পুরান ঢাকায় রাসায়নিক গুদামে অভিযান কবে?

বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুর পর তাজা হয়ে ওঠে নিমতলী ও চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিদুর্ঘটনার ১৯৫ জনের প্রাণহানির স্মৃতি। ঘুরে ফিরে আবারও আলোচনায় উঠে আসে পুরান ঢাকার কেমিক্যাল গুদামগুলো। বারবার বলার পরও গোডাউনগুলো স্থানান্তর করা যায়নি জনবহুল এই এলাকা থেকে। গলি ঘুপচিতে আবাসিক ভবনের নিচে এখনও রয়েছে কয়েক হাজার অবৈধ কেমিক্যাল গুদাম। সরকারের পক্ষ থেকে স্থানান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হলেও ১৪ বছরেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। দাহ্য রাসায়নিক পদার্থে ঠাসা গুদামগুলোর ওপর মৃত্যুঝুঁকি নিয়েই বাস করছেন লাখো মানুষ।

বেইলি রোডের ঘটনার পর রাজধানীর বিভিন্ন ভবনে ও রেস্টুরেন্টে অভিযান শুরু করেছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকা, আবাসিক ভবনে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা, ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন না থাকা ও অস্বাস্থ্যকর খাবার বিক্রিসহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা, সিলগালাও করছে তারা। তবে পুরান ঢাকার অবৈধ রাসায়নিক গুদামগুলোকে নিয়ে কোনও পদক্ষেপ নেই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি)। এবিষয়ে কথা বলা হলে সংস্থাটির কর্মকর্তারা সুনির্দিষ্ট কোনও তথ্য দিতে পারেননি।

পুরান ঢাকার বিভিন্ন আবাসিক ভবনে রাসায়নিক গুদামের ওপরেই বসবাস করছেন লাখো মানুষ (ছবি: প্রতিবেদক)

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। পরে সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি।

তবে নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক সংস্থাটির একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি যতটুকু জানি পুরান ঢাকার রাসায়নিক গুদামে কোনও অভিযানের চিন্তা নেই। এগুলো এখন শিল্প মন্ত্রণালয়ে স্থানান্তর করার কথা। তারা এটা করবে, তাদের জিজ্ঞেস করেন।’

এবিষয়ে ডিএসসিসি অঞ্চল-৪ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আতাহার মিয়া বলেন, ‘আমরা অভিযান শুরু করবো। আজ থেকে মাইকিং শুরু করা হয়েছে।’ বিস্তারিত জানতে তিনি প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। তবে প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা কাইজার মোহাম্মদ ফারাবীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি সাড়া দেননি।

দাহ্য পদার্থ থেকে যে কোনও সময় বড় অগ্নিকাণ্ডের শঙ্কা ঘিঞ্জি এলাকাগুলোয় (ছবি: প্রতিবেদক)

২০১০ সালে নিমতলীতে আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয় ১২৪ তাজা প্রাণ, আর ২০১৯ সালে চুড়িহাট্টায় ৭১ জন। এই দুই ঘটনার পরই গোডাউনগুলো স্থানান্তর করার উদ্যোগ নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়। তবে অজানা কারণে এত বছর পার হলেও স্থানান্তরের জন্য স্থায়ী প্রকল্প চালু করা যায়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লালবাগ, চকবাজার, আরমানিটোলা, বাবুবাজার, মিটফোর্ড এলাকায় বসতবাড়িসহ অতিরিক্ত ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে গোডাউন করে রাখা হয় কেমিক্যাল। আর এসব কেমিক্যাল লোড করা হয় রাতে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) এক গবেষণায় বলা হয়েছে, পুরান ঢাকায় আনুমানিক ২৫ হাজার কেমিক্যাল গোডাউন বা কেমিক্যাল পণ্যের গুদাম রয়েছে। এসবের মধ্যে ১৫ হাজারই রয়েছে বাসাবাড়িতে। মাত্র আড়াই হাজার গুদামকে ট্রেড লাইসেন্স দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। বাকি ২২ হাজারের বেশি গুদাম অবৈধ। ক্ষতিকর ও ঝুঁকিপূর্ণ ২০০ ধরনের রাসায়নিকের ব্যবসা চলে সেসব গুদামে।

এসব গোডাউনে রয়েছে গ্লিসারিন, সোডিয়াম অ্যানহাইড্রোজ, সোডিয়াম থায়োসালফেট, হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড, মিথাইল ইথাইল কাইটন, থিনার, আইসোপ্রোপাইল, টলুইনের মতো দাহ্য পদার্থ। ফলে যেকোনও মুহূর্তে ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা।

আরও পড়ুন- 

পুরান ঢাকা এখনও ‘বোমা’র শহর

‘রেস্তোরাঁ পাড়া’র ভবনগুলোতে অগ্নিনিরাপত্তা কেমন

উধাও ‘গ্রিন কোজি কটেজ’-এর স্পেস ওনাররা