কিসে আত্মহত্যা কমবে?

সমাজে যুগ যুগ ধরে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে এলেও গবেষকরা বলছেন, এখন এর প্রবণতা ও বাস্তবায়ন বেড়েছে। এর প্রধান কারণ হিসেবে তারা বলছেন, মানুষের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা— সেটা পরিবার থেকে, সমাজ থেকে।

সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষ তার প্রয়োজনে সমাজ বদল ঘটিয়ে একক পরিবারে এসেছে। এখন যদি বিচ্ছিন্ন ও একা বোধ করে, তাহলে করণীয় কী, তা নিয়ে যার যার সমাজে পৃথক ও যথাযথ গবেষণা দরকার। তার পরবর্তী স্তরে আত্মহত্যা কিসে কমবে, তার সিদ্ধান্ত ও করণীয়ও বের করা সম্ভব হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর বিশ্বে ৮ লাখ লোক আত্মহত্যা করেন। ২০১৪ সালে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় বলা হয়, বাংলাদেশে গড়ে প্রতিদিন ২৮ জন মানুষ আত্মহত্যা করেন। এর বাইরে ঘুমের ওষুধ সেবন, ছাদ কিংবা উঁচু স্থান থেকে লাফিয়ে পড়া কিংবা রেললাইনে ঝাঁপ দেওয়ার মতো ঘটনাগুলোও বিরল নয়।

বিষণ্নতা নিয়ে ব্যাপক জনসচেতনতা দরকার বলে মনে করেন মানসিক চিকিৎসক আতিকুর রহমান। তিনি বলেন, পরিবার ও সমাজের নানা চাপের মধ্য দিয়ে আমাদের যেতে হয়। ঠিক কোন কারণে ব্যক্তি হতাশা বোধ করছে এবং সেই হতাশা কখন বিষণ্নতার রূপ নিচ্ছে, সেটা ব্যক্তি ও তার আশপাশের মানুষকে বুঝতে হবে। সেই বোঝার কাজটা সহজ করতে পারে সচেতনতা কার্যক্রম। অবশ্যই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে বিষণ্নতা প্রতিরোধ করতে পারলে আত্মহত্যা কমবে।

সমাজে অস্থিরতার প্রভাব ব্যক্তির ওপর পড়ে উল্লেখ করে সমাজবিজ্ঞানী নেহাল করীম বলেন, আমরা নিজেদের প্রয়োজনে একান্নবর্তী পরিবার প্রথা ভেঙে একক পরিবারে নিয়ে এসেছি। এককভাবে দৈনন্দিন জীবন সামলানোর চাপ বেড়েছে। পরিবারের মধ্যে একসঙ্গে কীভাবে বাঁচতে হয়, কোথায় ছাড় দিতে হয়, সেসব ছোট থেকে শিখতে পারছে না সদস্যরা। আবার সমাজ থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারছে না। কিন্তু তার মধ্যে বিচ্ছিন্নতা বোধ কাজ করছে।

তিনি আরও বলেন, যখন সবকিছু নিজের মতো হচ্ছে না, তখন সে হতাশ হচ্ছে; সেটা বিষণ্নতা পর্যায়ে গেলে একা একা সামলে উঠতে পারছে না। এখন যেটা করতে হবে, সমাজ অনুযায়ী সমাধান নিয়ে গবেষণা করতে হবে। আবার অন্য সমাজের সমাধান আমার সমাজে কার্যকর না-ও হতে পারে।

পরিবারের ভূমিকা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ডা. মেখলা সরকার বলেন, আমি প্রথমেই বলবো ছোটবেলা থেকেই মা-বাবার ভূমিকা প্রধান। সারাক্ষণ সন্তান যেভাবে চাইবে, সেভাবে হাজির না করে তাদের নানা সমস্যা ও জটিলতা সামলাতে শেখাতে হবে। অভিভাবক যেভাবে জীবনাচরণ করবেন, যে আদর্শ মেনে চলবেন, সন্তান সেটা ফলো করে।

পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, শিশুকে মিলেমিশে থাকার শিক্ষা দিতে হবে। খারাপ লাগা তৈরি হলে কার সঙ্গে শেয়ার করবে, সেটা দেখিয়ে দিতে হবে। এগুলো তার দক্ষতা। এই দক্ষতায় দক্ষ করে তুললে শিশুর মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়বে। এতে আত্মহত্যার প্রবণতা কমবে।