অবন্তিকার আত্মহত্যা: প্রশাসনকে লালকার্ড দেখালেন শিক্ষার্থীরা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার মৃত্যুর ঘটনার বিচার এবং যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল কার্যকর করার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে লাল কার্ড দেখিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) বেলা ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য চত্বরে ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়’ ব্যানারে আয়োজিত প্রতীকী সমাবেশে লাল কার্ড দেখান শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি। ছবি: নাসিরুল ইসলাম

এ সময় নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী কিশোর সাম্য বলেন, ‘বর্তমান উপাচার্য যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সেটা ঠিক আছে। কিন্তু প্রশাসন প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর যে কাজটি প্রতিনিয়ত করে এসেছে তা হলো গাফিলতি। সে জন্য আমরা প্রশাসনকে লালকার্ড দেখিয়েছি। আমাদের দাবি হচ্ছে, সিন্ডিকেটের প্রভাবমুক্ত একটি কার্যকরী নিপীড়নবিরোধী সেল গঠন করতে হবে। যেখানে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ থাকবে, বাইরের বিশেষজ্ঞদেরও অংশগ্রহণ থাকবে। আগের সব ধরণের নিপীড়নের ঘটনায় দ্রুত সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে সমাধান করতে হবে।’

সমাবেশে ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের শিক্ষার্থী শাহ সাকিব সোবহান বলেন, ‘প্রক্টরিয়াল বডি করোনার সময় কুকুরের জন্য বরাদ্দ দেওয়া টাকা মেরে খেয়েছে। আজ সেই প্রক্টরিয়ার বডি নিপীড়নবিরোধী সেলের নামে ডামি সেল গঠন করে রেখেছে। প্রক্টরিয়াল বডি যখন তখন ক্যাম্পাস থেকে শিক্ষার্থীদের ধরে নিয়ে মুচলেকা সংগ্রহ করতো। এখন থেকে সেই খেলা আর চলবে না। যৌন নিপীড়ন সেলে ছাত্র-শিক্ষকসহ বাহির থেকে ম্যাজিস্ট্রেট এনে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। নিপীড়কবিরোধী সেলের নামে টর্চার সেল যারা তৈরি করে রেখেছে, সেই প্রক্টর অফিসে আমরা সাত দিনের মধ্যে তালা ঝুলিয়ে দেবো।’

প্রশাসনকে লালকার্ড দেখিয়ে অবন্তিকার মৃত্যুর ঘটনার বিচার চিান শিক্ষার্থীরা। ছবি: নাসিরুল ইসলাম

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ইভান তাহসীব বলেন, ‘জগন্নাথে যেকোনও নিপীড়নের বিরুদ্ধে আমরা অবস্থান নেবো। এখানে যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল থাকলেও তার কেনও কার্যক্রম নেই। এটি কার্যকর করতে হবে, এটিকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। সেখানে যুক্ত করতে হবে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি।’

তিনি বলেন, ‘যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। শুধু কিছু প্রতিশ্রুতি দিলে হবে না। যখন একটা ঘটনা সামনে আসছে, তখন তদন্ত কমিটি করে দেওয়া হচ্ছে, ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আমরা এভাবে আর এগোতে চাই না। আমরা আরেকটি অবন্তিকাকে দেখতে চাই না। আরেকটি অংকনকে দেখতে চাই না। যতদিন পর্যন্ত এটার স্থায়ী সমাধান না হচ্ছে তত দিন পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন জারি থাকবে।’

গত ১৫ মার্চ রাত ১০টার দিকে ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে নিজের আত্মহত্যার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকীকে দায়ী করেন অবন্তিকা। ফেসবুকে দেওয়া ওই পোস্টের পর কুমিল্লার বাগিচাগাঁও ফায়ার সার্ভিস পুকুরপাড়ের নিজ ঘরে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় অবন্তিকার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। রাত সোয়া ১০টার দিকে তাকে কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। অবন্তিকা কুমিল্লা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যাপক প্রয়াত জামাল উদ্দিনের মেয়ে।

আরও পড়ুন:

প্রক্টর ও সহপাঠীকে দায়ী করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জবি শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

অবন্তিকার লাশের গাড়ি দেখে জ্ঞান হারালেন মা

জবি শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা: সহকারী প্রক্টরকে অব্যাহতি ও সহপাঠীকে বহিষ্কার

সাত দিনের মধ্যে তদন্ত সম্পন্নের আশ্বাস জবি উপাচার্যের

কমপ্লেইনের রেকর্ড আমাকে দেওয়া হয়নি: জবি উপাচার্য

জানাজার পেছন থেকে ভেসে আসছে কান্নার শব্দ

জবি ছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনায় শিক্ষার্থীদের আলটিমেটাম

‌‘কিছুই রইলো না, স্বামীর পর মেয়েটাও গেলো’

জবি শিক্ষার্থীর ‘আত্মহত্যা’: সহকারী প্রক্টর ও সহপাঠী আটক