‘আমাদের প্রশাসন ও আমলাতন্ত্র উদাসীন’

‘এই ধরনের মৃত্যু আমাদের দেশে সাংঘাতিক একটা অবস্থা তৈরি করেছে। একটা পোশাক কারখানা ধসে গিয়ে বহু লোক মারা গেছে, অনেক লোকের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। এটা নিয়ে নাটকও করেছি। তবু অগ্নিকাণ্ড বন্ধ হচ্ছে না। প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে, আমাদের প্রশাসন, আমলাতন্ত্র, রাজনৈতিক নেতারা, সরকার, রাষ্ট্র সব উদাসীন। আজ, কাল, পরশু এ নিয়ে আলোচনা হবে, তদন্ত কমিটি হবে, দোষীদের শাস্তির কথা হবে; আবার বড় ঘটনা ঘটলেই মানুষ সব ভুলে যাবে। এই যে ভুলে যাওয়া, এটাই একটা বড় ব্যাপার।’

শুক্রবার (১ মার্চ) শিল্পকলা একাডেমিতে নিজের জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে এসব কথা বলেন নাট্যকার, নির্দেশক ও অভিনেতা মামুনুর রশীদ।

বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) ছিল মামুনুর রশীদের ৭৬ বছর বয়সে ১৯তম জন্মদিন। এ উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমিতে ‘আলোর আলো নাট্যৎসব-২০২৪’-এর দ্বিতীয় দিন শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয় সেমিনার।

অনুষ্ঠানে ‘একজন দায়বদ্ধ সৃজনকর্মীর নাট্যপরিভ্রমণ’ ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন নাট্যকার, নাট্যনির্দেশক, লেখক, সাংবাদিক ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মলয় ভৌমিক।

মামুনুর রশীদ আরও বলেন, রাঢ়াঙ নাটকের প্রেরণা আমি পাই আলফ্রেড সরেনকে মেরে ফেলার ঘটনায়। আলফ্রেড সরেনের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল, তারা সবাই জেল থেকে মুক্তি পেয়ে গেছে। মানুষ ভুলেই গেছে। আলফ্রেড সরেন বেঁচে আছে নাটকে, নাট্যমঞ্চে। যারা তার হত্যাকারী, তারা চেয়ারম্যানও হয়েছে। আজকের ক্ষমতাসীন দল থেকেই নমিনেশন দিয়ে তাকে চেয়ারম্যান করা হলো। তখন এই সরকার ক্ষমতায় ছিল বিচার হলো না। সেই গার্মেন্ট ফ্যাক্টরির মালিক জামিন পেয়ে গেছে। কাজেই আমরা একটা বিচারহীন সমাজে বসবাস করছি।’

‘সংকটের মধ্যে আমাদের সমাজ চলছে’ উল্লেখ করে মামুনুর রশীদ বলেন, পঁচাত্তর-পরবর্তী মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিস্মৃতি, তাহলে কোথায় টিকে আছে মুক্তিযুদ্ধ? টিকে আছে আমাদের শিল্পে, নাটকে, চলচ্চিত্রে এসব জায়গায়। মুক্তিযুদ্ধের অস্তিত্ব কোথায়? কেউ মুক্তিযুদ্ধ ব্যবহার করে, আর কেউ বিরোধিতা করে। এ রকম সংকটের মধ্যে আমাদের সমাজ চলছে।’

অনুষ্ঠান সঞ্চচলানা করেন অধ্যাপক রতন সিদ্দিকী। অনুষ্ঠানে ভারতের নাট্যজন অংশুমান ভৌমিক ও কিশোর সেনগুপ্ত, বাংলাদেশের অনন্ত হীরাসহ দেশি-বিদেশি নাট্যজন, নাট্যকার, নাট্য নির্দেশকরা উপস্থিত ছিলেন।