চাঁদরাত পর্যন্ত ডাকাতির পরিকল্পনা, ভাড়া নিয়েছিল হোটেল

রমজান মাস ঘিরে কোথায় কোথায় ডাকাতি করবে, তার একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল একটি ডাকাত দল। এ জন্য রাজধানীর মগবাজারে একটি হোটেলও ভাড়া নিয়েছিল তারা। তাদের পরিকল্পনা ছিল চাঁদরাত পর্যন্ত ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি করবে। এরপর ঈদে বাড়ি ফিরে যাবে।

সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে এই চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। এ সময় ডাকাতির ১২ লাখ টাকা উদ্ধারসহ তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয় পাঁচটি মোবাইল, ডিবির জ্যাকেট, হ্যান্ডকাপ, খেলনা পিস্তল, স্প্রিং স্টিক, ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি মাইক্রোবাস, একটি মোটরসাইকেল ও পুলিশ লেখা নেভি ব্লু ব্যাগ।

গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলো দ্বীন ইসলাম, মো. সবুজ, সিফাত ইসলাম রাজী, মাজারুল ইসলাম, আব্দুস সালাম হাওলাদার।

এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ও গোয়েন্দা প্রধান হারুন অর রশীদ বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে ডাকাতি করার সময় অনেক আসামিকে এর আগে গ্রেফতার করেছি। চলতি মাসেও ডিবি পরিচয়ে একটি কোম্পানির ৭১ লাখ টাকা ডাকাতি করা হয়। ওই ডাকাতির ঘটনায় জড়িত পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করেছি।

তিনি আরও বলেন, শাহাদাত হোসেন নামে একজন রাজধানীর মতিঝিলের একটি প্রতিষ্ঠানের জেনারেল ম্যানেজার। ক্লায়েন্টের ৭১ লাখ টাকা ব্যাংকে জমা দিতে ৬ মার্চ সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে বাসা থেকে বের হন। এরপর সেই টাকা নিয়ে রিকশায় মতিঝিলে ইসলামী ব্যাংকে যাচ্ছিলেন। ফকিরাপুলের ক্যাফে সুগন্ধা হোটেলের সামনে এলে তাকে আটকানো হয়। যারা আটকায়, তাদের শরীরে পরা ছিল ডিবি পুলিশের জ্যাকেট, হাতে ওয়াকিটকি, স্প্রিং লাঠি ও হ্যান্ডকাপ। এ সময় তারা ডিবি পরিচয়ে শাহাদাতকে রিকশা থেকে নামিয়ে একটি সাদা রঙের হাইস গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যায়।

এরপর গাড়িতে বসিয়ে গামছা দিয়ে চোখ-মুখ ও বেল্ট খুলে হাত বেঁধে ফেলে ডাকাত দল। একপর্যায়ে জোর করে কাঁধে থাকা ব্যাগভর্তি ৭১ লাখ টাকা, মোবাইল ও মানিব্যাগ নিয়ে নেয়। এরপর ভুক্তভোগীদের গাড়ির সিটের নিচে শুইয়ে দিয়ে বুকের ওপর পা রাখে ডাকাত দল। চিৎকার করলে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। প্রায় ঘণ্টাখানেক পর গাড়ির গতি কমিয়ে শাহাদাতকে গাড়ি থেকে ফেলে দেয়। ঘটনার দুদিন পর রাজধানীর মতিঝিল থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগী।

ওই মামলা তদন্ত করতে গিয়ে ভুয়া ডিবি পুলিশ পরিচয়ে সংঘবদ্ধ এই ডাকাত দলের সন্ধান পায় ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম। এরপর এদের গ্রেফতার করা হয়।

হারুন বলেন, গ্রেফতার সিফাত ইসলাম রাজী ও মাজারুল ইসলাম ব্যবসায়ীদের অর্থ হস্তান্তরকারী ব্যক্তিদের টার্গেট করতো। এরপর অর্থ উত্তোলনের স্থান, জমা দেওয়ার স্থান পর্যবেক্ষণ করতো। এ দুজন টার্গেট ব্যক্তির তথ্য সংগ্রহ করে দ্বীন ইসলাম ও অন্য আসামিদের সরবরাহ করতো।

মহানগর ডিবিপ্রধান বলেন, নিদিষ্ট তারিখে টার্গেট ব্যক্তির পথে প্রাইভেট কার নিয়ে অবস্থান করতো তারা। ভুক্তভোগী বা টার্গেট ব্যক্তি সেখানে এলে দ্বীন ইসলাম, সবুজ, সিফাত ইসলাম রাজী, মাজারুল ইসলাম, আব্দুস সালাম মিলে গতিরোধ করে ওই ব্যক্তিকে জোর করে গাড়িতে তোলে।পরে গাড়িটি ভুক্তভোগীকে নিয়ে ঢাকা ও আশপাশ এলাকায় ঘোরাঘুরি করে নির্জন স্থানে ফেলে রেখে যায়। এরপর দ্বীন ইসলাম ডাকাতির ৩০ শতাংশ এবং বাকি ২০ শতাংশ টাকা অন্যরা নেয়। আর অজ্ঞাতনামাদের মধ্যে ৫০ শতাংশ ডাকাতির অর্থ ভাগ করে দেওয়া হয়।

শুধু ব্যাংক কেন্দ্রিক টার্গেট করে ডাকাতিই নয়, হানি ট্র্যাপে সিদ্ধহস্ত ছিল এই চক্রটি জানিয়ে হারুন অর রশীদ বলেন, তারা প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী বা ধনাঢ্য ব্যক্তিদের অপহরণ করে সুন্দরী তরুণীদের দিয়ে ছবি বা ভিডিও করে ব্ল্যাকমেলের মাধ্যমে মুক্তিপণ আদায় করতো। কখনও কখনও তারা সিএনজিচালিত অটোচালকদেরও ছাড় দিতো না। ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে ছিনতাই করা সিএনজি ছেড়ে দিতো। কখনও কখনও তারা সোনা ব্যবসায়ীদেরও টার্গেট করে মুক্তিপণ আদায় করতো।

প্রতিষ্ঠানের মালিক বা কোম্পানিতেও ডাকাতদের সোর্স থাকে। আসল ডিবির জ্যাকেটে কিউআর কোড আছে। সেটা দেখলেই সব ক্লিয়ার হয়ে যায় বলে তথ্য দেন তিনি।

পরামর্শ দিয়ে হারুন বলেন, ডিবির কথা বললেই গাড়িতে উঠে যেতে হবে, ব্যাপারটা এমন না। দিনে কেউ ডিবি পুলিশ পরিচয় দিলে চিৎকার দিলেই লোকজন চলে আসে। ডাকাতিটা আর হয় না।