ভাটা পড়েনি মিরপুরের রেস্তোরাঁগুলোয়

সম্প্রতি বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে অগ্নিকাণ্ডের পর নড়েচড়ে ওঠে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। রাজধানীর বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় অভিযান চালায় তারা। এ সময় বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে অগ্নিঝুঁকির বিষয়টি উঠে আসে। ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে অনেক রেস্টুরেন্টকে সিলগালাসহ জরিমানা করা হয়েছিল। সাজার ভয়ে অনেক মালিক সংস্কারের কারণ দেখিয়ে রেস্টুরেন্ট বন্ধ রাখেন কয়েক দিন। সচেতন মানুষও অভিজাত এসব রেস্টুরেন্টে এড়িয়ে চলতে শুরু করে।

কিন্তু পবিত্র রমজান মাস শুরু হতেই এসব রেস্তোরাঁ আবার সবর হয়ে উঠেছে। তারা এখন ইফতার বেচাকেনায় ব্যস্ত। পরিস্থিতি দেখলে মনে হয়, কিছুদিন আগের ভয়ডরও তাদের মধ্যে নেই আর। বেচাবিক্রিতে কোনও ধরনের ভাটা পড়েনি বলে জানান মিরপুরের এসব রেস্তোরাঁর মালিকরা।

মূলত রমজান উপলক্ষে ইফতার বিক্রির ধুম লাগে প্রথম দিন থেকেই। হরেক রকম ইফতারের ডালা সাজিয়েছে রেস্টুরেন্টেগুলো।

হরেক রকম ইফতারের ডালা সাজিয়েছে রেস্টুরেন্টেগুলো

সরেজমিনে বুধবার (১৩ মার্চ) মিরপুর ১০, ১১ ও ১২ নম্বরে দেখা যায়, ছোট-বড় রেস্তোরাঁ ও রেস্টুরেন্টের সামনে বাহারি রকমের ইফতার সাজানো রয়েছে। আসরের নামাজের পর থেকে এসব স্থানে ইফতার কিনতে ভিড় করতে শুরু করে মানুষ, চলে ইফতারের আগ পর্যন্ত।

আলুর চপ, পেঁয়াজু, বেগুনির পাশাপাশি কাবাব, চিকেন রোল, সাসলিক, আস্ত মোরগ ভাজা, বিভিন্ন রকমের বিরিয়ানি পাওয়া যাচ্ছে খাবারের দোকানগুলোয়।

এ ছাড়া ইফতারের পরেও রেস্টুরেন্টগুলোর নিয়মিত আয়োজন থাকছে। সেগুলোয়ও বিক্রি হচ্ছে দেদার। তবে রমজানের শুরুর দিকে এই বিক্রি কম বলে জানান রেস্টুরেন্টের মালিকরা।

আলুর চপ, পেঁয়াজু, বেগুনিসহ হরেক পদের ইফতার বিক্রি হচ্ছে

জানতে চাইলে রেস্তোরাঁর কর্মীরা জানান, প্রথম রোজা থেকেই ইফতার বিক্রি ভালো হচ্ছে। তবে সামনের দিনগুলোয় এই বিক্রি আরও বাড়বে।

বর্তমানে রেস্টুরেন্টগুলোয় অভিযানের বিষয়ে কোনও চিন্তা রয়েছে কি না, জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মিরপুর ১২-এর একটি রেস্তোরাঁর ম্যানেজার বলেন, ‘অভিযান এলে সেটা দেখা যাবে। এখন বিক্রির সময়, এখন যদি বন্ধ রাখি, আমার কর্মচারীদের ঈদ আনন্দ বলে কিছু থাকবে না। মালিকেরও তো খরচ আছে। আমারা ব্যবসা করতে চাই, এইটা তো দোষ না? এখন যারা আমাদের কাছে দোকান ভাড়া দেয়, তারা যদি তাদের বিল্ডিংয়ে সব ব্যবস্থা রাখে, আমাদের ওগুলো ব্যবহার করতে তো সমস্যা নেই। কয়েকটা টাকাই নাহয় বেশি খরচ।’

ইফতার বিক্রিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কর্মীরা

তবে অগ্নিঝুঁকির বিষয়ে অনেক রেস্টুরেন্ট ও রেস্তোরাঁর মালিকের অবহেলা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এর আগেও কয়েক জায়গায় কাজ করেছি। এগুলোর বিষয়ে সরকারের লোকজনও এত দিন গুরুত্ব কম দিত, তাই মালিকরাও এসব নিয়ে ভাবতো না। এখন তারা কঠিন হয়েছে, মালিকরাও সতর্ক হয়ে যাবে।’

মিরপুর ১১-তে ইফতার কিনতে আসা ক্রেতা রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘দুর্ঘটনা ঘটেছে, এটা দুঃখজনক। এত দিন প্রত্যেকেরই অবহেলা ছিল। দোকানমালিক বলেন, ভবনমালিক বলেন আর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কথাই বলেন—কেউই দায় এড়াতে পারবে না। এখন সব দায় স্বীকার করে সামনে যেন দুর্ঘটনা না ঘটে, তার ব্যবস্থা করা জরুরি।‘

দোকান বন্ধ করে দেওয়া কোনও সমাধান নয় জানিয়ে এই ক্রেতা বলেন, ‘আমরা কিনি বলেই তো দোকানগুলো চলে। আমাদেরও যেমন খাবার কেনা দরকার, তাদেরও বিক্রি দরকার। সবার কথাই ভাবতে হবে।’

ছবি: প্রতিবেদক