।

রবীন্দ্রনাথ-নজরুল বুঝতে হলে যথেষ্ট ম্যাচুরিটি দরকার

নতুন বই
অমর একুশে বইমেলার ২২তম দিন নতুন বই এসেছে ৭৮টি।

মূল মঞ্চের আয়োজন
বিকাল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণ। আসাদ চৌধুরী এবং স্মরণ: জাহিদুল হক শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যথাক্রমে মাহমুদা আকতার ও কামরুল হাসান। আলোচনায় অংশ নেন দিলারা হাফিজ, বায়তুল্লাহ কাদেরী ও মনি হায়দার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ড. মুহম্মদ সামাদ।

প্রাবন্ধিক মাহমুদা আকতার বলেন, কবি আসাদ চৌধুরী ষাটের দশকের বাস্তবতায় একজন ঐতিহ্যমগ্ন কবি। তার কবিতায় জাতীয়তা, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধিকার-চেতনা নান্দনিক সৌকর্যে প্রতিভাত হয়েছে। ফলে তার কবিতার মাঝে শৈল্পিক বোধের সঙ্গে স্বজাতির প্রতি সুগভীর ভালোবাসা মূর্ত হয়ে উঠেছে।

অন্যদিকে বাংলা কবিতার ইতিহাসে কবি জাহিদুল হক আপন প্রতিভায় উজ্জ্বল। তিনি ছিলেন একজন ছন্দসচেতন কবি। ছন্দ ও ধ্বনির ওপর দখল তাকে একজন শক্তিমান গীতিকার করে তুলেছিল।

সভাপতির বক্তব্যে ড. মুহম্মদ সামাদ বলেন, কবি আসাদ চৌধুরী ও জাহিদুল হক তাদের কবিতার মধ্য দিয়ে মানুষের প্রতি, দেশের প্রতি, ভাষার প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। তাই তাদের কবিতা গণমানুষের ভাষ্য হয়ে উঠেছে।

লেখক বলছি
লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি শিহাব সরকার, শিশু সাহিত্যিক তপংকর চক্রবর্তী, গবেষক হোসনে আরা এবং কথাসাহিত্যিক মিলটন রহমান।

বই-সংলাপ ও রিকশাচিত্র প্রদর্শন
এই মঞ্চে বিকালে দ্রাবিড় সৈকত রচিত ‘বাংলার চিত্রকলা ইতিহাসের বিভ্রান্তি এবং মনন-মনীষায় ইউরোপমুখিনতার মর্মভেদ' এবং 'ফ্রয়েডিয় লিবিডো-তত্ত্ব এবং তান্ত্রিক দেহাত্মবাদ: সমীক্ষণ ও তুলনামূলক বিচার' শীর্ষক দুটি বই নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি নূহ-উল-আলম লেনিন, হাসান হাফিজ, সৌরভ সিকদার, ওবায়েদ আকাশ, মেঘ অদিতি, রুহুল মাহবুব এবং বাবুল আনোয়ার। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী হাসিব বিল্লাহ, মাসুম আজিজুল বাসার, জি এম মোর্শেদ, নাঈমা হোসেন এবং অনন্যা রানী সাহা। এ ছাড়া ছিল মিলন কান্তি দের রচনায় ও নির্দেশনায় 'দেশ অপেরা'র পরিবেশনায় যাত্রাপালা 'বঙ্গমাতা'।

শুক্রবারের কর্মসূচি
বইমেলার ২৩তম দিন শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) মেলা শুরু হবে বেলা ১১টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত চলবে শিশুপ্রহর। সকাল সাড়ে ১০টায় বইমেলার মূল মঞ্চে রয়েছে অমর একুশে উদযাপন উপলক্ষে বাংলা একাডেমি আয়োজিত শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি ও সংগীত প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।

বিকাল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে স্মরণ আখতারুজ্জামান ইলিয়াস শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন মামুন হুসাইন। আলোচনায় অংশ নেবেন ওয়াসি আহমেদ ও জাফর আহমদ রাশেদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক খালিকুজ্জামান ইলিয়াস।